ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে সংশয়ে ক্রেতারা

রোজায় ভোগ্যপণ্যের সংকট হবে না ॥ দাবি ব্যবসায়ীদের

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ০০:০৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

রোজায় ভোগ্যপণ্যের সংকট হবে না ॥ দাবি ব্যবসায়ীদের

.

রোজায় ভোগ্যপণ্যের সংকট হবে না, বলছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ভোক্তা সাধারণের মধ্যে। দাম দশ টাকা বেড়ে দুই টাকা কমলে বলা হয় মূল্য হ্রাস। এটাই কি বাজারে স্থিতিশীল অবস্থা? এমন প্রশ্ন ক্রেতাদের মধ্যে।
রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার প্রতিবছরই থাকে আলোচনায়। এমন কিছু পণ্য রয়েছে, যার চাহিদা রোজাতেই বেশি থাকে। ফলে কয়েকমাস আগে থেকে শুরু হয় আমদানি, মজুত ও প্রস্তুতি। তবে এবার বৈশি^ক সংকটের কারণে আগেভাগে এলসি খোলা কঠিন হয়ে পড়েছিল। যা আমদানি হয়েছে সেগুলোও খালাসে বিলম্ব ঘটছে। তবে সুখবর  হলো, ডলার সংকট কাটতে শুরু করেছে, যার প্রভাব পড়বে শীঘ্রই। মূল্য না কমলেও আর বাড়বে না, এটিও একপ্রকার স্বস্তি।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মূল্য যা বাড়ার তা এরইমধ্যে বেড়ে গিয়েছে। চিনির বাজারে তেজীভাব। কারণ, ডলারে মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় জাহাজ থেকে সময়মতো খালাস নেওয়া যায়নি আমদানির চিনি। ভোজ্যতেলের বাজার আগে থেকেই বাড়তি। মাঝেমধ্যে একটু কমলেও তা আর পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবার পরিস্থিতি নেই। আমদানিকারকরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য গ্রহণ করতে না পারায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে, যা চাপছে পণ্যমূল্যের ওপর।
নতুন বছরের শুরু থেকেই আলোচনায় চিনি। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে চিনির দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলারে মূল্য পরিশোধে ব্যর্থতায় পণ্য খালাস নিতে না পারাসহ নানা সংকট চিনির বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করেছে। অপরদিকে, বিশ^বাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম কমলেও সে সুযোগ গ্রহণ করা যায়নি ডলারের বাড়তি মূল্যের কারণে। চট্টগ্রাম বন্দরে ভোগ্যপণ্য নিয়ে ভাসমান থেকেছে অন্তত অর্ধডজন জাহাজ, যার কোনোটিতে চিনি, কোনোটিতে ভোজ্যতেল। নির্দিষ্ট সময়ের পরে প্রতিটি জাহাজকে প্রতিদিন গুনতে হয় আকারভেদে ২০ থেকে ৫০ হাজার ডলার জরিমানা। বাড়তি এই অর্থ শেষ পর্যন্ত চাপে ভোক্তাদের ঘাড়েই।   
মেঘনা গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, ডলারে মূল্য পরিশোধের বিষয়টির সুরাহা হওয়ায় ব্রাজিল থেকে আমদানি করা তাদের সাড়ে ৬০ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনির পুরোটাই খালাস করা হয়েছে। এমভি কমন এটলাস নামের জাহাজে এ চিনিগুলো ভাসমান অবস্থায় ছিল। খালাস নেওয়ার পর এগুলো কারখানায় চলে গেছে। পরিশোধন শেষে বাজারে আসবে। তিনি জানান, চিনি আমদানি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। আরও চিনি আসবে।
চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে এখনো ভাসমান রয়েছে আরও কয়েকটি জাহাজ। এরমধ্যে এমভি ট্রঅং মিন প্রসপারিটি নামের একটি জাহাজে রয়েছে ৫৫ হাজার টন চিনি। জাহাজটি এসেছিল ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর। কিন্তু এতদিনেও পুরোপুরি খালাস শেষ করা যায়নি ডলারের মূল্য পরিশোধ করতে না পারায়। এস আলম গ্রুপের আরেকটি জাহাজ পণ্য নিয়ে অপেক্ষায় প্রায় একমাস ধরে। এমভি একলিস নামের এ জাহাজটিও চিনিবোঝাই। আমদানির চিনি বন্দরে এসে পৌঁছেছে এ খবরে যেমন বাজারে প্রভাব পড়ে, তেমনিভাবে খালাসে বিলম্বের খবরটিও বাজারকে অস্থিতিশীল করে। কারণ, বড় ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এর সুযোগ নিয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ৪৫০ থেকে ৪৫২ ডলারের মধ্যে। এরসঙ্গে যোগ হয় জাহাজ ভাড়া এবং শুল্ক। রোজাকে সামনে রেখে প্রতিবারই আমদানি বেড়ে থাকে। এবারও বাড়ার প্রবণতা ছিল। কিন্তু নানা সংকটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে চিনির মূল্য বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিমাসেই চিনির দাম বেড়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ সাধারণত খোলা চিনিই কিনে থাকেন। প্রতিকেজি খোলা চিনির মূল্য ছিল সেপ্টেম্বরে ৮৪ টাকা, অক্টোবরে ৯০ টাকা ও নভেম্বরে ১০২ টাকা। সর্বশেষ নতুন বছরের শুরুতেই চিনির কেজি প্যাকেটজাত ১১২ টাকা এবং খোলা ১০৭ টাকায় নির্ধারিত হয়। চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন এ মূল্য ঘোষণা করে।
খুচরা ব্যবসায়ী দিদারুল আলম জনকণ্ঠকে জানান, সর্বশেষ ঘোষিত চিনির রেট সম্পর্কে তারা পুরোপুরি অবগত নন। তবে শুক্রবার তিনি প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি করেছেন ১১৫ টাকায়। অথচ, দুদিন আগেও ১০৬ থেকে ১০৮ টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। তিনি বলেন, তারা একসঙ্গে খুব বেশি চিনি কেনেন না। কেনা মূল্যের চেয়ে কয়েক টাকা বেশিদামে বিক্রি করে থাকেন। রোজায় দাম কেমন হতে পারে তা নির্ভর করছে কত দামে কেনা যাচ্ছে তার ওপর।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জানান, বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। রোজাকে সামনে রেখে সকল ধরনের পণ্যের সরবরাহ রয়েছে। তবে এখনো বেচাকেনা জমে ওঠেনি। কারণ খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা রোজার ঠিক আগেই দোকানে মালামাল ওঠাবেন। পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও মূল্য ঠিক থাকবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাজার স্থিতিশীল থাকার কথা। কেননা, ডলার সংকট কাটতে শুরু করেছে বলে বিভিন্ন রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বাড়লে বেশি দামে কিনতে হয়। এরসঙ্গে কোনো কারণে যেন বাড়তি ব্যয় না চাপে সে দিকটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমদানি-রপ্তানি ও বাজারকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিলে বড় ধরনের তারতম্য হওয়ার সুযোগ থাকে না।

 

 

 

×