একনেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার ৬ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ১ হাজার ৬২৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৮৭৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়া হয়।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আগামী সেপ্টেম্বরে লোডশেডিং শেষ হবে বলে আশা করছি। এর মধ্যেই আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’ বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গত জুলাই থেকে দেশের ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন স্থগিত রাখে সরকার। এর আগে গত ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সভায় ১৯ জুলাই থেকে দেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

সেদিন থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে শিডিউল অনুযায়ী এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং শুরু হয়। পরে সেটি আরও বাড়িয়ে দুই ঘণ্টা করার কথা জানায় সরকার। তবে ঢাকায় কোথাও কোথাও দুই ঘণ্টা হলেও বেশির ভাগ এলাকায় ৩-৪ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। আর গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের সময় দুই ঘণ্টার জায়গায় ১০-১২ ঘণ্টারও বেশি হচ্ছে। বিশ্ববাজারে এখন জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। রাশিয়ার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র গম রফতানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এরপর শস্যটির রফতানিও শুরু করেছে রাশিয়া।

অনেক দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেলও আমদানি করছে। ফলে আগামী দিনে জ্বালানি তেলের সঙ্কট কেটে যাবে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। একনেক সভায় এ সময় তিনি ডলারের বিকল্প হিসেবে অন্য মুদ্রায় বৈদেশিক বাণিজ্য করা যায় কি না সে বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন। এম এ মান্নান বলেন, ‘এখন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবার সময়। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে রুপী, রুবল, ইউয়ানে লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বরেন্দ্র এলাকায় পানি সংরক্ষণসহ ছয় প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে এক হাজার ৬২৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৮৭৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

এমএ মান্নান বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সঙ্কটের কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। এজন্য পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে-সোনাপুর-কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জ (বসুরহাট-দাগনভুইয়া) আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথমানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৭ কোটি টাকা। গল্পামারী-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান ফরেস্ট সড়কের ২৮তম কিলোমিটারে চুনকুড়ি নদীর ওপর চুনকুড়ি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৮ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম, মোংলা ও অন্যান্য পোর্ট হতে কন্টেনারসমূহ অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং প্রতিবেশী দেশে কন্টেনার পরিবহন সহজতর হবে। এর ফলে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্যিক সুবিধাদি সৃষ্টি হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে একনেক সভায় জানানো হয়। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মামুন-আল-রশীদ, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সত্যজিৎ কর্মকার, তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম প্রমুখ।