ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুল্ক ছাড় সুবিধা আরও তিন মাস বাড়ল ॥ এলসি খোলা সহজ করার দাবি

বেসরকারি খাতে চাল আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

বেসরকারি খাতে চাল আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ

খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় করতে চাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধার মেয়াদ আর তিন মাস বাড়ানো হয়েছে

খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় করতে চাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধার মেয়াদ আর তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। নতুন বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সেদ্ধ চাল ও আতপ চালে আমদানি শুল্ক অব্যাহতি এবং পাঁচ শতাংশ হারে রেগুলেটরি ডিউটির সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা। চলতি মাসের ৩১ ডিসেম্বর এ সুবিধা শেষ হওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যা সরকারি গেজেট হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।

এতে বলা হয়, ছাড়ের আওতায় চাল আমদানি করতে হলে প্রত্যেক চালানের জন্য অবশ্যই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে। সরকারি এই উদ্যোগের ফলে বেসরকারি খাতে চাল আমদানি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এ দিকে, বৈশ্বিক সংকটের কারণে সারাবিশ্বে খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে দেশের প্রধান খাদ্যশস্য চাল আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু বেসরকারি খাতে সেইভাবে আমদানি বাড়েনি।

এতে আমন ধান ওঠার এই সময়েও দেশে চালের দাম বেড়ে চলছে। সরকার চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ১৫ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত  দেশে এসেছে মাত্র তিন লাখ ৫৩ হাজার টন চাল। বেসরকারিভাবে চাল আমদানির গতি অনেকটাই মন্থর। এ কারণে বাজারে কমছে না চালের দাম। বাজারে সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল প্রতি কেজি চাল ৭০-৭৮, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৬০-৬৫ এবং মোটা চাল ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।

চালের আমদানি বাড়াতে এবার শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়ানো হলো। এ ছাড়া চাল আমদানির জন্য নতুন উৎসের খোঁজ চলছে। এরই মধ্যে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড ঘুরে এসেছেন খাদ্যমন্ত্রী ও সচিব। সরকারি মজুতে চালের যে অবস্থা, তা সন্তোষজনক বলা হচ্ছে। তবে বেসরকারিখাত নিয়ে কিছুটা চিন্তিত সরকার।
গত রবিবার পর্যন্ত সরকারি গুদামে মজুত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ১৬ লাখ ১২ হাজার ৪৯৬ টন। এর মধ্যে গম আছে ৩ লাখ ৭ হাজার ৯৪ টন। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত বোরো মৌসুমে ভালো ফলন হয়েছে। আমনেও বাম্পার ধান ঘরে উঠবে। তবে বাজারে চালের দাম প্রত্যাশিত সীমায় না থাকায় সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়ছেই। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা মনে করছেন, সঙ্কটের সময় বিদেশ থেকে তাৎক্ষণিক চাল পাওয়া কঠিন হবে।

এই বাস্তবতা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি দেশীয় বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তা চলছে। শিগগিরই এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করার পরিকল্পনা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি চাল আমদানির নতুন দেশ নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার।
চলতি বছরের জুনের শেষ দিকে প্রথম দফায় চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের মধ্যে আমদানির আগ্রহ না থাকায় সরকার শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে চাল আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর এবং ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কমুক্ত সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি এ মুহূর্তের জন্য ভালো খবর হলেও বেশি প্রয়োজন ঋণপত্র (এলসি) খোলা সুবিধা সবার আগে নিশ্চিত করা।  ডলার সঙ্কটসহ নানা ইস্যুতে ব্যাংকগুলো এখনো এলসি নিতে তেমন আগ্রহ দেখায় না। এ অবস্থায় খাদ্যপণ্য বিশেষ করে চাল আমদানিতে এলসি খোলা আরও সহজ করতে হবে।
জানা গেছে, সরকারিভাবে ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানি হচ্ছে। এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি চাল চলে এসেছে। এ পয়ন্ত দেশে এসেছে ২ লাখ ৬৯ হাজার টন চাল। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারিভাবে আমদানির প্রক্রিয়া স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। বাকি চালও পাইপলাইনে আছে।
এছাড়া চাল আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখন বড় নজর থাইল্যান্ডের দিকে। তবে এর আগে থাইল্যান্ড থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে চাল কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাংলাদেশ সেই চাল কেনেনি। এবার ভিয়েতনামের মাধ্যমে থাইল্যান্ড থেকে দুই লাখ টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে। চাল আমদানির নতুন উৎস খোঁজার বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, এবারের সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন। এখনই চাল কিনতে হবে বা কী পরিমাণ কিনব- এমন কোনো উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না। আমরা দেশগুলো সফর করে বুঝতে চেয়েছি, আমাদের বিশেষ প্রয়োজনের সময় তারা চাল দিতে পারবে কিনা, দিলে সেটার প্রক্রিয়া কী হবে। তিনি বলেন, সফরের বিষয়গুলো নিয়ে আমরা নিজেরা বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব। এই অর্থবছরে ভারত থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম চলছে।

×