ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রয় কমিটির বৈঠকে অনুমোদন

রমজানের আগে ফের সয়াবিন তেল ও ডাল কেনা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

রমজানের আগে ফের সয়াবিন তেল ও ডাল কেনা হচ্ছে

আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে টিসিবির মজুত বাড়াতে ফের ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল

আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে টিসিবির মজুত বাড়াতে ফের ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ও ৮ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে সয়াবিন তেল কিনতে প্রায় ১৯৫ কোটি টাকা এবং মসুর ডাল কিনতে ৭৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে সরকারের। রমজান মাসে সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বিক্রি সক্ষমতা বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন ও মসুর ডাল কিনেছে সংস্থাটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডপ্রাপ্তদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক থাকবে। ভোগ্যপণ্যের কোন সংকট হবে না। তবে বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ডলারের চাপ কমাতে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত বা সীমিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে আবার ফল আমদানি চালু করবে সরকার। তিনি বলেন, রমজানে দেশী ফল থাকবে বাজারে। ওই সময় দেশী ফল বেশি খাওয়া এবং কেনাকাটা হলে উৎপাদনকারী কৃষকরা ভালো দাম পাবেন।
বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব কথা বলেন। এর আগে ১৫ ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৮৯ কোটি ৩৮ লাখ ৮১ হাজার ১৬৩ টাকা। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল ক্রয়ে দুটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে সেটি অনুমোদন পায়।

এতে সয়াবিন তেল কিনতে ১৯৪ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং মসুর ডাল কিনতে ৭৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে। তিনি বলেন, প্রতি লিটার তেলের ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭৬ টাকা ৮৮ পয়সা। আগে প্রতি লিটার ১৭৭ টাকা দরে কেনা হয়েছিল। এতে করে এবার সরকারের কিছু টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের কাছ থেকে এ তেল কেনা হবে। অন্যদিকে প্রতিকেজি ডাল কিনতে লাগবে ৯১ টাকা ৬০ পয়সা। তুরস্কের আরবিল বাকলিয়াত হুবুবাত সান্তিক থেকে এ ডাল কেনা হবে। এ কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট বিআইএনকিউ বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব।
এদিকে, ডলার সংকট কমলে আবারো ফল আমদানিতে এলসি (ঋণপত্র) খোলার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। রমজানে ফল আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে, এলসি খোলা যাচ্ছে না, ফলের দাম দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে অথচ রোজায় ফলের চাহিদা থাকে ব্যাপক- এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ফল- তো আমাদের দেশে প্রচুর হচ্ছে। এখন আমাদের দেখতে হচ্ছে যাতে বৈদেশিক মুদ্রায় অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।

এছাড়া দেশে যে ফল উৎপাদন হচ্ছে, সেটিরও একটি মূল্য পাওয়া দরকার। সেজন্য এলসি সীমিত করা হয়েছে। সময় ভালো হলে আবার এলসি খুলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এখন দরকার ডলার সেভ (সংরক্ষণ) করা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে যেটা অপরিহার্য, সেটিতেই বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া টিসিবির জন্য ১ কোটি ১০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল ও ৮ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান টিপু মুনশি। আগামী মার্চের শেষ সপ্তাহেই এবারের রোজার মাস শুরু হবে।

রোজায় মাছ-মাংস, তেল-চিনির পাশাপাশি ফলমূলের চাহিদাও বেড়ে যায়। তবে এই মুহূর্তে আমদানি নিয়ন্ত্রিত থাকার কারণে ফল আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা বেশকিছু দিন যাবত অভিযোগ করে আসছেন। তাদের ভাষ্য, ফল আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলা যাচ্ছে না, তাতে বিদেশী ফলের দাম দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে রিজার্ভের ওপর থেকে চাপ কমাতে গতবছর ২৩ মে ফুল, ফল, প্রসাধনী ও আসবাব পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনিবআর)। আপেল, আঙ্গুর, লেবুজাতীয় ফল, কলা, ডুমুর, আনারস, পেয়ারা, আম, অ্যাভোকাডো, তরমুজ, নানা জাতের বাদাম আমদানিতেও ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। 
পনেরোটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন ॥ প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। চাল ও মসুর ডাল কেনার পাশাপাশি বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন শীর্ষক প্রকল্পের অপারেশন সাপোর্ট-এর মেয়াদ বৃদ্ধির ২য় ভ্যারিয়েশন প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৮৮ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭৪ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জার্মানির ভেরিডস জিএমবিএইচ। এছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসা, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

×