
ডিম আমদানি করার কথা ভাবছে সরকার
দাম কমাতে আমিষের প্রধান উৎস ডিম আমদানি করার কথা ভাবছে সরকার। চলমান সঙ্কট কাটিয়ে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে নিত্যপণ্যের বাজারে জিনিসপত্রের দাম সহনীয় হয়ে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। চালের দাম বাড়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা অতি সুযোগ নেয়ার কারণে দেশের প্রধান এ খাদ্যপণ্যটির দাম বাড়ছে। পণ্যদাম বাড়াতে যারা কারসাজির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে সরকার কাজ শুরু করেছে।
বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা- টিসিবি কর্তৃক নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখন বেশিরভাগ পণ্যের দাম উর্ধমুখী। তবে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার চেষ্টা করছে। তবে এটা মনে রাখতে হবে, রাতারাতি দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। আমি তো জানি না পুতিন সাহেব (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন) কবে যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তবে মানুষের কষ্ট হচ্ছে, আমরা স্বীকার করছি। প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করছেন। আশা করছি, অক্টোবরের মধ্যে দাম সহনীয় হয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন, ডিম আমদানির বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের দাম প্রতিকেজিতে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা বাড়তে পারে। কিন্তু কেজিতে দাম বেড়েছে চার টাকা। কেজিতে এত টাকা দাম বাড়ার কোনো যুক্তি আছে? কিন্তু ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ নিচ্ছেন। আর ব্যবসায়ীরা যখন সুযোগ নেন, একেবারেই নেন। তবে সবাই মিলে চেষ্টা করছি বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার। কষ্টকে লাঘব করার জন্য চেষ্টা করছি। অক্টোবরের মধ্যে হয়তো একটা সমাধান হবে। টিসিবি কর্তৃক ১ কোটি পরিবারকে কার্ড প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিআইবি যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা অল্পসংখ্যক জরিপ করে মতামত দিয়েছে। যেটাতে সঠিক তথ্য উঠে আসেনি।
টিআইবি ১ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৪০ জন মানুষের ওপর জরিপ করেছে। প্রথম দিকে যেসব মানুষ বাদ পড়েছে তাদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। নাম ঢুকানোর ক্ষেত্রে অনিয়ম হচ্ছে এটা আামার অস্বীকার করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের দেশে সবকিছু জাজ করা সম্ভব না। এখন ৫ শতাংশ মানুষ ঢুকে পড়তে পারে। আমরা এই কার্যক্রম করতে চাই। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় এই কার্যক্রম চালাতে হবে। যদিও এটাতে অনেক সাবসিডি দিতে হচ্ছে সরকারকে। মন্ত্রী আরও বলেন, টিসিবি বিদেশ থেকে এনে পণ্য দেয়ার পরিকল্পনা করছে। কারো কাছে জিম্মি হতে চাই না।
ব্যবসায়ীদের ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। তবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম কত এবং ডলারের দাম বিশ্লেষণ করে তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় নিত্যপণ্যের দাম যতটা বাড়ার কথা ছিল, ব্যবসায়ীরা তার থেকে অনেক বেশি সুযোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সুযোগ যখন নেয়, সবাই একবারে লাফ দিয়ে নেয়। কিন্তু আমরা তো এসব একবারে শেষ করতে পারব না। তাদের সঙ্গে বসে ঠিক করতে হবে। আমাদেরকে একটু সময় দেন। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি।
হঠাৎ করে সুযোগ কেউ কেউ নিয়েছে যে পরিমাণ বাড়ার কথা, তার থেকে অনেক বেশি সুযোগ নিয়েছে- এটা সত্যি কথা। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমাদের কাছে হিসাব আছে। ধরেন তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচের জন্য চাল প্রতিকেজিতে ৫০ পয়সা করে বাড়তে পারে। সেখানে ব্যবসায়ীরা চার টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ‘অসাধু’ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সেটা আমরা ব্যবস্থা নেব। বলছি, সব কিছুতেই তো সুযোগ নিচ্ছে। সেটা আমরা দেখব। ডিমের বাজার স্থিতিশীল করতে প্রয়োজন হলে বিদেশ থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে ডিম আমদানি করতে গেলে একটু সময় লাগবে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনে ৪০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় উঠেছে। এর আগে ডিমের দাম এতটা বাড়তে দেখা যায়নি। ডিমের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগিও কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।