ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের প্রথম মেট্রোরেল

ডিসেম্বরেই চলবে

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২২ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ১৭:১৬, ২৩ নভেম্বর ২০২২

ডিসেম্বরেই চলবে

ডিসেম্বরেই চালু হচ্ছে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ বা প্রথম মেট্রোরেল

ডিসেম্বরেই চালু হচ্ছে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ বা প্রথম মেট্রোরেল। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশটি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। উদ্বোধনের চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণের জন্য চলতি মাসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘মেট্রোরেল-৬ প্রকল্পের রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশটির বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এই অংশটি চালু করা হবে। তবে এখনো তারিখ চূড়ান্ত করা হয়নি। তারিখ নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’ তবে ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধন হবে না বলে জানান তিনি।


প্রকল্প সূত্র জানায়, এমআরটি-৬ প্রকল্পের গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী-মিরপুর-ফার্মগেট-মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত পুরো মেট্রোরেল প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। প্রথম অংশ দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

দ্বিতীয় অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ১১ শতাংশ। তৃতীয় অংশ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটারের বিস্তারিত নক্সার কাজ শেষে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশটি ডিসেম্বর চালু হলেও পুরো কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালে।

প্রথম মেট্রোরেলের স্টেশন থাকবে ১৭টি। এগুলো হলো- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসক্লাব, মতিঝিল ও কমলাপুর। মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মিরপুর-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল যেতে সময় লাগবে ৩৮-৪০ মিনিট। প্রতিঘণ্টায় ৬০ হাজার করে দৈনিক প্রায় ৫ লাখ যাত্রী পরিবহন করা যাবে মেট্রোরেলে।

ডিসেম্বরে শুরু হবে সীমিত যাত্রী নিয়ে চলাচল ॥ মেট্রোরেলের ১০টি ট্রেন দিয়ে চালু হবে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশটি। এ লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে সিস্টেম ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট (সমন্বিত পরীক্ষামূলক যাত্রা) শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ (ডিএমটিসিএল)। যা চলতি মাসে শেষ হবে। এরপর ১ ডিসেম্বর থেকে সীমিত যাত্রী ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলবে মেট্রোরেল। যা উদ্বোধন আগের দিন পর্যন্ত চলবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত যাত্রীবিহীন আবার কখনো সীমিক যাত্রী নিয়ে ফাইনাল পরীক্ষামূলক চলাচল করবে মেট্রোরেল। যা পহেলা ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে। উদ্বোধনের আগেই সিস্টেম ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট (সমন্বিত পরীক্ষামূলক যাত্রা) শেষ হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে মেট্রোরেলের এক একটি পরীক্ষা শেষ করতে এক-দুই বছর সময় নেয়। কিন্তু আমরা এত সময় নিচ্ছি না।’ তাই উদ্বোধনের আগেই গুরুত্বপূর্ণ এসব পরীক্ষা শেষ হবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মিরপুর-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল যেতে সময় লাগবে ৩৮-৪০ মিনিট। গত ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এক বিজ্ঞপ্তিতে মেট্রোরেলের ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া পাঁচ টাকা। এছাড়া সর্বনিম্ন ২০ এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা।
ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে উড়াল ও পাতাল রেলের সমন্বয়ের নির্মাণ করা হচ্ছে মেট্রোরেলের ৬টি লাইন। পুরো রেলপথ হবে ১২৮ দশমিক ৭৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৭ দশমিক ৫৬৯ কিলোমিটার হবে উড়াল পথে এবং ৬১ দশমিক ১৭২ কিলোমিটার হবে মাটির নিচ দিয়ে। ২০৩০ সালের মধ্যে মেট্রোরেলের এই ছয়টি লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

মেট্রোরেলের যাত্রী বহনে প্রস্তুত ৫০টি বিআরটিসির বাস ॥ মেট্রোরেলের যাত্রী পরিবহন করতে রাজধানীর আগারগাঁও এবং উত্তরা নর্থ (দিয়াবাড়ী) স্টেশনে থাকবে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাস সার্ভিস। ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও অংশটি উদ্বোধনের পর থেকে এই বাস সার্ভিস চলাচল করবে। এর জন্য বিআরটিসির ৫০টি বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগারগাঁও থেকে যাত্রীদের ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন হয়ে মতিঝিল পৌঁছে দেবে বিআরটিসির বাস।

দিয়াবাড়ী স্টেশনেও থাকবে বিআরটিসি বাস। উত্তরার বিভিন্ন এলাকার এসব বাসে যাত্রীরা মেট্রোর স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারবেন। মেট্রোরেলের নির্মাণকারী সরকারি কোম্পানি ডিএমটিসিএল গত বৃহস্পতিবার বিআরটিসির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ‘যাত্রীদের চাহিদা আলোকে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। প্রাথমিকভাবে ৫০ বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উদ্বোধনের দিন থেকে এই বাস চলাচল করবে। মেট্রোরেল স্টেশনে মেনে যাতে পরিবহন সমস্যা না হয় সে জন্য এই বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। আগারগাঁও ও উত্তরা দুই স্টেশনে এই বাসগুলো রাখা হবে। যাত্রীরা ভাড়া দিয়ে এই বাসে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করতে পারবে বলে জানান তিনি।
ট্রেনে ২৩০৮ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে ॥ সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) হবে মেট্রোরেলের প্রতিটি কোচ। দুই প্রান্তে দুটি চালক কোচ (ট্রেইলর কার) সহ মোট ৬টি কোচ থাকবে একটি ট্রেনে। দুটি চালক কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবে। বাকি চারটি কোচে (মোটরকার) ৫৪ জন যাত্রী বসার ব্যবস্থা থাকবে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে ৩০৬ জন বসতে পারবে।


প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবে। দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্য ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি আছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে এবং দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।
কোচের ভিতরে দুই সারিতে সবুজ রঙের লম্বা আসন রয়েছে। মাঝখানের প্রশস্ত খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা থাকবে। দাঁড়ানো যাত্রীদের জন্য ওপরের দিকে হাতল রয়েছে।

ট্রেনের কোচগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে স্টেশনে থামার পর এর মেঝে একেবারে প্লাটফর্মের সমতলে থাকে। এতে সহজেই যাত্রীরা হেঁটে ট্রেনে উঠতে পারবে। কোচের দুই পাশে চারটি করে দরজা। ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্ট কার্ড টিকেটিং ব্যবস্থা। রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী-মিরপুর-ফার্মগেট-মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রথম মেট্রোরেলটি জাপানের অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে বলে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান।

×