ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার আজ আসছেন

অবস্থান তুলে ধরবে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৭, ১৪ আগস্ট ২০২২

অবস্থান তুলে ধরবে বাংলাদেশ

মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট

চার দিনের সফরে আজ রবিবার ঢাকায় আসবেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটমানবাধিকার পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণেই তার এই সফরজাতিসংঘের কোন মানবাধিকার প্রধানের এটিই হবে প্রথম কোন সরকারী সফরতার সফরকে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে সরকার

জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সদর দফতর এক বার্তায় বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন দেশই মানবাধিকার বিষয়ে একেবারে নিখুঁত নয়প্রতিটি দেশের অভ্যন্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যেমন আছে, তেমনি মানবাধিকার রক্ষায় অনেক পদক্ষেপও নেয়া হয়মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশের বিষয়টি হাই-কমিশনারের সফরে ব্যাখ্যা করা হবেএছাড়া আসন্ন মানবাধিকার কাউন্সিলের নির্বাচনে অংশ নেবে বাংলাদেশ এবং এজন্য বাড়তি কিছু করারও তাগিদ রয়েছে সরকারের

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, প্রথমবারের মতো এবার কোন মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার বাংলাদেশ সফর করছেনআমরা তাকে স্বাগত জানাইএ সফরে আমরাও সুযোগ পাব আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার এবং আমরা কী করেছি সেটি বলারএকদিকে যেমন কী কী হয়নি সেটির অভিযোগ তিনি জানবেন, আবার অন্যদিকে অনেক কিছু হয়েছে সেটিও বলার সুযোগ তৈরি হয়

দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে অনেক ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এর কিছু অভিযোগ খতিয়ে দেখার মতো, আবার অনেকগুলোর কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় নাপত্রিকায় যা প্রকাশ হয়, সেখানে যে সবকিছু বলা হয় সেটাও নয়অনেক সময় হয়তো, অভিযোগকারীর কথা বেশি বলা হয়কিন্তু পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সেটির খবর প্রকাশ হয় না বলেও দাবি করেন তিনি

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অনেক সময় সংবাদপত্রে কোন অভিযোগ প্রকাশ হওয়ার পরে অনুসন্ধান করে তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় নাকিন্তু এটি যেহেতু ছাপা হয়েছে সেটি অভিযোগের তালিকার মধ্যে ঢুকে যায়অনেক এনজিও যেমন অধিকার এমন সব খবর দেয় যেগুলোর বাস্তবে কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ নিয়ে এ ধরনের ভিত্তিহীন কিছু রিপোর্ট হয়েছিল

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে সরকারের বিরুদ্ধেএ বিষয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক যে ইস্যুগুলো আছে যেমন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সেটি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে এবং অভিযোগ আছেসেগুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বা আইন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে; সেখানে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করব যে, কোন আইনই শতভাগ সঠিক নয়

এর বাস্তবায়নের সময়ে অনেক ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটেএজন্য আমরা কী ব্যবস্থা গ্রহণ করছি, সেটি বলা যাবেসব অধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশ শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের কথা যেমন বলা আছে; তেমনি মত প্রকাশের এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথাও বলা হয়েছে

গঠনমূলক আলোচনার প্রত্যাশা সরকার সবার সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করতে চায় এবং এর মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থা তথা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলকর বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে চায়পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সরকারের সংশিষ্ট এজেন্সি, জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা, এনজিও, একাডেমিয়া, সুশীল সমাজ, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যরা এই ধরনের সফরে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারেএর ফলে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে তিনি বিষয়টি সরাসরি শুনতে পাবেন

তিনি বলেন, এর ফলে বাস্তব অবস্থা বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র বা আইন মন্ত্রণালয় নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ পায়এ ধরনের গঠনমূলক আলোচনা যে কোন সমাজ ব্যবস্থা বা রাষ্ট্রের জন্য ভাল একটি বিষয়

মানবাধিকার কাউন্সিল নির্বাচন মানবাধিকার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে প্রায় প্রতিটি কার্য নির্বাহী কমিটিতে বাংলাদেশ সদস্য ছিল২০২৩-২৪ মেয়াদের কার্য নির্বাহী কমিটিতে নির্বাচন করছে বাংলাদেশএ কারণে এই সফরকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকারমাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা মানবাধিকার কাউন্সিলের নির্বাহী সদস্য হওয়ার জন্য প্রার্থিতা দিয়েছি এবং সেইজন্য আমাদের বাড়তি কিছু করার প্রয়োজন আছেআমাদের দিক থেকে সেজন্য আগ্রহ আছে

জেনেভাতে বিভিন্ন র‌্যাপোর্টিয়ার আছে এবং হাই কমিশনার নিজে বিভিন্ন দেশে সফর করে সরেজমিনে মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখেন এবং কোন ধরনের ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিবতিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক সময় তাদের আমন্ত্রণ জানায় অথবা তারা আসার আগ্রহ ব্যক্ত করলে আমরা স্বাগত জানাই

কিন্তু কোভিডের জন্য ওই সফর কিছুদিন বন্ধ ছিলসম্ভবত হাই কমিশনার হিসেবে এটি তার শেষ সফরএরপর মানবাধিকার কাউন্সিলের যে সেশন আছে সেখানে সম্ভবত তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন বলেও জানান

রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন হাই কমিশনার হাই কমিশনার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেনপররাষ্ট্র সচিব বলেন, তিনি কক্সবাজারে যাবেন, সেখানকার সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো দেখবেনরোহিঙ্গা শিবিরে আমাদের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব সবটুকু আমরা করছিতারপরও অনেক অভিযোগ আছে, সেগুলো তিনি দেখবেনতিনি বলেন, জাতিসংঘের র‌্যাপোটিয়ার বা কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না মিয়ানমারআর এ কারণে মিয়ানমারের যে গ্রহণযোগ্যতা... সেটি নিশ্চয় আমরা চাইব না

×