ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ ॥ ফখরুল

মানহীন ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক বাতিল দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মানহীন ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক বাতিল দাবি বিএনপির

মানহীন ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক বাতিল দাবি

আন্দোলন নস্যাৎ করতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এর আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দলের পক্ষ থেকে সরকার প্রণীত মানহীন ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক বাতিলের দাবি জানানো হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক বাতিলের দাবিতে দেশের শিক্ষক সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান। 
 যৌথসভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা যখনই কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি তখন একই সময়ে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। আর তারা বিএনপিকে উদ্দেশ করে যে ভাষা ব্যবহার করছে সেটা সন্ত্রাস করছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আন্দোলন দমন করার জন্য ব্যবহার করতে চায়। এর প্রতিবাদে পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুসারে ৪ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ করবে বিএনপি। আর এ জন্যই যৌথসভা করা হয়। 
২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে ফখরুল চিঠি দিয়েছিলেন বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের মন্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরাতো বহু  লোককে চিঠি দিয়েছি, বহু দেশকে চিঠি দিয়েছি। জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই দিয়েছি। এটা তো আমরা অস্বীকার করিনি। দেশের চলমান যে শাসন ব্যবস্থা, আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে দুর্নীতি-লুটপাট করছে। তারা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গুম করছে, খুন করছে, প্রতিমুহূর্তে মানবাধিকার লংঘন করছে, এগুলো আমরা সারা পৃথিবীকে জানিয়েছি।
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা গণতন্ত্রের কাঠামো ধ্বংস করে দিয়ে সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে। তারা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। বুধবার তারা ৬টি আসনে তথাকথিত উপনির্বাচন করল। এ নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার তাদের হিসাব অনুযায়ী ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। আমাদের হিসাব মতে এটা ৫ শতাংশের বেশি নয়।

যৌথ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেডএম এ জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, দলের নেতা মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক প্রমুখ। 
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপি আয়োজিত ‘অপরিণামদর্শী কারিকুলাম ও মানহীন পাঠ্যপুস্তক :  দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসের নীলনক্সা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি ও ভুল তথ্য সংযোজন করেছে। তাই এর বিরুদ্ধে এখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, উঠে দাঁড়াতে হবে। নিজেরা না দাঁড়ালে বাইরে  থেকে এসে স্যাংশনস দিয়ে কেউ আমাদের উদ্ধার করবে না। 
ফখরুল বলেন, এ সরকার নতজানু ও ব্যর্থ সরকার। তারা পাঠ্যপুস্তকে ভুল তথ্য দিয়ে আমাদের ূেশকড়ে টান দিয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ব্যর্থ করতে শিক্ষাব্যবস্থায় হাত দিয়েছে। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ করছে না। আমাদের তো আলাদা সংস্কতি, ঐতিহ্য এবং পরিচয় আছে। সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে ভয়  কেন? 
ফখরুল বলেন, দেশের শিশুদের ভ্রান্ত ধারণা ও ইতিহাস শিক্ষা দিচ্ছে সরকার। এভাবে আমাদের পরিচয় ভুলিয়ে দিতে চায়। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সবাইকে জেগে উঠতে হবে। এটা জাতির অস্তিত্বের লড়াই। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের ইতিহাস পাল্টে দিতে চায়। যার প্রমাণ এই পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস বিকৃতি ও ভুল তথ্য সংযোজন। প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো শিক্ষার মূল। এখানে ভুল তথ্য পরিবেশন করলে শিক্ষার্থীরা সারাজীবন ভুলের মধ্যেই থাকবে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত এখনো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বারবার পরীক্ষা ও শিক্ষানীতি হচ্ছে। এখনো  সেটা চলছে।
ফখরুল বলেন, দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে কোনটাই হবে না। সেই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করাই হচ্ছে আমাদের প্রধান কাজ। তাই সবাই আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করি। ইতিমধ্যে মানুষ বেরিয়ে এসেছে। আপনারাও বেরিয়ে আসুন। আমার বিশ্বাস, ১৯৭১ সালে আমরা যেভাবে সবাই একজোট হয়ে স্বাধিকারের জন্যে, অস্তিত্বের জন্য, বেঁচে থাকার অধিকারের জন্যে লড়াই করে সফল হয়েছিলাম আমরা আবার লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেন সফল হতে পারি এই প্রত্যাশা করছি। 
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি নেতা ও বিশ্বদ্যিালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। সংগঠনের মহাসচিব মোর্শেদ হাসান খান ও বিএনপি নেতা হেলেন  জেরিন খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম ও শাহ শামীম আহমেদ।

তারা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ের অসংখ্য ভুল এবং অসত্য তথ্য তুলে ধরেন। এই মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ‘পেশাজীবী পরিষদের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম, অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, আব্দুল করিম, লুৎফর রহমান, গোলাম হাফিজ কেনেডি,  মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।

×