ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ

পদ্মা সেতুর সুফল মিলছে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পে 

বাবুল সরদার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২; আপডেট: ১১:১৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

পদ্মা সেতুর সুফল মিলছে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পে 

ষাট গম্বুজ মসজিদ

বাংলাদেশের ৩টি বিশ্ব ঐতিহ্যের দুইটি বাগেরহাটে। অনিন্দ্য শিল্প কৌশল আর দক্ষতায় ষোড়শ শতাব্দীতে খানজাহান আমলে নির্মিত বিশ্ব ঐতিহ্য ষাট গম্বুজ মসজিদ। ইসলামী স্থাপত্য শিল্প সৌন্দর্যের অনন্য রীতির মসজিদগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৮৫ সালে বাগেরহাটকে ঐতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে ঘোষনা এবং ৩২১তম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো। 

অপরটি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। প্রতিদিন আট প্রহরে ছয় রূপ ধারণ করা জীববৈচিত্রের আধার সুন্দরবন। যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস এ বনে। চিত্রল মায়াবী হরিণের ছোটুছুটি আর বিস্তীর্ণ তটে লাল কাঁকড়ার বিচরণ সত্যিই মন কেড়ে নেয়। চোখ সার্থক হয়। প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এ দুটি ছাড়াও বাগেরহাটে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ফলে ভ্রমনপিপাসুদের অন্যতম আগ্রহের জেলা বাগেরহাট।

তবুও গাঢ় সবুজে ঘেরা উপকূলীয় এ জনপদ পর্যটন শিল্পে সীমাহীন অবহেলার শিকার ছিল। যার অন্যতম প্রধান কারণ অনুন্নত যোগাযোগ। তাই ভারসাম্যহীন পর্যটন শিল্পের সেই দূরত্ব ঘুচাতে পদ্মা সেতু চালুর আগে থেকেই জেলার পর্যটন শিল্পকে ঘিরে নানা স্বপ্ন ও আশার আলো দেখছিলেন বাগেরহাটবাসী। সেই স্বপ্ন এখন অনেকটাই বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করছে। যোগাযোগ সহজ হওয়ায় পর্যটন শিল্পে সম্ভাবনার দুয়ার ক্রমশ খুলছে। 

দেশী-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। নতুন আশার আলো দেখছেন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। সরকারের রাজস্ব বাড়ছে। জেলার পর্যটন শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ। উন্নতমানের হোটেল-মোটেল চালু হচ্ছে।

সুন্দরবন

এ অবস্থায় বিশ্ব পর্যটন দিবস (২৭ সেপ্টেম্বর) উপলক্ষে রোড শো, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৌকা বাইচ, গোল টেবিল বৈঠক, ট্যুরিস্ট গাইড প্রশিক্ষণসহ বাগেরহাটে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।  

পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাগেরহাটে যাতায়াতের প্রধান ব্যবস্থা হচ্ছে সড়কপথ। আর এই সড়কপথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় যাতায়াতে মাওয়া ঘাটে যানজট, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকাসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। যা পদ্মা সেতু চালুর পর পাল্টে গেছে। 

তারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর ফলে সুন্দরবনের বিভিন্ন পয়েন্টের অবকাঠামো ও যাতায়াত ব্যবস্থা দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। বাগেরহাটে আগের চেয়ে কয়েকগুণ দর্শনার্থী বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থী আসছেন।  সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলী মাজার, দশগম্বুজ, অযোধ্যা মঠ, শিববাড়িসহ বাগেরহাটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে আসছেন।

এ বিষয়ে ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বাগেরহাটসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সমৃদ্ধি ফিরতে শুরু করছে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলী মাজার, সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন শিল্পে যে অপার সম্ভাবনা তা ফিরতে শুরু করছে। পদ্মা সেতু চালুর পর শুধু সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ মসজিদ নয় মোংলা বন্দরেরও ব্যাপক উন্নয়ন শুরু হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন অবহেলিত এ জেলার মানুষ সামগ্রিক অর্থে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছেন। 

সুন্দরবন

খানজাহান আলী (র.) মাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী ও উন্নয়ন কর্মী মো: কামরুজ্জামান বলেন, যাতায়াত সহজ হওয়ায় ভোগান্তি কমেছে। এখন পদ্মা সেতু চালুর পর পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। নতুন নতুন হোটেল-মোটেল তৈরি হচ্ছে ও অনেক তরুণ উদ্যাক্তা এ ব্যবসায় উৎসাহিত হচ্ছেন।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জের দুটি বাগেরহাট জেলায়। শরণখোলা ও চাঁদপাই। এখানে পর্যটকদের আকর্ষণের শেষ নেই। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই চাপ বাড়ছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে। এ কারণে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও পশ্চিম সুন্দরবনে তৈরি করা হচ্ছে চারটি নতুন পর্যটন স্পট। নতুন এ পর্যটন স্পটগুলোতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবনের রূপ-বৈচিত্র্য উপভোগ করতে পারবেন।

তার মতে, পর্যটন শিল্পের বিকাশের পূর্ব শর্ত হচ্ছে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সুন্দরবনে দর্শনার্থীদের আগমন কম ছিল। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই এ সমস্যা কাটতে শুরু করছে। 

সুন্দরবন

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, কেবলমাত্র ষাটগম্বুজ মসজিদ বা সুন্দরবন নয়, বাগেরহাটে দেখার মতো অসংখ্য স্থাপনা রয়েছে। ইউনেস্কো বাগেরহাটকে মসজিদের শহর ঘোষণা করেছে। দীর্ঘদিন যোগাযোগ বিড়ম্বনার কারণে বাগেরহাট ভ্রমণে দর্শনার্থীদের আগ্রহ কিছুটা কম ছিল। এখন পদ্মা সেতু সেই সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বাগেরহাটকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে পর্যটন করপোরেশনের অর্থায়নে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি তিন তারকা মানের হোটেল নির্মাণের কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে বিশ্রামাগার নির্মাণ, মসজিদ সংলগ্ন ঘোড়াদিঘীকে নান্দনিক করতে ওয়াকওয়ে তৈরি করাসহ নানা কাজ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন শিল্পের নানা স্থাপনা তৈরিতে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকার মান দিন দিন আরও উন্নত হবে। 
 

এসআর

×