ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আতিকউল্লাহ খান মাসুদের আজ মৃত্যুবার্ষিকী

নির্ভীক ও আধুনিক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ

কাওসার রহমান

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ২১ মার্চ ২০২৩; আপডেট: ১০:০২, ২২ মার্চ ২০২৩

নির্ভীক ও আধুনিক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ

মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ

বাংলাদেশের আধুনিক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ বিশিষ্ট শিল্পপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খানের আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালের এই দিনে মাত্র ৭১ বছর বয়সে ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ক্ষণজন্মা এই সাংবাদিক। এদিন ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক এবং গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। 
বাংলাদেশের আধুনিক সাংবাদিকতার জগতে মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ একজন প্রবাদপ্রতিম পুরুষ। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সব সময় নিজেকে এবং সাংবাদিকতাকে নিয়োজিত করে গেছেন। কোনো মতবাদ প্রচার নয়, সাংবাদিকতার একমাত্র ও প্রধান লক্ষ্য যে গণমানুষের জন্য নিয়োজিত থাকা, নীতির প্রশ্নে আপোসহীন এবং ন্যায়ের প্রশ্নে অবিচল থাকা-এই কথাই তিনি তার সারা জীবনের কাজ দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। তাই তো তিনি বাংলাদেশের নির্ভীক সাংবাদিকতার এক পথিকৃৎ। 
দৈনিক জনকণ্ঠ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে অবলম্বন করে জীবনব্যাপী তিনি এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশ যখন তার নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছিল, ঠিক তখনই তার হাত ধরে এদেশের সাংবাদিকতা এক নতুন মোড় নিয়েছে। তিনি সংবাদপত্রকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেশে পুনঃ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। এ জন্য তাঁর প্রয়োজন ছিল গণমানুষের কাছে জনমত তৈরি। আর এই জনমত তৈরির জন্য প্রয়োজন ছিল তাদের কাছে একটি পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া। 
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি এদেশের তৃণমূলের মানুষের কাছে স্বল্প সময়ে পত্রিকা পেঁৗঁছে দেওয়ার দুঃসাহস করেন। এ লক্ষ্যে সংবাদপত্র শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগেও তিনি সফল হন। দেশের পাঁচ বিভাগীয় শহর থেকে দৈনিক জনকণ্ঠ প্রকাশ করে দেশের সংবাদপত্র শিল্পে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসেন। সেই সঙ্গে তার প্রকাশিত পত্রিকায় গণমানুষের কথা তুলে আনেন অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে।

এজন্য বার বার আঘাত এসেছে সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছ থেকে। তাতে তিনি ভীত হননি। সাম্প্রদায়িক শক্তির নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। সেজন্য তিনি এদেশের মানুষের কাছে ‘নির্ভীক সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন। 
মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ শুধু সংবাদপত্র শিল্পেই বিপ্লব ঘটাননি, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছেন। দেশে প্রথম চার রঙের পত্রিকা প্রকাশ করে পাঠকদের নতুনত্বের স্বাদ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এদেশের সংবাদপত্রের প্রচলিত ধারা ভেঙে তিনি এক পত্রিকার মাধ্যমেই পাঠকের সব চাহিদা পূরণের চেষ্টা করেন। এজন্য চালু করেন নানা ধরনের ফিচার পাতা। শিক্ষার্থীদের কোচিং নির্ভরতা কমানো এবং গরিব শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সহায়ক হিসেবে দেশে প্রথম চালু করেন শিক্ষা সাগর পাতা। যা দ্রুত শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে। দৈনিক জনকণ্ঠের দেখাদেখি এখন সব জাতীয় দৈনিকই তাদের পত্রিকায় শিক্ষার পাতা প্রকাশ করছে।

দেশ তখনো ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেনি। ছিল না কোনো ইন্টারনেট ব্যবস্থা। এমনকি কম্পিউটার ব্যবহারও তখন সবেমাত্র শুরু হয়েছে। ওই সময়ে দেশের পাঁচটি স্থান থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে নতুন একটি চাররঙা দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ ছিল দুঃসাহসিক উদ্যোগ। আবার ঝুঁকিও ছিল অনেক। সাহসিকতার সঙ্গে সেই ঝুঁকি গ্রহণ করেছিলেন সংবাদপত্র প্রকাশের অগ্রসেনানী আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। 
১৯৯৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করে তিনি বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে পুরনো গতানুগতিক ধাঁচ উপড়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশের পাঁচটি বৃহত্তর বিভাগীয় শহর থেকে একসঙ্গে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে দেশের সংবাদপত্র শিল্পে নতুন এক মাত্রা যুক্ত করেছিল দৈনিক জনকণ্ঠ। 
মুক্তিযুদ্ধের মূল নীতি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং দেশের তৃণমূল মানুষের কাছে দিনে পত্রিকা দিনেই পৌঁছে দেওয়ার ব্রত নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন দৈনিক জনকণ্ঠ। যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে নব্বইয়ের দশকেও দেশের তৃণমূল পর্যায়ে পত্রিকা পৌঁছাতে দুই থেকে থেকে তিনদিন লেগে যেত। 
আজকের দিনে নতুন পত্রিকা, অনলাইন বা টেলিভিশন চ্যানেলের আত্মপ্রকাশ নিত্য ঘটনা। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে এটা ছিল বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ জয় করেই তিনি পাঠকের হাতে তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নতুন ধারার এক পত্রিকা দৈনিক জনকণ্ঠ। যা সংবাদপত্র শিল্পে ওই সময়ের বিনিয়োগেও নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করে। 
আতিকউল্লাহ খান মাসুদ সব সময় মনে করতেন, সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের কথা বলা, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা, মানুষের সমস্যা, সমাজের অসঙ্গতি অন্যায় অবিচার তুলে ধরা। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আজও জনকণ্ঠ আতিকউল্লাহ খান মাসুদের সেই নীতি অবলম্বন করেই চলেছে। 
প্রথম থেকেই জনকণ্ঠ ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। ছিল বৈচিত্র্যে ঠাসা। তাই প্রথম প্রকাশের দিনেই মানুষের হাতে হাতে উঠে গিয়েছিল দৈনিক জনকণ্ঠ। ঢাকার একটি জাতীয় পত্রিকা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে সকালেই পাঠকের হাতে পৌঁছে যায়। শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা পাঠকের সামনে তুলে ধরে জনকণ্ঠ। ফলে পাঠক তা লুফে নেন। ফলে দ্রুতই দেশের একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় পরিণত হয় দৈনিক জনকণ্ঠ। দ্রুত পাঠকপ্রিয়তার কারণে ১৯৯৪ সালেই দৈনিক জনকণ্ঠ প্রচার সংখ্যায় শীর্ষস্থানে উঠে আসে। এরপর থেকে কেবল নতুন করে দীপ্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে দৈনিক জনকণ্ঠ। 
বার বার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত এসেছে। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আতিকউল্লাহ খান মাসুদ কাণ্ডারির মতো কলমের মাধ্যমে তা রুখে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কখনো কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। বিশেষ করে ২০০১ সালের পর তার সেই বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও দৈনিক জনকণ্ঠের প্রকাশনা বন্ধ করা যায়নি।

বরং জনকণ্ঠ তার নীতি ও আদর্শ নিয়ে সব সময় মাথা উঁচু করেই এগিয়ে গেছে। এটি সম্ভব হয়েছে এই পত্রিকাটির কা-ারি আতিকউল্লাহ খান মাসুদের অসম সাহসিকতার কারণে। সে সময় জামায়াত-বিএনপি সরকারের সঙ্গে আপোস করলে জনকণ্ঠ হয়তো ভাল থাকতে পারত। কিন্তু আতিকউল্লাহ খান মাসুদ কোনো আপোস করেননি। আপোস করেননি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ তার সাংবাদিকরা। ক্ষমতাসীনদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই নির্ভীক সাংবাদিকতার যে উদাহরণ তিনি সৃষ্টি করে গেছেন, তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত। 
তাই তো মৃত্যুর পর এদেশের জাতীয় সংসদ তাকে বিরল সম্মান দিয়েছে। জাতীয় সংসদে তার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। তার শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে চরম নির্যাতনের শিকার হয়েও দৈনিক জনকণ্ঠ এবং এর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ কখনো নীতির প্রশ্নে আপোস করেননি, বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গেছেন।’ 
আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ছিলেন উদার মানসিকতার ধারক। একজন মালিক সম্পাদক হয়েও তার কোনো উচ্চাভিলাষ ছিল না, ছিল না ব্যক্তিগত কোনো লোভ। এ কারণেই সৎ ও নির্মোহ অবস্থান থেকে সত্য কথা বলার সাহস দেখাতে পেরেছেন। জেল-জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন এবং সরকারের অসহযোগিতাকে মোকাবিলা করে, নীতির প্রশ্নে অবিচল থেকে তিনি মানুষের কথা বলে গেছেন তার সংবাদপত্রে।
আজকের সাংবাদিকতায় বাণিজ্য ও মুনাফা প্রধান লক্ষ্য, কিন্তু সে মোহ তাকে কখনো আকর্ষণ করেনি। বরং সাংবাদিকতার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন এবং জনমানুষের জন্য লড়াই ছিল তার মুখ্য উদ্দেশ্য। তিনি শুধু একজন সংবাদপত্রের মালিকই ছিলেন না, ছিলেন জনজীবন ভিত্তিক সাংবাদিকতারও পথিকৃৎ।
দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা প্রবাদপ্রতিম এই ব্যক্তিত্ব দেশের সাংবাদিকতাকে আমূল বদলে দিয়েছেন। মানুষের প্রত্যাশা, বেদনাকে জোরালোভাবে তুলে ধরার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তার। শুধু সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক হিসেবেই নন, মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার সংস্পর্শে যিনি একবার এসেছেন, তিনি তার সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। তেমনি তার সহানুভূতিশীল হৃদয় ও মানুষের প্রতি মমতাবোধ আজো মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। 
তাই তো কবিগুরুর ভাষায় বলতে হয়, ‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান...’। কবিগুরুর কবিতার এই পংক্তিমালা শতভাগ সত্য বলেই প্রমাণ করে গেছেন আধুনিক সংবাদপত্রের জনক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। 
আতিকউল্লাহ খান মাসুদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ॥ মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ১৯৫১ সালের ২৯ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মেদিনীমণ্ডল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অত্যন্ত সাহসী জনাব মাসুদ যুব বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ২ নং সেক্টরের অধীনস্থ মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানা কমান্ডার হিসেবে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেন এবং অনেক বড় বড় অপারেশনে অংশ নেন।

বিশিষ্ট এই মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে ১৯৭২ সালে সফলভাবে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে কর্মজীবন শুরু করেন। তৎকালীন সফল তরুণ শিল্পপতিদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তিনি বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। 
১৯৭৮ সালে তিনি সাফল্যের সঙ্গে জাপানের কারিগরি সহযোগিতায় গ্লোব ইনসেক্টিসাইডস লিমিটেড নামে দেশের প্রথম মশার কয়েল প্রস্তুতকারী শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ধোঁয়াবিহীন মশা নিবারক গ্লোব ম্যাট ও তেলাপোকা ধ্বংসকারক গ্লোব অ্যারোসল এই দুটি পণ্য উক্ত কারখানায় উৎপাদন শুরু করা হয়। ১৯৯০ সালে গণচীনের কারিগরি সহযোগিতায় গ্লোব মেটাল কমপ্লেক্স লিমিটেড নামে আরও একটি ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন। 
১৯৯৩ সালে একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সফল শিল্পপতি হিসেবে তার জীবনের সবচেয়ে সফল সংযোজন দেশের অন্যতম এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ প্রকাশ করেন। ১৯৯৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক হিসেবে তিনি এই জাতীয় দৈনিকটি সর্বপ্রথম অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে দেশের পাঁচটি স্থান থেকে একই সঙ্গে প্রকাশ করে দেশের সংবাদপত্র শিল্পে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। 
তার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতায় খুব দ্রুতই জনকণ্ঠ দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনায় পরিণত হয়। প্রকাশের তিন বছরের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে সর্বজনস্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য পত্রিকা হিসেবে দেশের শীর্ষস্থান দখল করতে সক্ষম হয়। পত্রিকাটি প্রকাশ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ এবং প্রচার করে আসছে। 
জনাব মাসুদ ১৯৯৭ সালে ডেইরি ও কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য গ্লোব খামার প্রকল্প নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ১৯৯৮ সালে দেশের গৃহায়ন সমস্যা বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত নাগরিকদের জন্য গৃহায়ন সমস্যা সমাধানকল্পে গ্লোব কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে আরও একটি গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। 
২০০০ সালে তার উপরোক্ত সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সমন্বয়কারী হিসেবে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবার লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি নিজস্ব সাংগঠনিক মেধা ও প্রশাসনিক দক্ষতার গুণে প্রতি বছর দেশের কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে দেশে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং দেশে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে অদ্যাবধি কয়েক হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। 
জন্মলগ্ন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সপক্ষে এবং নীতির প্রশ্নে আপোসহীন দৈনিক জনকণ্ঠ যে সাহসী ভূমিকা এ যাবৎ পালন করে আসছে তা সহ্য করতে না পেরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী সেই চক্র ওয়ান ইলেভেনের শুরুতেই অর্থাৎ ২০০৭ সালের ৭ মার্চ মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে জনকণ্ঠ ভবন থেকে রাতে গ্রেপ্তার করে ৪২টি মিথ্যা মামলা  দিয়ে ৪৫ কোটি টাকা জরিমানা এবং ৪৮ বছর কারাদ- প্রদান করে দীর্ঘ ২২ মাস ১২ দিন কারান্তরী রাখে। গণতন্ত্র ফিরে এলে ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। 
জনাব মাসুদ অর্থনৈতিক কর্মকা-ের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। ১৯৮৪-৮৬ সালে তিনি ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সহ-সভাপতি ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৫-৮৬ সালে গরিব ও অনাথ শিশুদের বিনা খরচে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত তিনি বিক্রমপুরের লৌহজং মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন।

×