ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাকি ছয় কিস্তি যথাসময়ে পাওয়ার আশা

আইএমএফের সব শর্ত পূরণ করা হবে ধাপে ধাপে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:২৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আইএমএফের সব শর্ত পূরণ করা হবে ধাপে ধাপে

.

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়ার পর এবার পরবর্তী ছয়টি কিস্তি পাওয়ার ব্যাপারে শর্ত পরিপালনে সতর্ক অবস্থানে বাংলাদেশ। আগামী তিন বছরের মধ্যে আইএমএফের দেওয়া সকল শর্ত ধাপে ধাপে পূরণ করা হবে। এ লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে সরকার। ইতোমধ্যে ভর্তুকি ব্যয় কমাতে বেশকিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় খুশি আইএমএফ। এ কারণে নির্বাহী পর্ষদের সভায় অনুমোদনের তিনদিনের মধ্যে দ্রুত অর্থছাড় করেছে আইএমএফ।

এর আগে কোন দেশকে এত দ্রুত অর্থছাড় করেনি সংস্থাটি। প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ঋণ পাওয়া গেলেও পরবর্তী প্রতিটি কিস্তিতে বাংলাদেশ পাবে ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার করে। এভাবে ২০২৬ সালের মধ্যে আইএমএফ ঋণের পুরো অর্থ ৪৭০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। আইএমএফের শর্ত পরিপালনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে অর্থ বিভাগ। এ কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর ও বিভাগগুলোকে এ ব্যাপারে দ্রুত চিঠি দিয়ে অবহিত করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।  
জানা গেছে, ঋণের পুরো অর্থ সঠিক সময়ে পেতে সংস্থাটির দেয়া সকল শর্ত পূরণ করতে সক্ষম বাংলাদেশ।  ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ও আইএমএফের মধ্যে এই ঋণ বিষয়ে হওয়া সমঝোতা স্মারকের সব নথি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সেখানেই ঋণের সব শর্ত তুলে ধরা হয়েছে। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে আগামী জুলাই মাসের আগে সরকারকে বেশ কিছু সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে। রাজস্ব সংগ্রহ, সরকারের ব্যয়, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, মুদ্রানীতি, বিনিময় হার ও আর্থিক খাতের নীতিতে এ বছরই ব্যাপক সংস্কার করতে হবে সরকারকে। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আগেই রাজস্ব ও ব্যাংক খাতে বেশ কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। আর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিতে হবে আরও কিছু সংস্কার উদ্যোগ। বিশেষ করে ঋণ খেলাপি কমিয়ে আনা এবং ব্যাংক সুদের হারের বিষয়ে বেশকিছু শর্ত পালন করতে হবে।  
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি সচিবালয়ে জানান, ঋণ প্রদানে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে সেগুলো আমাদের প্রয়োজনেই আমরা করব। বরং তাদের পক্ষ থেকে শর্ত হিসেবে দেওয়ায় সরকারের পক্ষে  সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ঋণ নেওয়া হয়েছে এদেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে। আর যেসব শর্তপরিপালন করা হবে তাও দেশের মানুষের কল্যাণে হবে। তাই এসব শর্ত নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। সংস্থাটি থেকে পরবর্তী ছয়টি কিস্তিও বাংলাদেশ যথাসময়ে পাবে বলে আশা করছি। এদিকে, সংস্কার কাজের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর উদ্যোগ। আগামী জুনের মধ্যে কর জিডিপি অনুপাত সরকারকে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে বা বাড়ানোর উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে, যা আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস ও ভ্যাট উইংয়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন করতে হবে।
এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণ নেওয়া কমানোরও শর্ত রয়েছে আইএমএফের। আইএমএফ বলেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া ঋণ কমিয়ে চার ভাগের এক ভাগে নিয়ে আসতে হবে। চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম নির্ধারণে সময় নির্দিষ্ট পদ্ধতি চালু করতে হবে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুদহারের করিডর পদ্ধতিতে যেতে হবে। একইভাবে জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে রিজার্ভের হিসাব শুরু করতে হবে। একই সময়ের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার করতে হবে বাজারভিত্তিক। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব প্রকাশ করতে হবে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে ঝুঁকিভিত্তিক সুপারভিশনে  যেতে বলেছে আইএমএফ। একই সঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া জুনের মধ্যে ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের বোর্ড বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। আইএমএফ সাধারণত কোনো দেশকে ঋণ দিলে বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে সম্মত হয়েই দেয় এবং সাধারণত দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে সেই সংস্কার কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশকে দেওয়া সংস্কার কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে।

 

×