
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজার জামে মসজিদের আঙিনায় দেখা যায়,এক ব্যতিক্রমি এই উদ্যোগ৷শিশু থেকে তরুন,বয়স্ক থেকে বৃদ্ধ,কেউ পথে আশ্রয় নেওয়া মানুষ,কেউ বা এতিম, অসহায়,ভিক্ষুক সবার পেলেটেই মিলছে এক বেলার খাবার৷ প্রতি শুক্রবার উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজার জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ে বের হলেই এদৃশ্যটি সবার নজর কারবে৷
শুক্রবার(২৩ মে)সরেজমিনে গিয়ে দুপুরে জম্মার নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়,যা দেখে শুধু চোখেরী নয় মেলে মনের এ তৃপ্তি৷ যখন যা ভাগ্য মিলে তা দিয়ে খেয়েই তখন পেট ভরে মনের শান্তির তৃপ্তি প্রকাশিত হয়,অসহায় মানুষ গুলোর চোখ মুখে৷ কথা হয় পথ শিশু কাইয়ুমের সাথে৷সে জানায় আমি এখানে অনেক আগে থেকেই আসি এবং জম্মার নামাজের পর এখানে খাবার খাই,খাবারটা খুবই ভাল লাগে৷
ভিক্ষুক বিউটি আক্তার বলেন,পরিবারের ছেলে সন্তান স্বামী নাই, দুই মেয়ে নিয়ে কষ্টে চালান সংসার। ভাই আত্মীয়-স্বজন কেউ তার খবর রাখেন না।শুক্রবার ভিক্ষা ভিত্তি করে টাকা যা উঠাই আর নামাজের পর এখানে খেতে আসি যখন যা আছে মাংস হলে মাংস ডিম হলে ডিম বা সবজি হলে সবজি,মাছ হলে মাছ দিয়েই ওনারা যেটা করে সেটা দিয়েই আমরা দুপুরে একবেলা খাই৷
হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দি গ্রামের প্রতিবন্ধী পারভীন আক্তার এবারই প্রথম এসেছেন এখানে। দশ বছর বয়সী মেয়ে সুরভীরকে সাথে করে হুইল চেয়ারে ভিক্ষা করার সময়, সাথের মহিলাদের কাছে শুনেছেন এইখানে দুপুরে ভালো খাওয়া পাওয়া যায়। পারভীন বলেন, মিষ্টান্ন, ডাল, মুরগী সবই খেয়েছি। আমার মাইয়াও খাইছে। খানা ভালো হইছে।
চান্দিনার মহিচাইল এলাকার শাহিনুরের একই অবস্থা। প্রতি শুক্রবার গৌরীপুর বাজারে ভিক্ষা করে তিনশো থেকে চারশো টাকা পান যাওয়া সময় এইখানে একবেলা খাবার খেয়ে যান তিনি৷
এই সুন্দর উদ্যোগটি যাত্রা শুরু হয়েছিল মসজিদ কমিটির মাধ্যমে৷ গত আড়াই বছর আগেই কমিটির প্রথম সাঁড়ির তিনজনের প্রবল ইচ্ছা শক্তি ঐক্যের মনোভাবে প্রাথমিক অবস্থায় নিজেরাই শুরু করেছেন এমন আয়োজন৷পরবর্তীতে প্রতিবার কেউ না কেউ এগিয়ে আসছে এমন উদ্যোগে৷
প্রতি শুক্রবারে ৩০০ মানুষের জন্য মুরগির মাংস দিয়ে খাবারের আয়োজনে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকার মত, সাথে ডাল ও সব্জির ব্যবস্থাও থাকে। গরুর, মাংস, ডাল, এবং সবজি ও মিষ্টান্ন তে খরচ ৩০ হাজার টাকার মত।
আয়োজনটির উদ্যোক্তা বাহার উদ্দিন ভুইয়া বলেন, কোন অনুষ্ঠান হলে সব জায়গায় বড় লোকদের দাওয়াত দেয়, কিন্তু গরিব অসহায়দের কেউ দাওয়াত দেয় না। তাই তাদের কথা মাথায় রেখেই আমরা এ আয়োজন শুরু করেছি। এখন অনেকেই আসে, বাবা-মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী এবং অসহায় গরিবদের খাওয়ানোর ইচ্ছা হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে।
আরেক উদ্যোক্তা আমান ভূঁইয়া বলেন, মসজিদের কমিটিতে প্রথম যখন আসি তখনই, মসজিদের বাহিরে ভিক্ষুক ও অসহায় মানুষ গুলো দেখে মনে মনে একটা চিন্তা আসছিল, তাদের জন্য যদি একটা কিছু করতে পারতাম তাহলে ভালো লাগতো। তারা তো ৫ টাকা ও ১০ টাকার জন্য বসে থাকে৷তাদের জন্য যদি এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে হয়তো ভাল হবে৷ পরের শুক্রবার থেকেই নিজেদের উদ্যোগে কার্যক্রম শুরু করি। এখন পর্যন্ত কোন শুক্রবার মিস যায়নি।
হালিম ভুইয়া বলেন, আমরা প্রতি সাপ্তাহিক এই আয়োজনের কথা মাথায় রেখে প্রস্তুত থাকি। তখন যদি কেউ এগিয়ে আসে তাদের মাধ্যমেই ব্যবস্থা করি। যদি কাউকে না পাওয়া যায় তবে আমি চাউলের ব্যবস্থা করি, আমান ভাই তরকারির ও বাহার ভাই মাংসের ব্যবস্থা করে। এভাবে কখনো কখনো আমরা তিনজনের সমন্বয়েই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
মসজিদের ইমাম মাওলানা নেছার উদ্দিন বলেন, দরিদ্ররা সব জায়গাতেই বঞ্চিত হয়। আমরা তাদের কথা চিন্তা করেই কার্যক্রমটি পরিচালনা করছি। অনেকেই আমাদের আর্থিকভাবে, শ্রম দিয়ে, সহযোগিতা করে থাকে। আবার কেউ পরামর্শ দিয়েও সহযোগিতা করে থাকে। সবার সমন্বয়েই সাপ্তাহিক একবেলা খাবারের ব্যবস্থা হয়।
দাউদকান্দির গৌরীপুর পশ্চিম বাজার জামে মসজিদের উদ্যোগটি এই অঞ্চলেই নয় প্রতিটি মসজিদ কিংবা পাড়া মহল্লায় অনুপ্রেরনা হিসেবে ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে এমনটাই প্রত্যাশা এই এলাকার আয়োজকদের৷
নোভা