ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেফতারে পুলিশের রেড এলার্ট

রেহাই নেই জঙ্গীদের

নিয়াজ আহমেদ লাবু

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২ জুলাই ২০২২; আপডেট: ০০:২২, ৩ জুলাই ২০২২

রেহাই নেই জঙ্গীদের

জঙ্গী

জামিনে বেরিয়ে তিন শতাধিক জঙ্গী গা ঢাকা দিয়েছে

ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেয়ারও প্রক্রিয়া শুরু

জামিনে গিয়ে কমপক্ষে তিন শতাধিক জঙ্গী গা-ঢাকা দিয়েছেবিভিন্ন সময়ে জামিনে গিয়ে পলাতক এসব জঙ্গীর সন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক ইউনিটআইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্র জানায়, পলাতক এসব জঙ্গীকে ধরতে পুলিশের ইউনিটগুলো রেড এ্যালার্ট জারি করেছেইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে যে কোন ভাবে তাদের ধরার নির্দেশ দেয়া হয়েছেএমনকি বিশে^র সর্বোচ্চ পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমেও ওইসব জঙ্গীকে শনাক্ত করে সতর্কতা জারি করতে অনুরোধ জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জানায়, পরিচয় গোপন করে তারা দেশের ভেতরেই অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছেএদের বেশিরভাগ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে জঙ্গী তপরতা চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছেআবার কেউ দেশের বাইরেও পালিয়ে গেছে

পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে জঙ্গীর সংখ্যা ৫ হাজার ২৮৯ জনগত ২৭ বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩৪২টি মামলা হয়েছেমূলত ওইসব মামলার আসামি থেকে এই তালিকা করেছে পুলিশযাদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে ৪ হাজার ৯৯৮ জনএসব আসামির মধ্যে জামিনে আছে ২ হাজার ৫১২ ও জেলহাজতে রয়েছে ১ হাজার ৬৯৬ জনপুলিশ সদর দফতরের এক হিসাব থেকে এসব তথ্য জানা গেছে

অভিযোগ রয়েছে, জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গীদের অনেকেই আবার উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছেআবার কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যাচ্ছেসম্প্রতি জামিন নিয়ে আবারও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে একাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছেএ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের উর্ধতন এক কর্মকর্তা জানান, জামিনে থাকা জঙ্গীদের নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেয়ার কথা থাকলেও তারা তা দিচ্ছে নাএই জন্য তাদের ধরতে পুলিশের সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছেতাদের ধরতে অনেকটা ইন্টারপোলের মতোই রেড এ্যালার্টইজারি করা হয়েছেতিনি জানান, জামিনপ্রাপ্ত ছাড়াও বাইরে থাকা অন্য জঙ্গীদেরও ধরতে বলা হয়েছেআমরা চেষ্টা  করছি দেশ থেকে জঙ্গী নির্মূল করতেকিন্তু এখনও জঙ্গীরা গোপনে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছেতার পরও আমরা বেশ সতর্ক আছি

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, পলাতক জঙ্গীদের ধরতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিতবে জঙ্গী তপরতা নিয়ন্ত্রণ আছেতার পরও পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছেপ্রতিটি থানা পুলিশ জঙ্গীদের বিষয়ে নজরদারি করছেপাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তপর আছে। 

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরনো জঙ্গীরা প্রায় কয়েক বছর ধরেই লুট, ছিনতাই ও ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ জোগাড় করছেএ সময়ের মধ্যে প্রায় ৭-৮টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকাও লুট করেছেএমনকি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারাএসব ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েক জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হলেও জামিনে বেরিয়ে আবারও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছেতাদের নেটওয়ার্ক ময়মনসিংহ-জামালপুর উত্তরবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিস্তৃত রয়েছেকরোনাকালেও অনলাইনে তারা সদস্য সংগ্রহ, বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে গেছেতারা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নতুন কর্মী সংগ্রহ, মোটিভেশন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতে অনলাইন ব্যবহার করেছেসম্প্রতি বোমার সরঞ্জাম কেনে বান্দরবানে গভীর পাহাড়ে অঞ্চলে জঙ্গী ট্রেনিং করেছে কমপক্ষে শতাধিক তরুণসংগঠনকে বিস্তৃত করতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেছে নব্য জেএমবি সংগঠনের নেতাকর্মীরাসম্প্রতি সিটিটিসি ও র‌্যাবের হাতে অন্তত ২০ জঙ্গী গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর কাহিনীকিভাবে জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা করার নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেতারা আগের রূপে ফিরে আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেদেশে প্রথম প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গী জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা নামে এক তরুণী জঙ্গী পুলিশের হাতে ধরা পড়েতা ছাড়া র‌্যাবের হাতে ময়মনসিংহে চার জঙ্গী ও ঢাকার বসিলার জঙ্গী আস্তানা থেকে শীর্ষ জঙ্গী এমদাদুল হককে গ্রেফতারের পরই নড়েচড়ে বসেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জনকণ্ঠকে জানান, সম্প্রতি যেসব জঙ্গী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়েছে তাদের আমরা গ্রেফতার করেছিআরও বেশ কয়েক জঙ্গী র‌্যাবের নজরদারির মধ্যে রয়েছেতাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনতে পারব বলে আশা করছিএই মুহূর্তে র‌্যাবের গোয়েন্দা তথ্যমতে, জঙ্গীদের আক্রমণাত্মক হওয়ার সামর্থ্য নেইতিনি জানান, র‌্যাব বহুমুখী কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে জঙ্গীবাদ দমন কার্যক্রমে কাজ করছেযখনই জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে, তখনই গ্রেফতার করা হচ্ছেশুধু অভিযান নয়, জঙ্গীবাদবিরোধী জনমত গড়তে র‌্যাব ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেঅন্যদিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি জঙ্গীদের অর্থের উস এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রাপ্তি বন্ধ করতেও র‌্যাবের কার্যক্রম চলমান রয়েছে

তিনি জানান, গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসিলার জঙ্গী আস্তানা থেকে দুর্ধর্ষ জঙ্গী জেএমবি শীর্ষ নেতা এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টারকে গ্রেফতার করে র‌্যাব২০০৩ সালে জেএমবির সাবেক শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের বায়াত গ্রহণ করে সেবসিলায় জঙ্গী আস্তানাও গড়ে তোলে উজ্জ্বলজঙ্গীরা লাইম লাইটে আসার চেষ্টা করলেও কাজ হবে নাআত্মগোপনে থাকা জঙ্গিদের ধরতে র‌্যাবের একাধিক টিম কাজ করছে। 

জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) একটি গাড়িতে পেট্রোল বোমা মারতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে দেলোয়ার নামে এক জঙ্গীবাংলাদেশে হামলা করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার টার্গেট ছিল তারতাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটসিটিটিসির উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, দেলোয়ার সেলফ রেডিকালাইজডকিছু দিন জাপান ছিলতার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরতার কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছেতার কাছ থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়ব্যাগের ভেতরে এক লিটারের বেশি তরল পদার্থ ও দুটি লোহার তৈরি ছুরি ছিলএই বিষয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেলোয়ার ঠা-া মাথার জঙ্গীগুলশানে এআইইউবির একটি মাইক্রোবাসে বোমা মারার চেষ্টা করেছিলপথচারীর সহায়তায় তাকে ধরা সম্ভব হয়েছেশিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্টাফদের ওপর বড় ধরনের হামলা চালিয়ে প্রাণহানি ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ছক ছিল তারঅনলাইনে উগ্রপন্থী বিভিন্ন অডিও-ভিডিও দেখত দেলোয়ারকয়েক সহযোগীর নামও বলেছে দেলোয়ারতাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সাল থেকে গত বছরের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত জঙ্গী মামলার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ১৩৪২টি জঙ্গী মামলার মধ্যে পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে ১ হাজার ২৬টিচূড়ান্ত প্রতিবেদন বা ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে ৪৩টিরতদন্তাধীন মামলা আছে ২৭৩টিযেসব মামলার অভিযোগপত্র হয়েছে সেগুলোতে ৪ হাজার ৬৩৮ জনকে আসামি করা হয়েছেআসামিদের মধ্যে বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে ৫১ জনকেবিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছে ৫২৮ জনকেখালাসপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৫৯৭ জনবিগত ২৭ বছরের জঙ্গী মামলাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ২০০৫ সালে ২০১টি মামলা হয়েছেএরপর সর্বাধিক ১৮৪টি মামলা হয়েছে ২০১৬ সালেএ ছাড়া ২০১৭ সালে ১২২টি ও ২০১৮ সালে মামলা হয়েছে ১০৩টিচলতি বছর জঙ্গী মামলা হয়েছে ৬৯টিচলতি বছর ৬৯ মামলায় মোট আসামি সংখ্যা ১৯৩ জনযাদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে ১৩৫ জনচলতি বছর গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে জামিনে আছে ১ জন এবং জেলা হাজতে ১২৪ জন ও পলাতক আছেন ৪৬ জন

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জনকণ্ঠকে জানান, র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার জঙ্গী গ্রেফতার করেছেশুধু হলি আর্টিজান হামলার পরে এখন পর্যন্ত ১৬শর বেশি জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছেএর মধ্যে ৮৬৪ জন জেএমবি সদস্য, ৪০৬ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য, আল্লাহর দলের ২০১ জন, হিযবুত তাহ্্রীরের ৮৮ জন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৮৬ ও হুজির ৩০ সদস্য রয়েছেএ সময় তাদের কাছ থেকে দেশী-বিদেশী ৬৫টি অস্ত্র, ২৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ, ১০২টি গ্রেনেড ও ককটেল, ৮০টি ডেটোনেটর ও সাড়ে ১৬ কেজি বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক জব্দ করা হয়

সারাদেশে জঙ্গীবাদ দমনে সফল পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)এটিইউয়ের পুলিশ সুপার (মিডিয়া এ্যান্ড এ্যাওয়ারনেস) মোহাম্মদ আসলাম খান জনকণ্ঠকে জানান, জঙ্গীরা যাতে জামিনে বের হতে না পারে সে জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছেতিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া সুন্দলীবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি ভয়ঙ্কর জঙ্গী মোঃ মেহেদী ওরফে মেহেদী হাসান (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)তার বাড়ি লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধায়পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, হলি আর্টিজান হামলার পর ১০৮ অভিযানে ১৭৩ জঙ্গী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট২০১৯ সালে ২৭ জন, ২০২০ সালে ৬৩ জন, ২০২১ সালে ৫৬ জন এবং চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ২৭ জঙ্গী১৭৩ জঙ্গীর মধ্যে জেএমবির ১৪, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৪৮, আল্লাহর দলের ৩১, হিযবুত তাহ্রীরের ২৫, আনসার আল ইসলাম ২৪, অনলাইন প্রতারক ১১, হেফাজতে ইসলাম ৪ ও অন্যান্য ৫ জন

জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গীরা কতটা নজরদারিতে বাংলাদেশে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট ও আল নুসরা ফ্রন্টের হয়ে সদস্য সংগ্রহের কাজ করছিল বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন রহমান ইবনে হামদানওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কমলাপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশতিন বছর পর ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে সে গা-ঢাকা দেয়পরে পুলিশের চোখ ফাঁকি  দিয়ে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়সেখানে সে বাংলাদেশ-ভারতের জঙ্গীদের সংগঠিত করছিলকিন্তু ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হয়সেখানে কিছুদিন কারাভোগের পর সামিউন জামিনে বেরিয়ে পালিয়ে যায়এ নিয়ে সে সময় ঢাকায় তোলপাড় শুরু হয়সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শুধু সামিউন নয়বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের শীর্ষ অনেক নেতা ও সাধারণ সদস্য জামিনে বেরিয়ে ফের জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছেএ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছেঅপরাধ বিশ্লেষকরা জানান, আদালত থেকে জঙ্গীরা একে একে জামিনে বেরিয়ে গা-ঢাকা দিচ্ছেতা নিয়ে কোন নজরদারি নেইজঙ্গীরা জামিন পেলে কারাগার থেকে বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে জানিয়ে দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে নাএ নিয়ে তদন্ত  হওয়া দরকারজামিনের ক্ষেত্রে পুলিশের নজরদারি নেইগোঁজামিল করে মামলা দেয়া হয়কোন অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার দিয়ে মামলা করা হয় নাএ জন্য জঙ্গীরা জামিন পাচ্ছেজামিন থেকে বেরিয়ে আবার তারা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছেএতে প্রশ্ন থেকে যায়, জঙ্গীদের নজরদারিতে গাফিলতি রয়েছেতা তদন্ত করা দরকারতা না হলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবেআইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্র জানায়, শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গীরা জামিনে বের হলে কারা কর্তৃপক্ষ সাধারণত সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বা পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যদের জানিয়ে থাকেএরপর জামিন পাওয়া জঙ্গী সদস্যের ওপর নজরদারি করা হয়তবে সব জঙ্গীর ক্ষেত্রে এটি করা হয় নাসাধারণত শীর্ষ জঙ্গীদের ক্ষেত্রে নজরদারি করা হয়

জঙ্গীবাদ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন এমন বিশ্লেষকরা জানান, জামিনে থাকা জঙ্গীদের নিয়মিত নজরদারির কথা বলা হলেও তা আসলে অপ্রতুলআমরা মাঝে মধ্যেই দেখতে পাচ্ছি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতেই এমন জঙ্গী সদস্য গ্রেফতার হচ্ছে, যারা আগেও গ্রেফতার হয়ে জেলখানায় ছিলজামিনে বের হয়ে এসে আবারও জঙ্গীবাদে জড়িয়েছেনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশের কর্মকর্তা জানান, জামিনে থাকা জঙ্গীদের শতভাগ নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে নাবিশেষ করে যারা একটু নেতা টাইপের, তাদের নজরদারি করা হচ্ছে ঠিকইকিন্তু ছোটখাটো বা সদস্য পর্যায়ের ব্যক্তিদের নজরদারি করা যায় নাজঙ্গীবাদ প্রতিরোধে গঠিত বিশেষায়িত ইউনিটগুলোর এত জনবল নেই

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কয়েক কর্মকর্তা জানান, ঢাকার কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট জঙ্গীবাদ দমনে সফল হলেও তাদের অধিক্ষেত্র হলো রাজধানী ঢাকার মধ্যেঢাকার বাইরে অপারেশন করতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ বা পুলিশ সদর দফতরের অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছেআর সারাদেশের জঙ্গীবাদ দমনে ২০১৮ সালে এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট গঠন করা হলেও এখনও জনবল সঙ্কটের কারণে তারা প্রত্যেক জেলায় কার্যক্রম চালাতে পারছে নাঢাকা থেকে টিম পাঠিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে

জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে গঠিত ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, আমরা জামিনে বের হয়ে আসা শীর্ষ জঙ্গীদের নজরদারি করিতারা কেউ পুনরায় জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে কিনা, তা নজরদারি করা হয়এ ছাড়া তারা জামিনে বের হয়ে এসে কার সঙ্গে যোগাযোগ করছে বা কোথায় যাতায়াত করছে, তাও পর্যবেক্ষণ করা হয়

জঙ্গী নিয়ে কাজ করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ছোটখাটো ও বা আত্মঘাতী কিছু হামলার ঘটনা হলেও জঙ্গীদের সর্ববৃহ হামলা ছিল ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টেওই হামলায় ১৮ বিদেশী নাগরিকসহ মোট ২২ জন নিহত হননিহতের মধ্যে ইতালির ৯ জন ও জাপানের নাগরিক ছিলেন ৭ জনএই মামলায় আদালত সাত জঙ্গীকে মৃত্যুদ- দিয়েছেহামলায় অংশ নেয়া জঙ্গীদের ৫ জন ঘটনার দিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কমান্ডো অভিযান মারা যায়

পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় কারাগারে ডির‌্যাডিকালাইজেশন কর্মসূচী রয়েছেএ ছাড়া পুলিশ, র‌্যাব, সিটিটিসি ও এটিইউ বিভিন্ন সময় ডির‌্যাডিকালাইজেশনে বিভিন্ন কাজ করে থাকেনানামুখী অভিযানে জঙ্গীদের সামর্থ্য নষ্ট করা সম্ভবকিন্তু তাদের আদর্শ থাকে ব্রেনেকারও ভেতর ভুল মতাদর্শ থাকলে সেটা শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করা যাবে নাসেটার জন্য বিভিন্ন মোটিভেশনাল প্রোগ্রামবাস্তবায়ন করা হচ্ছে

×