ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়ের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:৩১, ১ ডিসেম্বর ২০২২

বিজয়ের মাস

বিজয়ের মাস

‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত /ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/ নতুন নিশান উড়িয়ে/ দামামা বাজিয়ে দিগি¦দিক/ এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।’ বছর ঘুরে আবার এসেছে বাঙালির অহংকার বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি তার আত্মপরিচয়, স্বাধীনতা ও স্বাধীন পতাকা পেয়েছিল যে মাসে, তার নাম ডিসেম্বর। বাঙালির কাক্সিক্ষত মুক্তি সংগ্রামে বিজয় অর্জনের মাস ডিসেম্বর।

এবারের বিজয়ের মাস বিশেষ তাৎপর্য বয়ে এনেছে পুরো জাতির জীবনে। আর এক বছর পরই জাতীয় নির্বাচন। একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা আবার মাথা তুলে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। তাই সব অশুভ অপশক্তিকে পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই গোটা জাতি মাসব্যাপী পালন করবে বিজয়ের মাসের নানা কর্মসূচি। বিজয়ের মাস এই ডিসেম্বরে বাঙালি জাতি নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত হবে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে নতুন করে শপথ নেবে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের এ বিজয় শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এর পেছনে রয়েছে লাখ লাখ মানুষের রক্ত ও মহান আত্মত্যাগ। তবে এবার এক ভিন্ন আবহে এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বৈশ্বিক মহামারির পাশাপাশি রাশিয়া-উইক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে বিশ্বের সর্বত্র। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দার হাত থেকে দেশের মানুষকে সুরক্ষায় ক্ষমতাসীন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মুক্তিপাগল বাঙালি জাতি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই ডিসেম্বরেই ছিনিয়ে আনে হাজারো বছরের লালিত স্বপ্ন প্রিয় স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বিজয়। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায় লাল-সবুজের রক্তস্নাত স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাই ডিসেম্বর হচ্ছে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন জাতি ও ভূখ-ের স্বীকৃতি আদায়ের মাস। ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসন-শোষণকে পদানত করে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলার দামাল  ছেলেরা ছিনিয়ে আনা বীরত্বগাথা বিজয় অর্জনের মাস।
এমন প্রেক্ষাপটে আবারও ফিরে এলো বিজয়ের মাস। আজ ১ ডিসেম্বর। ৫১ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই ডিসেম্বরেই বাঙালির নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই ডিসেম্বরের ১৬ তারিখেই আমরা পেয়েছিলাম দেশের স্বাধীনতা।

স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক ও বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, একটি লাল-সবুজের পতাকা। তাই ডিসেম্বর মাস বাঙালি জাতিসত্তা আর নিজস্ব ভূমির গৌরবদীপ্ত বিজয় ও অহংকারের মাস।
গত কয়েক বছরের মতো এবারের বিজয়ের মাসও শুরু হয়েছে সকল স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসরদের সর্বত্র আবারও পরাজিত করার দৃপ্ত শপথের মধ্য দিয়ে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পরই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে।
গত তিন মেয়াদের ১৪ বছরে ক্ষমতায় থেকে অধিকাংশ যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন এবং বড় দাগি যুদ্ধাপরাধীদের আদালতের রায় অনুযায়ী ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায়ও কার্যকর করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪২টি মামলায় ৯৯ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় হয়েছে, যাদের অধিকাংশের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের রায় হয়েছে। আপিল বিভাগে ১০ জনের সাজা নিষ্পত্তি হয়েছে। আর আটজনের ফাঁসির রায় কার্যকরও হয়েছে।
তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী একটি অশুভ গোষ্ঠী নতুন করে দেশে অস্থিতিশীল সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আন্দোলনের নামে দেশে সংঘাত সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে মেতেছে। এবারের বিজয়ের মাসজুড়ে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা প্রকাশের পাশাপাশি মৌলবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে সেই ঐক্যের আহ্বানও থাকবে সারাদেশে।    
প্রতি বছরের মত এবারও বিজয়ের মাসে দেশবাসী বিজয়ের আনন্দে উচ্ছ্বসিত হবে। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও শোকে মুহ্যমান হয়ে মাথা নোয়াবে অগণিত শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। নানা আয়োজনে সবার চেতনায় ধ্বনিত হবে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথার স্মৃতিচারণ আর বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আর বিজয়ের স্মারক ডিসেম্বরের প্রথম দিনটিতে বিভিন্ন দল ও সংগঠন আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদসহ কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন ১ ডিসেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে পালন করবে। এ উপলক্ষে সকাল ৯টায় মিরপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ ও প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

এ ছাড়াও সকাল ১১টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এ ছাড়া বিজয়ের মাস ডিসেম্বর উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে।

×