ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বিনিময়

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা যাবে না

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ৪ অক্টোবর ২০২২

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা যাবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে কেউ আঘাত করতে পারবে না। যেকোন ধর্মের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। বাংলাদেশ সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন, যারা বসবাস করেন বা বাংলাদেশের নাগরিক, যে ধর্মেরই হোন না কেন যার যার ধর্ম সমানভাবে পালন করবেন। শারদীয় দুর্গোৎসবের নবমীর দিন মঙ্গলবার হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ যে ধর্মেরই হোক না কেন তার ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে কেউ কথা বলতে পারবে না, তার ধর্মীয় অনুভূতিতে কেউ আঘাত করতে পারবে না। সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস নিয়েই সবাইকে চলতে হবে।’
এ বছর শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ভেদাভেদ ভুলে বাঙালীরা সবসময় সব ধর্মের অনুষ্ঠান-উৎসবে শামিল হয়। আমরা কিন্তু প্রতি উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে উৎসব উদযাপন করি। যে কারণে বলি ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার। সবার উৎসবই আমরা সম্মিলিতভাবে করে থাকি। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সঞ্চয়ে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতিসংঘে গিয়ে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সংস্থাটির মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সবাই খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত যে, ২০২৩ সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। অর্থনৈতিক মন্দা আরও ব্যাপক আকারে দেখা দিতে পারে। এই দুঃসময়ে সবাইকে সঞ্চয় বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুত, পানিসহ সবকিছু ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জমি অত্যন্ত উর্বর। তাই কোনও জমি যাতে অনাবাদী না থাকে। যে যা পারেন উৎপাদন করেন। নিজেদের সঞ্চয় বাড়াতে হবে। জনগণের ভোগান্তি কমাতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় উন্নত দেশগুলো আজ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছে। ইসলামকে শান্তি ও উদারতার ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ইসলাম ধর্মেই এটা নির্দেশ আছে যে সকল ধর্মের প্রতি সম্মান দেখানো... সূরা কাফিরুনে স্পষ্ট লেখা যে, লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়া দিন, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে।

সেটা আমরা সত্যিকারভাবে বিশ্বাস করি।’ সব ধর্মের অন্তর্নিহিত বাণী উপলব্ধি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ কাউকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। নিশ্চয়ই প্রত্যেকটা ধর্মেরই নিজস্ব কোন না কোন শক্তি আছে, যে শক্তিটা মানুষের অন্তরে সব ধরনের প্রেরণা জোগায়, সাহস জোগায়, শক্তি জোগায়। কাজেই এই কথাটা সবাইকে চিন্তা করে সকল ধর্মের প্রতি সম্মান জানিয়ে চলাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় উদারতা। আর সেই চেতনা নিয়েই জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন। আমরা সেই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশকে গড়তে চাই।’

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা জানি ৭৫-এর পর অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। কখনও কখনও কিছু কিছু ঘটনা ঘটে কিন্তু আপনারা নিশ্চয়ই একটা জিনিস লক্ষ করেছেন আমাদের সরকার সব সময় এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। যেকোন ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়। বাংলাদেশের নাগরিক সে যে ধর্মেরই হোক যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু প্রত্যেকটা উৎসবই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে উদযাপন করি। যে কারণে বলি ধর্ম যার যার উৎসব সবার।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবসময় চেষ্টা করি আমাদের এই দেশটা যেন সব সময় অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে চলতে পারে। কোথায়ও কোন দুর্ঘটনা হলে পরে সেটাকে খুব বড় করে না দেখে তার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে বিষয়টিকে আপনাদের নজর দিতে অনুরোধ করব। সেই সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের সহযোগিতাও চাইব। আপনারাও সেই সহযোগিতা করবেন।
মুসলিমদের হেবা আইনের মতো সুবিধা হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্যও চালু করা হয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল শত্রু সম্পত্তি আইন। সেটাও আমরা বাতিল করে, পরিবর্তন করে দিয়েছি। যার যার সম্পত্তিতে অধিকারটা ভোগ করতে পারেন। সেই ব্যবস্থাটা করেছি। এ সময় সব ধর্মের বিত্তবান মানুষকে কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে মানুষের সেবায় পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি অনেক সময়, অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে।

কিন্তু এবারই সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ পরিবেশে, সুন্দরভাবে পূজা শুরু হয়েছিল। সেখানে এই একটা ঘটনায় কষ্টের জায়গা সৃষ্টি করল। তিনি বলেন, সবচেয়ে দুর্ভাগ্য যে, আসলে একটা নৌকায় এত বেশি লোক এক সঙ্গে চড়াটা। বারবার নিষেধ করার পরও কেউ শোনেনি। অথচ নদীটি খুবই ছোট, অত গভীরও না। তারপরও দুর্ঘটনাটা ঘটে গেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিসর্জনের সময় সবাই একটু সাবধানে থাকবেন। কারণ সেই সময় খুব স্বাভাবিকভাবেই নৌকায় করে আপনাদের যেতে হয়। একটু সচেতন থাকবেন যেন আবার কোন দুর্ঘটনা না ঘটে।’

×