ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে শ্রীলঙ্কার সমর্থন চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০১:৫৭, ২৬ নভেম্বর ২০২২

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে শ্রীলঙ্কার সমর্থন চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শুক্রবার গণভবনে শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি সাক্ষাৎ করেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের তাদের পৈতৃক ভূমিতে টেকসই, নিরাপদ এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য শ্রীলঙ্কার সমর্থন চেয়েছেন। খবর বাসসর।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সময় তিনি এই সমর্থন চেয়েছেন। আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার সময় শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশ এবং সমগ্র অঞ্চলের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক-অর্থনীতি, পরিবেশ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে।
আলি সাবরি অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) ২২তম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফর করছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে  ধন্যবাদ জানান।
তিনি শ্রীলঙ্কার সৌভাগ্য এবং দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কামনা করেন।  শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মহামারী এবং আঞ্চলিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেন। শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার প্রশংসা করেন।
আলী সাবরি বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে দুই দেশের মধ্যে শিপিং এবং বিমান যোগাযোগের ওপর জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন, শ্রীলঙ্কানরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। তিনি বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ করার জন্যও আমন্ত্রণ জানান।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে কলম্বো সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ সাক্ষাৎকালে সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারের সঙ্গে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করা হয়।
আইওআরএ মন্ত্রীদের সাক্ষাৎ ॥ সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সদস্য দেশগুলোর উপমন্ত্রী এবং ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) সংলাপ অংশীদাররা শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমোরোস, ভারত, মালদ্বীপ, মোজাম্বিক, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেনের মন্ত্রীরা এই গ্রুপে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ২২তম আইওআরএ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি আইওআরএ’র চেয়ারম্যানশিপ চলাকালীন বাংলাদেশে তাদের সহায়তার জন্য তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা তার সরকারের ‘রূপকল্প-২০৪১’ সম্পর্কে প্রতিনিধিদের অবহিত করেন, যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি স্বনির্ভর, সমৃদ্ধ, সমতাভিত্তিক ও উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে সফররত মন্ত্রীদের অবহিত করেন।
বাংলাদেশকে একটি অর্থনৈতিক রোল মডেল হিসেবে রূপান্তরিত করা এবং প্রশংসনীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বের জন্য সকল মন্ত্রী তার প্রশংসা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল ও চেম্বার কর্মকর্তাদের মধ্যে ভিভিআইপি সফর বিনিময় ও পরিদর্শনের নিয়মিত আদান-প্রদান হওয়া উচিত। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আরও ব্যবসায়ীদের এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ হওয়া উচিত। সকল প্রতিনিধি একমত হয়েছেন যে, আন্ত:-আঞ্চলিক বিনিয়োগ প্রবাহ পরিমিত এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। প্রতিনিধিরাও সম্মত হন যে, আইওআরএ সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাদের সুস্বাস্থ্য, সুখ এবং তাদের দেশে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন কামনা করেন। তিনি আইওআরএ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধানদের এবং সংলাপ অংশীদারদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা জানিয়েছেন।
বিমান যোগাযোগ সম্প্রসারণে সহযোগিতা চায় আরব আমিরাত ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রতিমন্ত্রী আহমেদ বিন আলী আল সায়েগ শুক্রবার বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে বিমান যোগাযোগ সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের কাছে আরও সহযোগিতা চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন। তিনি ২৩-২৪ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত আইওআরএ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তার প্রতিনিধি দলের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি আইওআরএ এর বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ কর্তৃক আইওআরএ এর ফলপ্রসূ সভার আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সভাপতিত্বে আইওআরএ আরও সংহত ও কার্যকর হবে। আগামী বছর ইউএই কপ-২৮ আয়োজন করবে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশের অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী দুবাইতে অনুষ্ঠিত এক্সপো ২০২০-তে সংযুক্ত আরব আমিরাতের চমৎকার আয়োজনের প্রশংসা করেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি সরকারের সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।

×