ভোগান্তির বৃষ্টি
প্রমত্তা পদ্মার ওপর বিশাল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। দেশের টাকায় এমন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তি ও সক্ষমতা বিপুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই স্থাপনাটি নিয়ে বাঙালীর গর্বের শেষ নেই। গত শনিবার সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ গর্বের সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটানো হয়েছে, বলা যায়। উদ্যাপনের আনুষ্ঠানিকতা ছিল ঢাকাতেও। কারণ পদ্মা সেতু ঢাকার সঙ্গে তিন বিভাগের মোট ২১টি জেলাকে যুক্ত করেছে। সেতু চালু হওয়ার পর এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজধানীতে। কর্মসূত্রে ঢাকায় অবস্থান করা অনেকেই উদ্যাপনের অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু পাড়ি দিচ্ছেন। অল্প সময়ের মধ্যে গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দারুণ মুগ্ধ তারা। নানাভাবে সেই মুগ্ধতা প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। সদরঘাটের ভিড়ও ক্রমশ কমছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তারও আগে শেষ হয়েছে ফেরির ভোগান্তি। আর ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সেতুর যে ভূমিকা তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। সব মিলিয়ে রাজধানীবাসীও বেশ উচ্ছ্বসিত। তবে এ উচ্ছ্বাসই শেষ কথা নয়। আছে উদ্বেগও। শিক্ষক খুন এবং লাঞ্ছনার পৃথক দুটি ঘটনায় মারাত্মক উদ্বিগ্ন এখন ঢাকার নাগরিক সমাজ। পদ্মা সেতুর আনন্দঘন আলোচনায় এ উদ্বেগের বিষয়টি কেন আসবে? কারও কারও মনে, হ্যাঁ, এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে। তাদের উদ্দেশ্যে বলি, খুব প্রাসঙ্গিকভাবেই আসবে। প্রাসঙ্গিকতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে নাগরিক সমাজ বলছে, অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন স্পষ্ট। কিন্তু মানুষের মনোজগতের, চিন্তার কোন উন্নতি হচ্ছে না। বরং অনেকে ‘মানুষ’ পরিচয়টি ভুলে যাচ্ছে। গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে কিশোর তরুণদের একটি অংশ। শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় মৌলবাদীদের দ্বারা বিভ্রান্ত হচ্ছে। পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে অবলিলায় অপদস্ত করছে তারা। খুন করতে দ্বিধা করছে না। এ কোন সমাজ? প্রশ্ন তোলা হচ্ছে ঢাকা থেকেও। রাজধানীর শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা বলছেন, অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে সমাজ। পচে গলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শুধু পদ্মা সেতু বা মেট্রোরেল চালু করলে হবে না। টেকসই উন্নয়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ চাই। মানুষের মতো মানুষ এবং মানুষের সমাজ গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
ভোগান্তির বৃষ্টি ॥ বর্ষা এবার ব্যাপক ভোগাচ্ছে। আষাঢ় মাসের শুরুতেই অতি বৃষ্টি। ভারি বর্ষণ। বন্যায় কত মানুষ যে ক্ষতিগ্রস্ত হলো! এ কারণেই হয়তো ঢাকার বৃষ্টি এখন আর ভাল লাগছে না। বৃষ্টি হলেই বিরক্ত হচ্ছে মানুষ। বৃহস্পতিবারের কথাই যদি বলি, এদিন লম্বা সময় ধরে বৃষ্টি হয়েছে। কখনও কম। কখনও বেশি। এ অবস্থায় কাজে বের হওয়া মানুষজনকে বেশ দুর্ভোগে পড়তে হয়। কেউ কাক ভেজা হয়েছেন। কেউ ভিজে একাকার। আবার একটু সতর্ক যারা তারা ছাতা হাতে নিয়েই বের হয়েছিলেন। শ্যামলী এলাকার একটি রাস্তায় লক্ষ্য করে দেখা যায়, কর্মজীবীদের অনেকেই মাথার ওপর ছাতা ধরে পথ হাঁটছিলেন। একজনের সঙ্গে কথাও হলো। তিনি বলছিলেন, এখন সামান্য বৃষ্টিতেই ঠাণ্ডা লেগে যাচ্ছে। জ্বর চলে আসছে গায়ে। এ কারণে বৃষ্টিতে একদমই ভিজতে চাই না। বন্যা আক্রান্ত মানুষের কষ্ট দেখে বৃষ্টির প্রতি এবার আর প্রেম দেখাতে পারছেন না বলেও জানান তিনি!
মশা মারতে ড্রোন ॥ মশা মারতে কামান দাগানোর কথা তো খুব প্রচলিত। তবে এবার কামান নয়, ড্রোন ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ড্রোনের সাহায্যে ঢাকার উত্তর অংশে মশার উৎস খোঁজা হচ্ছে। খোঁজাখুঁজির মধ্যেই বৃহস্পতিবার উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে এ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। ফলে বিষয়টি প্রচারে আসে। জানা যাচ্ছে, ড্রোনের মাধ্যমে আগামীকাল শনিবার থেকে ১০ দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান চালাবে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এদিন শুরু হয়ে ১১ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা উত্তরের আওতাধীন প্রতিটি বাসাবাড়িতে কার্যক্রম চালানো হবে। ড্রোন থেকে ছবি ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব বাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে একটি তথ্যভা-ার তৈরি করবে সিটি কর্পোরেশন। এসব তথ্য মশক নিধন কার্যক্রমে বিশেষ কাজে আসবে বলে মনে করছেন মেয়র আতিক। বাস্তবে কী হবে তা হয়তো ভবিষ্যত বলবে। তবে আতিকুল ইসলাম নানা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিয়মিত যান। যাচ্ছেন। তার এমন চেষ্টার প্রশংসা করতে হবে। না করলেই নয়।