
সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ কোভিড-১৯ এর কারণে প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর মহাস্থানগড়ে প্রতœখনন শুরু হয়েছে। এবারের খনন হচ্ছে বৈরাগীর ভিটায়। প্রতœনক্সায় খুঁড়ে মাটির গভীর যাওয়া হবে। বুধবার সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খনন কাজ শুরু হয়। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান অধিদফতরের অর্থায়নে এবারের খনন কাজ শুরু হয়েছে। খনন চলবে এক মাস। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত ইতিহাসের প্রতœ নিদর্শন পাওয়া সাপেক্ষে খননের সময় বাড়তে পারে। মহাস্থনগড়ের পুরাকীর্তি খুঁজে পাওয়ার পর গবেষণা করে প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরাই খননের মূল উদ্দেশ্য। প্রতœ সম্পদ সংরক্ষণের পর জাদুঘরে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। খনন কাজে আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানাকে সহযোগিতা করছেন মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টডিয়ান রাজিয়া সুলতানা, প্রধান নক্সাঅঙ্কনকারী আফজাল হোসেন, আলকচিত্রী আবুল কালাম আজাদ, সার্ভেয়ার মুরশীদ কামাল ভূঁইয়া।
মহাস্থানগড়ের বৈরাগীর ভিটায় প্রথম খনন কাজ শুরু হয় ১৯৩৪ সালে। ভারতীয় প্রতœতাত্ত্বিক কে এন দিক্ষিতের নেতৃত্বে দুবছর খনন কাজ চলে। এরপর ১৯৭৩ সালে খনন শুরু হয়। তারপর ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ-ফ্রান্সের প্রতœতাত্ত্বিকগণ পুনরায় খনন কাজ শুরু করেন। খননের জন্য ২৫ বছরের চুক্তি হয়। পরে এই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। বাংলাদেশ-ফ্রান্স চুক্তি ছাড়াও প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর নিজের অর্থায়নেও খনন কাজ চালাচ্ছে।
গত ক’বছরে মহাস্থানগড়ে বহু প্রতœ নিদর্শন মিলেছে। আটটি কূপ, দুর্গ নগরীর বড় ফটক, মন্দির এ্যাংকর, প্রাচীন মৃৎপাত্র, মটকাসহ গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। এর আগে মহাস্থানগড়ের উত্তর পশ্চিমে ভাসু বিহারের খনন কাজে অনেকটা টিলার মতো ৪টি স্তূপের সন্ধান মেলে। যা বৌদ্ধদের নিদর্শন। এর তিনটি কিছুটা ভাল। বাকিটি ধ্বংস অবস্থায়। প্রতœতত্ত্ববিদদের ধারণা, পাল আমলের মধ্যভাগে এই স্তূপ নির্মিত। সম্রাট অশোক গৌতম বুদ্ধের পদচিহ্ন পেয়ে তা সংরক্ষণ করেন। সেখানেই নির্মাণ করেন বৌদ্ধ মন্দির। এর চারধারে খনন কাজ করেছে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর।
ভাসু বিহারে কয়েক দফায় খনন কাজে দুটি বৌদ্ধ বিহার ও উত্তরমুখী একটি বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধান মেলে। ভাসু বিহারের প্রতœ নিদর্শন অনেকটাই আলাদা। এর আগে মহাস্থানগড়ের খননকাজে মিলেছে আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের বিরল সাক্ষী। এর মধ্যে আছে ক্রশাকৃতির মন্দির। পোড়ামাটির তৈরি সিলমোহর। টেরাকোটার ইটফলক। ব্রোঞ্জের টুকরা। পদ্মফুল জাতীয় মাটির নক্সা। পোড়ামাটির বুদ্ধের মূর্তি। অনেক মৃৎপাত্র। মাঝারি আকারের দুটি বৌদ্ধ মন্দির, অর্ধ ক্রশাকৃতির বৌদ্ধ মন্দির, ব্রোঞ্জ মূর্তি, উৎকীর্ণ লিপিযুক্ত পোড়ামাটি, পোড়ামাটির ফলক চিহ্ন, অলংকৃত ইট, প্রস্তর গুটিকা পাওয়া যায়।
আঞ্চলিক পরিচালনক নাহিদ সুলতানা জানান বিলুপ্ত সভ্যতা জানিয়ে দেয় বঙ্গীয় ব-দ্বীপ কতটা সমৃদ্ধ। মহাস্থানগড়কে ঘিরে অনেক বড় এলাকা প্রাচীন ইতিহাসের বিশাল খনি। যেখানে আড়াই হাজার বছরেরও বেশি সময়ের অন্তত ১৬টি সভ্যতার চিহ্ন লুকিয়ে আছে মাটির নিচে। প্রাচীন এই সভ্যতার বর্ণিল ইতিহাস প্রতি বছর খনন কাজে উদঘাটিত হচ্ছে। যা লিপিবদ্ধ করছেন প্রতœইতিহাসবিদ।