সদরঘাটে
ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছর লঞ্চের কেবিনের টিকেট নিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। টিকেট কালোবাজারির অভিযোগও থাকে বিস্তর। কিন্তু এবার ঈদযাত্রায় লঞ্চের অগ্রিম টিকেট কেনায় আগ্রহ নেই যাত্রীদের। ফলে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বিগত ঈদগুলোর মতো অগ্রিম টিকেট কেনা নিয়ে যাত্রীদের ব্যস্ততার চিরচেনা দৃশ্য এবার নেই।
কারণ পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই চিরচেনা রাজধানী ঢাকার সদরঘাটের ব্যস্ততা অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। বিকেল থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভা-ারিয়া, শরীয়তপুর, মাদারীপুর যাওয়ার জন্য যাত্রীদের যে ভিড় থাকত, সেটা আর নেই। যাত্রীরা এখন এসব অঞ্চলে যাওয়ার জন্য পদ্মা সেতুকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। যার ফলে যাত্রী টানতে কমানো হয়েছে ভাড়া। এ ছাড়া কমেছে লঞ্চের সংখ্যাও। চিরচেনা ব্যস্ত সদরঘাট টার্মিনালের চেহারাটাই যেন বদলে গেছে এ কয়েকদিনে।
একাধিক লঞ্চ মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লঞ্চের যাত্রীরা এবার সড়কপথে ঈদযাত্রা করতে পারেন, এমন আশঙ্কায় এই ঈদে আনুষ্ঠানিকভাবে অগ্রিম টিকেট ছাড়ার অপেক্ষা করেননি তারা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে থেকেই অনেক লঞ্চ অগ্রিম টিকেট দেয়া শুরু করে, বাকিরাও উদ্বোধনের পরে টিকেট দেয়া শুরু করে। আগেভাগে টিকেট ছেড়েও কোন লাভ হয়নি।
বিগত ঈদগুলোতে যখন যাত্রীরা কাউন্টার থেকে কাউন্টার ঘুরতেন অগ্রিম টিকেটের জন্য, কালোবাজারে অধিক মূল্যে বিক্রি হতো টিকেট, এবার সেখানে হাঁকডাক করেও মিলছে না যাত্রী। ফলে লঞ্চ মালিকদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। অবশ্য গার্মেন্টস ছুটি হলে যাত্রীর চাপ তৈরি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি যাত্রী কমেছে কেবিনের যাত্রী। ডেকে বসে আসা যাওয়া যাত্রী তেমন একটা কমেনি। ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-ঝালকাঠি, ঢাকা-ভা-ারিয়া, ঢাকা-বরগুনা, ঢাকা-ভোলা, ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে। এসব রুটের অনেক লঞ্চের ডেকে আগে ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা নেয়া হলেও এখন ২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ছিল আগে ১২০০-১৪০০ টাকা, ডাবল কেবিনের ২২০০-২৪০০ টাকা।
এখন সিঙ্গেলের ভাড়া ৮০০ টাকা এবং ডাবলের ভাড়া ১৬০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এতেও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন লঞ্চের কর্মচারীরা। লঞ্চঘাটে স্থাপিত টিকেট কাউন্টারগুলোর কর্মচারীরা জানান, কিছুদিন আগেও যে পরিমাণ ঘাটে- টিকেট বিক্রি হয়েছে, এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। এখন ঘাটে প্রবেশের জন্য ভিড় নেই।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর কারণে সড়কপথে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ হওয়ায় ২০ শতাংশের মতো লঞ্চ যাত্রী কমেছে। তবে তাতে এ খাতের ব্যবসায় তেমন প্রভাব ফেলবে না।