অরক্ষিত মহাসড়ক
একের পর এক মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে গণডাকাতি, দলবদ্ধ ধর্ষণে ভয়ঙ্কর হয়ে পড়েছে সড়ক-মহাসড়ক। যাত্রীবাহী বাসগুলো যেখানে সেখানে থামিয়ে যখন তখন যাত্রী তোলার বিষয়টি এখন মহাসড়ক আতঙ্ক। রাতের মহাসড়ক অনেকটাই হয়ে উঠেছে নিরাপত্তাহীন। হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। আইন মানতে বাধ্য করানোর অভাবে মহাসড়ক এখন অরক্ষিত। টাঙ্গাইলের মধুপুরে ঈগল পরিবহনের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারীকে গণর্ধষণের চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে গাজীপুরের শ্রীপুরে তাকওয়া পরিবহনের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ডাকাতি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, হয়রানির মতো অপরাধী কার্যক্রমের ঘটনা ঘটলেও প্যানিক বাটন বা বিপদ সঙ্কেতের যন্ত্র বসানো, যাত্রী উঠানোর আগে ভিডিও, সিসিটিভি লাগানোর কথা থাকলেও তা পালন করছেন না পরিবহন মালিকরা। পরিবহন মালিক, চালক-হেলপার, হাইওয়ে পুলিশ কেউই তাদের যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন না করার কারণে সড়ক-মহাসড়কে একের পর এক ডাকাতি, ধর্ষণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সড়ক-মহাসড়ক এখন এক আতঙ্কের নাম। যানবাহনে ডাকাতি এখন প্রায় প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর অধিকাংশ ঘটনারই কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। যানবাহনে কয়েক ঘণ্টা ধরে ডাকাতি, ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও হাইওয়ে পুলিশের কোন তৎপরতা দেখা যায় না। গত সাত মাসে অন্তত ২৫টি বড় ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বাসে। আর গত তিন মাসে পুলিশের ৯৯৯-এ যানবাহনে ডাকাতিসহ নানা অঘটনের ঘটনায় কল এসেছে ২৪৮টি।
গত ১৩ বছরে টাঙ্গাইল এলাকায় চলন্ত বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতির সময় দুই নারীকে হত্যা ও চারজনকে ধর্ষণের রেকর্ড আছে পুলিশের খাতায়। ২০০৯ সালে বাস ডাকাতরা টাঙ্গাইলের মহাসড়কে ডাকাতি করতে গিয়ে বাসন্তী মাংসাং নামে এক স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যা করে। ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি এলাকায় ‘বিনিময় পরিবহনে’ বাস ডাকাতরা এক নারীকে ধর্ষণ করে। ২০১৭ সালে ওই মহাসড়কেই বাসে জাকিয়া সুলতানা রুপা নামে এক যাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ওই মহাসড়কে বাসে আরও তিনজন নারী বিভিন্ন সময় বাস ডাকাতদের হাতে ধর্ষণের শিকার হন।
গত ১১ জুন র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে বাসে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে মহাসড়কে দূরপাল্লার বাসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ একটি চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তারা ১১ মে আশুলিয়ায় হানিফ পরিবহন, ২৫ মে রাজশাহীতে ন্যাশনাল ট্রাভেলস এবং ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে স্টার লাইন পরিবহনে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। শুধু তাই নয়, গ্রেফতার হওয়ার পর তারা স্বীকার করে যে গত দেড় বছরে অন্তত ১৫টি ডাকাতি করেছে মহাসড়কের যাত্রীবাহী বাসে। টাঙ্গাইলের মধুপুরে ঈগল পরিবহনের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারীকে গণর্ধষণের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১০ জনকে এবং গাজীপুরের শ্রীপুরে তাকওয়া পরিবহনের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করার পর তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাদের দেয়া জবানবন্দীতে উল্লেখ আছে, ডাকাতদল চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে সৌদিয়া বাসে ডাকাতির সময় বাসচালকের হাতে ও হেলপারের পেটে ছুরিকাঘাত করে। এছাড়া তারা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফাল্গুনি ট্রাভেলস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও কনক পরিবহন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সুরভী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, সিলেট-রাজশাহী মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও রইস পরিবহন, ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে পাবনা এক্সপ্রেস ও সরকার ট্রাভেলস, রাজশাহী-বরিশাল মহাসড়কে সেবা গ্রীনলাইন পরিবহন ও তুহিন পরিবহনে ডাকাতি করেছে বিভিন্ন সময়।
এই চক্রটি কমপক্ষে ১৫ বছর ধরে মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছে। এই ডাকাতির সময় তারা একাধিক ধর্ষণের কথাও স্বীকার করেছে ডাকাত দলের সদস্যরা। তবে হাইওয়ে পুলিশের কাছে মহাসড়কে ডাকাতি বা ধর্ষণের সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে মহাসড়কে বাস ডাকাতি বা ধর্ষণের ঘটনার বেশ কিছু খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নড়ে চড়ে বসে হাইওয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষ।
পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও ভুক্তভোগীরা বলেছেন, টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত অন্তত ৪৫ কিলোমিটার সড়ক এখন যাত্রী ও চালকদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনাঞ্চল হওয়ার কারণে পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই নিমিষেই ডাকাত দলের সদস্যরা গা-ঢাকা দিচ্ছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মধুপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত সড়কে অন্তত ১৮টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
ওই এলাকায় রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে ডাকাতি হচ্ছে। এসব ডাকাতের বাইরে মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন বাহনের যাত্রীরাও বখাটেদের উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছেন। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, মধুপুরসহ বিভিন্ন সড়কে ট্রাকে করে ঘুরতে যাওয়ার সময় বখাটেরা নানাভাবে উত্ত্যক্ত করছে যাত্রী, পথচারীদের। ওই এলাকার স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ১৪ থেকে ২২ বছর বয়সী বখাটে তরুণরা ট্রাকে শামিয়ানা ও উচ্চ শব্দের যন্ত্র লাগিয়ে মহাসড়কে নাচানাচি করে। এরা ট্রাক থেকে প্রাইভেটকারসহ ছোট ছোট গাড়িতে পানি ছুড়ে মারে, এমনকি প্রস্রাবও করে দেয়। সড়কের পাশে কোন নারী বা স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের দেখলে ট্রাক থামিয়ে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে চলে যায়।
পুলিশের চেকপোস্ট বা টহল সক্রিয় থাকলে এই ধরনের অপরাধীরা মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াতে পারত না। শুধু ওই এলাকাতেই নয়, দেশের অন্যান্য মহাসড়কেও প্রায় প্রতিরাতেই অঘটন ঘটছে। যাত্রীবাহী বাস ছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়ি এবং পণ্যবাহী গাড়ি ডাকাতদের কবলে পড়ছে। শুধু চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন ডাকাতদের কবলে পড়ে অন্তত ২৫০ জন জাতীয় জরুরী সেবা ‘৯৯৯’-এ কল করে সাহায্য চেয়েছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কে ফের যাত্রীবাহী বাসে ভয়াবহ ডাকাতি, বাসের ভেতর নারী যাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর ফের আলোচনায় মহাসড়কে নিরাপত্তা ইস্যুটি। গাড়িতে চড়তে গিয়ে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার দুশ্চিন্তার সঙ্গে এখন যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টিও সামনে এসেছে। মহাসড়কে এই যাত্রীদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের। কিন্তু দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে বারবার যাত্রীবাহী গাড়িতে ভয়ঙ্কর সব অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় পুলিশের এই সংস্থার কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
রাতের সড়ক-মহাসড়ক অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে পড়ে। বন্ধ আছে হাইওয়ে পুলিশের চেকপোস্ট। মহাসড়কগুলোতে প্যাট্রলিং (টহল) থাকলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। নৈশকোচ চালক, হেলপার ও সুপারভাইজাররা কাউন্টার ছাড়াই ইচ্ছেমতো যত্রতত্র যাত্রী তোলেন ও নামান। টার্মিনাল থেকে কোচ ছাড়ার আগে যাত্রীদের ভিডিও করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। এতে সড়ক-মহাসড়কে বেড়েছে বাস ডাকাতির ঘটনা। দুর্র্ধর্ষ ডাকাতরা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা চক্কর দিয়ে ডাকাতি করলেও পুলিশ টের পাচ্ছে না। কোন ঘটনায় বাসের নারী যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তারা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। গত কয়েক বছরের বাস ডাকাতির ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘটনায় ডাকাতরা টাঙ্গাইল থেকে উঠেছে বা এই পথকে নিরাপদ ভেবে ডাকাতি করেছে। সর্বশেষ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে ছাড়া ঈগল পরিবহনের বাসে টাঙ্গাইলে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া একটি বাস গত মঙ্গলবার রাতে টাঙ্গাইল অতিক্রম করার পর ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। তারা যাত্রীদের হাত, পা, চোখ বেঁধে তাদের সব লুটে নেয়। এ সময় এক নারী যাত্রী প্রতিবাদ করলে তাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে ডাকাতরা। তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিতে তা-ব চললেও মহাসড়কে কোন বাধার মুখে পড়েনি।
এই ঘটনার রেশ না কাটতেই গাজীপুরের শ্রীপুরের তাকওয়া পরিবহনের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে হাইওয়ে আছে ১১ হাজার ৮০৬ কিলোমিটার। ২০০৫ সাল থেকে মহাসড়কের নিরাপত্তায় কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ। বর্তমানে পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটে ছয়টি অঞ্চলে ৩৬টি থানা ও ৩৭টি ফাঁড়িতে জনবলের সংখ্যা ২ হাজার ৮৬১ জন। পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ হয়ে কাছ করে তারা।
প্রতিটি অঞ্চলের দায়িত্বে একজন করে পুলিশ সুপার, আর হাইওয়ে থানায় আছে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তবে হাইওয়ে পুলিশের জনবল, যানবাহনসহ লজিস্টি সাপোর্টের অভাবে সড়ক-মহাসড়কের শত শত কিলোমিটার বিশাল এলাকার কার্যক্রম যথাযথ পালন করার বিষয়টি এখন ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই-নিধিরাম সর্দারের প্রবাদের ন্যায় অসহায়ের মতো দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হচ্ছে বলে হাইওয়ে পুলিশের দাবি।
হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশে স্থানীয় ও মহাসড়ক মিলিয়ে তাদের প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়কের দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করতে হচ্ছে। এত অল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে তা পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। এর পরও মহাসড়কে যানজট নিরসন ও নিরাপত্তা রক্ষায় নিরন্তরভাবে কার্যক্রম চলছে। অনেক পরিবহনের চালক-হেলপারের লোভ, রাতের যাত্রায় পথ থেকে যাত্রী তোলা এবং নির্দেশনা না মানায় মাঝে মধ্যে মহাসড়কে ডাকাতি হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান বলেছেন, যাত্রী নিরাপত্তার দায়িত্ব বাস মালিক ও শ্রমিকদের। মালিক চাইলে বাসের ভেতরে সিসিটিভি লাগাতে পারেন। কাউন্টার ছাড়া পথে যাত্রী তুললে পুলিশের করার কিছু থাকে না। এ জন্য মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নকে বলা হয়েছে আগেই। পথে যাত্রী তুললে কাউন্টারে ভিডিও করেও লাভ নেই। এ জন্য সবাইকে সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, হাইওয়েতে যাত্রী ও পরিবহনের নিরাপত্তায় পুলিশকে সতর্ক থাকতে সব সময় নির্দেশনা দেয়া থাকে।
হাইওয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, সারাদেশের হাইওয়ের সড়ক-মহাসড়কের এলাকা মাইলের পর মাইল। এসব সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত জনবল, যানবাহন, থানা, সিসিটিভি, লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব আছে।
এসব কারণে সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা করা যাচ্ছে না। তবে সড়ক-মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায়শ: যে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে সেই প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সত্যতা থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, তারা বিভিন্ন ফোরামেই রাতে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বলে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, হাইওয়ে পুলিশের জনবল কম থাকায় বাস মালিকরা সে নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। যেসব এলাকায় ডাকাতি হয়, সেসব এলাকায় চেকপোস্ট জোরদার করলেও এ ধরনের অপরাধ থামানো সম্ভব। তিনি বলেন, এই ডাকাতিতে পরিবহন শ্রমিকদেরও কিছু দায় রয়েছে।
সংগঠন থেকে বারবার চলন্ত পথে যাত্রী তোলা যাবে না এবং বাসের যাত্রীদের ভিডিও করে রাখাসহ নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দেশনা সব পরিবহন মানছে না। না মানলে তো পরিবহন সংশ্নিষ্টরা কিছু করতে পারবে না, এজন্য হাইওয়ে পুলিশকেই এগিয়ে আসতে হবে। পথে চেকপোস্টে যদি বাস থামিয়ে যাত্রীদের তালিকা যাচাই করে বা ভিডিও দেখতে চায়, তাহলেও নির্দেশনা অমান্যকারীরা ধরা পড়বে। এদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিলে অন্যরা ঠিক হয়ে যাবে। হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো গেলে, চেকপোস্টগুলো সক্রিয় হলে এ ধরনের অপরাধ থামানো সম্ভব।
অপরাধ বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, পরিবহন মালিক শ্রমিকরা একজোট হয়ে যাত্রী পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে ও সরকারকে জিম্মি করতে যতটা তৎপর ততটা উদ্যোগী নন যাত্রী নিরাপত্তায়। যেখানে সেখানে যাত্রী তোলা ও নামানো, সরকার ও মানুষকে জিম্মি করায় তারা যতটা একতাবদ্ধ ততটা যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তা দিতে উদ্যোগী নয়। প্রতিদিন এত যে দুর্ঘটনা ঘটছে- এত যে জীবনহানি হচ্ছে, তা সরকারী কর্তৃপক্ষের এতটা গা সওয়া হয়ে গেছে যে সংশ্লিষ্টদের তেমন কোন প্রতিক্রিয়াই হচ্ছে না।
এখন নতুন উপদ্রপের নাম যাত্রী বেশে ডাকাতি ও ধর্ষণ। অনেক বেশি নির্মাণ কাজ হয়েছে সড়কে, কিন্তু সড়ক এখন সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ। সড়ক নৈরাজ্য আর উচ্ছৃঙ্খলতায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে সরকারের নানা সাফল্য। প্রতিদিনই নানা দুর্ঘটনার চিত্র দেখছি। সড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। কত সংসারের স্বপ্ন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে তার খবর কে রাখে। বড় সমস্যা হচ্ছে, সব যানবাহনের শ্রমিক সংগঠন বা মালিক সংঘ কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। সরকারের বা সরকারী দলের সঙ্গে যুক্ত অনেক প্রভাবশালীর নাম শোনা যায়, যারা বাস-ট্রাকের মালিক।
আইন প্রয়োগ যারা করবেন তাদেরও অনেকের বাণিজ্য আছে এই খাতে। ফলে পুলিশ প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে। মহাসড়কে যাত্রী ও পরিবহনের নিরাপত্তায় প্যানিক বাটনের মতো প্রযুক্তির সহায়তা নেয়ার কথা থাকলেও তা পালন করছে না এবং পালনে বাধ্য করাও যাচ্ছে না, তারা শুধু লাভই খুঁজছেন।
প্যানিক বাটনটি ড্রাইভারের হাতের কাছে থাকে, কোন ডাকাতি বা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে ড্রাইভার প্যানিক বাটনে চাপলেই পুলিশের কাছে তথ্য চলে যাবে। কেন প্যানিক বাটনে আগ্রহী নয় পরিবহন মালিক পক্ষ তার কারণ বোঝা যায়। এটি থাকলে রিয়েল টাইম ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সবসময় গাড়ির অবস্থান নিশ্চিত করা যাবে। মালিক ও পুলিশ গাড়িটির রুট ট্র্যাক করতে পারবে। মোবাইল এ্যাপের মাধ্যমে বাসটির সব তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। গাড়িটির মাইলেজ রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
গাড়িটি ওভার স্পিড হলে চালককে সতর্ক করা যাবে। এখানেই পরিবহন মালিক শ্রমিকের আপত্তি। তারা কোন সিস্টেমে আসতে চায় না। যানবাহনের মালিকপক্ষ ও দানবীয় শ্রমিক পক্ষকে পরোয়া না করে শক্ত হাতে আইন মানানোর ব্যবস্থা করা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকেও আইনের আওতায় এনে সকল ধরনের অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করে সড়ক-মহাসড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাটা এখন সময়ের দাবি।