ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

​​​​​​​নাগরিক দুর্ভোগ

খানাখন্দ ও যানজটে নাকাল যাত্রী

​​​​​​​ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ২৬ মার্চ ২০২৩

খানাখন্দ ও যানজটে নাকাল যাত্রী

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাবাড়ী মাছবাজার সংলগ্ন সড়কের বেহাল দশা। সড়কে বড় বড় গর্ত থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা

যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের বড় বড় গর্ত খানাখন্দে বেহাল হয়ে পড়েছে। এছাড়া ফ্লাইওভারের নিচের অংশ সৌন্দর্যের জন্য তৈরি করা মিডিয়ানের স্থানে আবর্জনা ফেলে নোংরা করে রাখা হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত কিলোমিটার সড়কে। সড়কটির অর্ধেক দখল করে প্রতিদিন বাজার বসায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। বড় বড় গর্ত, খানা-খন্দে বেহাল সড়ক দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।

ঢাকা-কাঁচপুর আট লেনের মহাসড়কটি রাজধানীর অন্যতম প্রবেশ দ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কটি কার্পেটিং, পিচ, পাথর, সুড়কি উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়ক এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বেহাল সড়কের কারণে এক মিনিটের পথ পার হতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগে বলে গাড়িচালকরা জানান। যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার আড়তের সামনের অংশের। সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে প্রায় সময় পণ্যবাহী ট্রাক, লরি পিকআপ উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানান।

যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজার আড়তের সামনে সুরুজ মিয়া নামের এক ভ্যানচালক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক দিন থেকে সড়কটির খারাপ অবস্থা। ভ্যানে মালামাল নিয়ে যেতে অনেক সমস্যা হয়। গত সপ্তাহ এক ভ্যান উল্টে গিয়েছিল। ফ্লাইওভারের কারণে সড়কটি ঠিক করছে না। যাতে বাস ট্রাক নিচ দিয়ে না গিয়ে সব ফ্লাইওভার ব্যবহার করে। বাস-ট্রাক ফ্লাইওভার ব্যবহার করলেও মরণ আমাদের। ঢাকা শহরে এমন রাস্তা আর কোথাও নেই বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে শনিরআখড়া যাওয়ার পথে কুতুবখালী পর্যন্ত সড়কটিতে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। তাই ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। খানা-খন্দের কারণে প্রায় সময় পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, পিকআপ, ভ্যানগাড়ি মালামালসহ উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে।

মামুন নামের এক পিকআপ চালক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এক মিনিটের রাস্তা পার হতে এক-দেড় ঘণ্টা লাগে। বৃষ্টি হলেই সড়কটিকে মনে হয় নদী। বড় বড় গর্তে পানি-কাদায় একাকার অবস্থা। গর্তে পড়ে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হয় একাধিক গাড়ি। খারাপ সড়কের কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এই সড়কের কারণে প্রতিদিন যাত্রাবাড়ী মোড়ে এক ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় বলে জানান তিনি।

সরকার এত উন্নয়ন করছে কিন্তু এই সড়কের দিকে কোনো নজর নেই, কারণটি রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন আলম নামের কুতুবখালীর এক বাসিন্দা। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ফ্লাইওভার হওয়ার পর থেকে নিচের সড়কগুলোর খারাপ অবস্থা। বছর দুই আগে এই সড়কের পাশের ড্রেন সংস্কার করা হয়েছিল। তখন কোনোমতে সড়ক ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু বছর না যেতেই আবার আগের অবস্থা হয়েছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

সবুজ নামেরঢাকা নগর পরিবহনের এক চালক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত যেতে যে সময় লাগে, এর অর্ধেকের বেশি সময় লাগে যাত্রাবাড়ীর যানজট পার হতে। রাজধানী সুপার মার্কেটের মোড় থেকেই যানজট শুরু হয়। এরপর সায়েদাবাদ, জনপথ মোড়, যাত্রাবাড়ী কুতুবখালী পর্যন্ত এক থেকে দেড় ঘণ্টা যানজটে আটতে থাকতে হয়। যাত্রাবাড়ী-কুতুবখালী রাস্তার কারণে গাড়ির অর্ধেক আয়ু কমে গেছে বলে জানান তিনি।

একই কথা বললেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন বাস, ট্রাক কাভার্ডভ্যান চালকরা। তারা জানান, ঢাকা থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ১৫-১৬ কিলোমিটার হবে। কিন্তু কুতুবখালী পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে খবর হয়ে যায়। বেশিরভাগ গাড়ি ফ্লাইওভার ব্যবহার করে। কিন্তু সড়কের যে অবস্থা, যানবাহন চালানোর মতো অবস্থা নেই। ড্রাইভিং পেশায় আছি বলে বাধ্য হয়ে খানাখন্দের সড়ক দিয়ে, চরম ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালাতে হয়।

বিষয়ে ডিএসসিসির ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এই সড়ক মেরামতের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে ইতোমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুই-এক মাসের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু হবে। তবে সড়কটি অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই ট্রাক চলাচল করে, এটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এছাড়া স্থানীয়দের অসচেতনতার কারণে সড়কের ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সড়কে পানি জমে থাকে। সড়কটি নিয়মিত তদারকি করার পরামর্শ দেন তিনি।

×