ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্কে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ৫ প্রস্তাব

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:৫৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২; আপডেট: ০২:০০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ৫ প্রস্তাব

অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেয়াসহ পাঁচটি পদক্ষেপ

রোহিঙ্গাদের স্বদেশ মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে এই জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেয়াসহ পাঁচটি পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার লোটে প্যালেস হোটেলে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজের।
প্রস্তাবগুলো হলো- রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান; আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়াকে সমর্থন করাসহ আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং জাতীয় আদালতের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করা; জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা; আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্য মেনে চলার অঙ্গীকার পূরণে মিয়ানমারকে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানানো এবং মিয়ানমার যাতে বাধাহীন মানবিক প্রবেশাধিকারে রাজি হয় সেজন্য উদ্যোগ নেয়া।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত মাসে আমরা দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সঙ্কটের ষষ্ঠ বছরে পা দিয়েছি, তাদের একজনকেও তাদের ঘরে ফিরে যেতে দেখিনি।’ মিয়ানমারের রাজনৈতিক ইতিহাসে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরাকানে বর্তমানে যা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য হিসেবে পরিচিত, অষ্টম শতক থেকেই রোহিঙ্গারা বসবাস করে আসছে।

১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জনের পর সেখানে নতুন সরকার রোহিঙ্গাদের ‘টার্গেট’ করে এবং তাদের ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর ১৯৮২ সালে সেখানে নতুন নাগরিকত্ব আইন পাস হয় এবং জাতিগোষ্ঠী হিসেবে রোহিঙ্গাদের তাতে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। অথচ ১৯৫২ সালে যখন ইউ নু প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখনও তার মন্ত্রিসভায় দুইজন রোহিঙ্গা মন্ত্রী এবং তখনকার পার্লামেন্টে ছয়জন রোহিঙ্গা এমপি ছিলেন।’ মিয়ানমারের ওইসব রোহিঙ্গা মন্ত্রী ও এমপিদের নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ থেকে প্রমাণ হয় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। ‘বর্তমান সঙ্কটের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারে এবং তার সমাধানও সেখানেই রয়েছে,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেয়া এবং প্রতিবছর শরণার্থী শিবিরে ৩০ হাজার নবজাতকের জন্ম নেয়ার তথ্যও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয়ভাবে তাদের শক্তিশালী মানবিক ও রাজনৈতিক সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ। নিজ দেশে একটি ভাল এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষায় থাকার এই সময়ে রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সংহতি প্রয়োজন।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের শুরু থেকেই বাংলাদেশ আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়ে আসছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগের পর ২০১৭ সালে দুই দেশ তিনটি চুক্তি সই করেছে। প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুইবার প্রচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু রাখাইনে অনুকূল পরিবেশের অভাবে বাছাই করা রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি হয়নি। তাদের নিরাপত্তা, সহিংসতার পুনরাবৃত্তি না হওয়া, জীবিকার সুযোগ এবং নাগরিকত্ব লাভের পথসহ মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে তাদের উদ্বেগ ছিল।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের তার বাধ্যবাধকতা অব্যাহতভাবে অমান্য করে চলার পটভূমিতে, বাংলাদেশ একটি ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চীনের সহায়তায় প্রত্যাবাসন আলোচনা শুরুর জন্য বিকল্প পথ নেয়। সেপথেও আজ পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি হয়নি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, কক্সবাজারে এখন বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির অবস্থিত, মাত্রার দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম বড় মানবিক সঙ্কট সহায়তা কার্যক্রমের একটি এটা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সেবা পাচ্ছে।’
বাংলাদেশ তার জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচীতেও রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করেছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, তারা মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে মিয়ানমারের ভাষা শেখার সুবিধা, দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে যোগদান এবং জীবিকার সুযোগে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে। এগুলো তাদের সংস্কৃতি ও ভাষা ধরে রাখতে অবদান রাখছে এবং যা শেষ পর্যন্ত তাদের ফিরে যাওয়ার পরে নিজ সমাজে আবার যুক্ত হতে সাহায্য করবে।

শেখ হাসিনা জানান, প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরের জন্য আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন (৩৫ কোটি) ডলার ব্যয় করে ভাসানচর নামে একটি স্থিতিশীল দ্বীপের উন্নয়ন করেছি এবং সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় ৩১ হাজার রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় স্থানান্তর হয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান আমাদের উন্নয়ন আকাক্সক্ষার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ১ দশমিক ২ মিলিয়ন (১২ লাখ) রোহিঙ্গাকে আতিথেয়তা দেয়ার চাপ বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি বছর আমাদের প্রায় ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন (১২২ কোটি) ডলার ব্যয় করতে হয়।
(এছাড়া) জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, প্রায় ৬ হাজার ৫০০ একর বনভূমির ক্ষতি এবং স্থানীয় জনগণের ওপর এর বিরূপ প্রভাব অপরিমেয়। সামাজিক ও জনসংখ্যাগত ভারসাম্য, দেশীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ (অতিরিক্ত) ভার বহন করছে। তিনি বলেন, বিশ্ব এখন নতুন নতুন সংঘাত প্রত্যক্ষ করছে এবং দুর্ভাগ্যবশত রোহিঙ্গা সঙ্কট থেকে মনোযোগ ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে- এর রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সঙ্কটের চাহিদা মেটানো উভয়ক্ষেত্রেই।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত, জেআপি ২০২২-এর অধীনে ৮৮১ মিলিয়ন (৮৮ কোটি ১০ লাখ) ডলার সহায়তা চাওয়া হলেও মাত্র ৪৮ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে। একই সময়ে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক অভ্যন্তরীণ সংঘাতের বিরূপ প্রভাব আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করছে, কারণ এটি তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করার সম্ভাবনার জন্য আরও বাধা তৈরি করতে পারে।’ টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের বাস্তব পদক্ষেপ এবং প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে বলেও মত দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, একটি আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে আসিয়ান এবং এই জোটের স্বতন্ত্র সদস্য দেশগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের একটি সমন্বিত সংযোগ সৃষ্টিতে নেতৃত্বদানকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব অর্জনের পথ তৈরির মূল বিষয়সহ রাখাইন রাজ্যে কফি আনান উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়নে তাদের বিস্তৃত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত। বেসামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে তাদের অর্থবহ উপস্থিতি স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের আস্থা বাড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ মিয়ানমারকে (বাধ্যবাধকতা মানতে) বাধ্য করতে পারে না। সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য ও সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি মিয়ানমারের স্বার্থকেই এগিয়ে নিচ্ছে।’ বাংলাদেশ মনে করে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান এবং রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ আস্থা-নির্মাণ ব্যবস্থা খুঁজে পেতে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার প্রশ্নটি জরুরী হবে।
বাংলাদেশ ন্যায়বিচার থেকে দায়মুক্তির বিরুদ্ধে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে যে কোন উদ্যোগকে সমর্থন করবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ এবং আসিয়ানের বর্তমান মনোযোগ মিয়ানমারে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা হলেও, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের স্বদেশে টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে এবং মিয়ানমারের জনগণের জন্য শান্তি ও ন্যায়বিচার আনতে তাদের শক্তিশালী ভূমিকার অপেক্ষায় রয়েছে।’

খাদ্য-জ্বালানি সঙ্কট ও আর্থ বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কটের পাশাপাশি আর্থিক ও বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ক্লাউস শোয়াব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অবস্থানস্থল হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাত করলে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনে অংশগ্রহণের ফাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ডব্লিউইএফের মধ্যে সহযোগিতা ভবিষ্যতে বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। অধ্যাপক শোয়াব আগামী জানুয়ারিতে ডাভোসে ডব্লিউইএফ সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান।
এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপক্ষীয় বুথে স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহোরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার মধ্যে সহযোগিতা-সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। পরে জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপক্ষীয় বুথে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয় নেতা বাংলাদেশ ও ইকুয়েডরের মধ্যে সহযোগিতার দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
অন্যদিকে, স্বল্পোন্নত দেশ, ল্যান্ডলকড ডেভেলপিং কান্ট্রিস এ্যান্ড স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপিং স্টেটসের (ইউএন-ওএইচআরএলএলএস) হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের কার্যালয়ে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কক্ষে    সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ওএইচআরএলএলএস এলডিসি দেশ এবং উন্নয়নশীল  দেশগুলোকে সাহায্য করতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে, যাতে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতষ্ঠানগুলো বৈশ্বিক সঙ্কটের সময় কঠোর শর্ত আরোপ না করে সহায়তা প্রদান করে।
রাবাব ফাতিমা প্রধানমন্ত্রীকে ২০২৩ সালের মার্চে দোহায় অনুষ্ঠেয় এলডিসি-৫ সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।  শেষে মেটার গ্লোবাল এ্যাফেয়ার্সেও প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কক্ষে সাক্ষাত করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন। নিক ক্লেগ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের প্রশংসা করেন। এ সময় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ ও মেটার মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাব্য দিক নিয়ে আলোচনা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকারের সাফল্যের প্রশংসা করে নিক ক্লেগ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসার চলমান উন্নয়নে মেটার পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

‘এএমআর রোধে টেকসই রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ জরুরী’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বড় ধরনের সঙ্কটে পরিণত হওয়ার আগেই এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) ঠেকাতে টেকসই রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এএমআর এমন একটি সমস্যা, যা সঙ্কটে রূপ নিতে পারে। এর কারণে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ প্রাণহানি হতে পারে। এটি প্রতিরোধে আমদের টেকসই রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।’ সুতরাং, এএমআর সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের লেক্সিংটন হোটেলে বৃহস্পতিবার এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বিষয়ে প্রাতরাশ বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এই গ্রুপ থেকে বিষয়টিকে তুলে ধরার জন্য কাজ চলছে। কিন্তু এটি স্পষ্ট যে, এ ব্যাপারে আরও কিছু করা প্রয়োজন। ‘কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। আমাদের একটি ‘অভিন্ন স্বাস্থ্য পদ্ধতিতে স্থিত হওয়া প্রয়োজন।’
ইতোমধ্যে প্রায় ১৫০টি দেশের এএমআর বিষয়ে তাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থপূর্ণ সহায়তা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতায় এএমআর গুরুত্ব পাওয়া উচিত এবং ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মাল্টি-পার্টনার ট্রাস্ট ফান্ড পছন্দের হাতিয়ার হতে পারে। এএমআরের জন্য বিশ্ব ও জাতীয় পর্যায়ে একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ পরিস্থিতি তৈরি করা দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এএমআরের দায়িত্ব ও প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্যে নজরদারি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ২০১৯ সাল থেকে গ্লাস প্ল্যাটফর্মে রিপোর্ট করে আসছে। সংশ্লিষ্ট সকল অংশীদারের জড়িত হওয়া অত্যাবশ্যকীয় এবং একটি রোগীকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতির সঙ্গে যোগসূত্রের মাধ্যমে শুরুতেই রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করা যেতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নতুন এএমআররের ভ্যাকসিন ও অন্যান্য চিকিৎসার জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনের অভাবকে উদ্বেগের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ জন্য বেসরকারী খাতের যথাযথ প্রণোদনা প্রয়োজন। কিছু জটিল প্যাথোজেনের জন্য এএমআরের বিকাশের ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, এই বিষয়ে সংগৃহীত প্রমাণ এবং তথ্যউপাত্ত বেশ চোখ খুলে দেয়ার মতো।
সরকারপ্রধান বলেন, এএমআর সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই এবং এ জন্য নবেম্বরে বার্ষিক বিশ্ব সচেতনতা সপ্তাহ একটি উপযুক্ত উপলক্ষ।

শেখ হাসিনা অভিমত দেন যে, এই সূচকগুলোর ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ মানব স্বাস্থ্য, প্রাণী স্বাস্থ্য, খাদ্য ব্যবস্থা এবং পরিবেশকে প্রভাবিত করে- এমন এএমআর নীতি তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। তিনি আশা করেন, বৈঠকটি এএমআরের বিরুদ্ধে আরও রাজনৈতিক গতিবেগ সঞ্চারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং সকলেই বিশেষজ্ঞদের ভাবনা, উপলদ্ধি জানতে, শুনতে এবং উপকৃত হতে চান।

×