
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন
দেশে-বিদেশে বাংলাদেশকে নিয়ে নানা রকমের প্রচার ও ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে সেগুলোতে রুখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, যতদিন দায়িত্বে থাকবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের ফেরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ সব কথা বলেন তিনি।
ড. এ কে মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু অল্প দিনে এতসব অর্জন করলেন, আমাদের জাতিকে দিকনির্দেশনা দিলেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম সব ক্ষেত্রে তিনি দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তার দিকনির্দেশনা অনুকরণ করে আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের কার্যক্রম বন্ধে উদ্যোগ নিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা পিছিয়ে যায়। ফলে তিন দশকেও ব্যাংকটি অবসায়ন করা যায়নি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জুবিলী ব্যাংক অবসায়নে ‘অফিসিয়াল লিকুইডিটর’ (অবসায়ক) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরেই অবসায়নে যাবে বঙ্গবন্ধুর তিন খুনীর মালিকানায় থাকা জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড।
জানা যায়, ১৯১৩ সালের ১৫ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার জানিপুরে ‘খোকসা জানিপুর জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৯৮৪ সালের ২৬ জুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা শুরু করে।
প্রথমে স্বর্ণ বন্ধকী ব্যবসা পরিচালনার সীমাবদ্ধতা রেখে মাত্র একটি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স পায়। পরবর্তী সময়ে স্বর্ণ বন্ধকের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটির শিল্প ও চাষীদের সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয় ব্যাংকটিকে। এই ব্যাংকটি ১৯৮৭ সালের ২৬ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে হয় ‘জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’। এটি দেশের অতফসিলি পাঁচটি ব্যাংকের একটি। ১৯৮৮ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পায়।
এ সময় ব্যাংকটির মালিকানায় চলে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত তিন খুনী। ব্যাংকটির শেয়ার কেনেন কর্নেল (অব) খন্দকার আব্দুর রশিদ, কর্নেল (অব) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং মেজর (অব) বজলুল হুদা। এদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান ও বজলুল হুদার মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। কর্নেল (অব) খন্দকার আব্দুর রশিদ এখনও পলাতক।
দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটির এজিএম তথা বার্ষিক সাধারণ সভা না হওয়াসহ ব্যাংকটির অন্যতম শেয়ার এমবিআই মুন্সী নিজেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান দাবি করায় ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো হাইকোর্টে মামলা গড়ায়। ওই মামলায় ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে মামলায় লড়েছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোঃ মুনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, হাইকোর্টের ওই রায়ে ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ও ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আদেশ দেয়া হয়েছিল।
ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নির্বাহী পরিচালক মোঃ শাহ আলমকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসাবে ব্যাংকটির দায়িত্ব দেন। কিন্তু আদালতের দেয়া ছয় মাস সময়ের মধ্যে আদেশটি বাস্তবায়ন না করতে পারায় আদালতের কাছে পুনরায় সময় চেয়ে আবেদন জানানো হয়। এরপর হাইকোর্ট ব্যাংকটির শেয়ার মালিকদের তথ্য চেয়ে সরকারের যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদফতরের (আরজেএসসি) কাছে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা অনুসারে আরজেএসসি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ ব্যাংকিং আইন দ্বারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ধরে বঙ্গবন্ধুর তিন খুনী জুবিলী ব্যাংকের মালিকানায় ছিলেন। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের তথ্য লুকানোরও অভিযোগ ওঠে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট শেয়ার মালিক এমবিআই মুন্সীর আবেদন খারিজ করে ব্যাংকটি অবসায়নের পক্ষে রায় দেন।
আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম জনকণ্ঠকে জানান, ব্যাংকটির মূলধনের বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিধান মানা হয়নি। এ কারণে অবসায়ন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আদেশে আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে ‘দ্য অফিসিয়াল লিক্যুইডিটর’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফারিয়া হককে অতিরিক্ত লিক্যুইডিটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আগামী নবেম্বরের মধ্যে এই ব্যাংকের বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সব কাজ শেষ করবেন তারা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এটা বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল রশিদের ব্যাংক। ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকার এটির লাইসেন্স দিয়েছিল।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কেন এটি বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে সে বিষয়ে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।’