ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নিয়েছে সিত্রাং, সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২৩ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ২১:৪৩, ২৩ অক্টোবর ২০২২

ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নিয়েছে সিত্রাং, সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত

ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নিয়েছে সিত্রাং

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এ রুপ নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

রবিবার (২৩ অক্টোবর) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিভিন্ন জেলায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি ও বাতাসের গতি ক্রমশ বাড়ছে।

বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো সামান্য উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং' এ পরিণত হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় (অক্ষাংশ: ১৬.৩° উত্তর, দ্রাঘিমাংশ: ৮৮.২° পূর্ব) অবস্থান করছে। এটি আজ সন্ধ্যা ৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০-৫০ কি.মি. বেগে দমকা/ঝাড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি  বর্ষণ হতে পারে।

চাট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত (পুনঃ) ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টির আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বামতাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, সকাল থেকে মোংলা, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, কচুয়া, রামপালসহ সবই উপজেলায়ই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির খবরও পাওয়া গেছে। মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা ফেরি ও খেয়াঘাটে পাড়াপাড়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়েছে। এটি এখন গভীর নিম্নচাপ আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। নিম্নচাপটি মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে। ফলে মোংলা সমুদ্রবন্দকে তিন নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। 

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, বন্দরের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। আবহওয়া অধিদপ্তরের সিগনাল বৃদ্ধি ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্দরে ১৪টি বানিজ্যিক জাহাজ ছিল। সবগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

মোংলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক শিহাব কবির বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে আজ সূর্য উঠেনি। সকাল থেকে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। ২৪ ও ২৫ অক্টোবর সকাল থেকে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপের ফলে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন -এর স্টাফ অফিসার (অপারেশন্স) লে. কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন জামান জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশ উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে আসছে। আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতামূলক প্রস্তুতি হিসেবে গভীর সমুদ্রে সকল মাছ ধরা ট্রলারসমূহ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী সকল যাত্রীবাহী নৌযানসমূহকে উপকূলের নিকটবর্তী নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের অন্তর্গত খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরসহ সর্বস্তরের মাছ ঘাট, বোট মালিক সমিতির সভাপতিসহ সকল জেলেদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। 

তিনি জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে অবগত করে তাদের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে সৃষ্ট নিম্নচাপ সম্পর্কে সতর্ক করা হচ্ছে। দুর্যোগকালীন সময়ে সকলকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল অথবা নিকটস্থ কোস্ট গার্ড কোস্টাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে এ অবস্থান গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার অভিযান এবং ত্রাণ বিতরণসহ সকল পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের সকল জাহাজ, স্টেশন এবং আউটপোস্টসমূহ সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আগামী ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবি)।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভোলার উপকূলীয় এলাকায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। সকাল থেকে বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করলেও জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে। সাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের খবরে দ্বীপ জেলা ভোলার উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তুতি সভা করেছে জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি।

এমএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

×