ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রকাশক সমিতির আয়োজনে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

 প্রকাশক সমিতির আয়োজনে কৃতী  শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা জানাল বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। এই প্রথমবারের মতো সমিতির সদস্যদের সন্তানদের জন্য এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে সোমবার বিকেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম. খালিদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, লেখক আনিসুল হক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। সম্মানিত অতিথি ছিলেন, শিক্ষাবিদ ড. মুনতাসীর মামুন। সভাপতিত্ব করেন, সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, এখানে যারা বেধাবী আছে কোন এক সময়ে তারা নোবেল পেতে পারে এ কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এটা অসম্ভব কিছু না। আমাদের প্রত্যেকের এ বিষয়ে তাদের উৎসাহ ও সহযোগিতা করা উচিত। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি শিক্ষা সেক্টরটাকে কিভাবে আরও সমৃদ্ধ করা যায়। যারা আজ সংবর্ধিত হয়েছে তাদের অভিনন্দন জানাই, তাদের সেই গর্বিত পিতা মাতার প্রতিও আমার অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’। পরে সূচনা বক্তব্য রাখেন, সমিতির সাংগঠনিক পরিচালক হাসান জায়েদী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সদস্যদের সন্তানদের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এ সমিতি একটি সামাজিক দায়বদ্ধ সংগঠন। এই বোধ থেকে আমরা চেষ্টা করি সদস্যদের পারস্পরিক সহযোগিতা, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রেখে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে। আমরা বিশ্বাস করি সংগঠনও একটি পরিবার। সঙ্গত কারণেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পারিবারিক যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্কের বন্ধন অটুট রাখা একটি দায়িত্ব। এই লক্ষ্যেই এই আয়োজন। আজকের সংবর্ধিত শিক্ষার্থীবৃন্দ এটাকে আগামীর অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করবে এটাই প্রত্যাশা। আমরা সমিতির প্রতিটি সদস্য কর্মে ও চিন্তায় পরস্পরের সঙ্গে যোগসূত্র গড়তে চাই। আজকের আয়োজন সেই লক্ষ্যেই ধাবিত। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক মনিরুল হক। তিনি বলেন, আজকের এই আয়োজনে যারা উপস্থিত হয়েছেন সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, আজ এখানে যে ১১ জন কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনায় এসেছে, তোমরা প্রত্যেকে নিশ্চয়ই ভাল রেজাল্ট করেছ। বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করেছ, তোমরা আমাদেরও মুখ উজ্জ্বল করেছ। তোমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে আজ দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তোমাদের জন্য এসেছেন। এটাকে তোমরা একটা অনুপ্রেরণার জায়গা হিসেবে নিও। তোমাদের জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা হচ্ছে এখন। তোমরা সবাই দেশ ও দেশের মানুষের উপকার করার জন্য কাজ করে যাবে। ঠিকমতো নিজের পড়া করা, এর বাইরে প্রচুর বই পড়বে। এছাড়া প্রচুর সাংস্কৃতিক কাজ করবে। দেশকে ভালবাসবে, দেশের মানুষকে ভালবাসবে তাহলে দেশটা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, শিক্ষায়তনে যে শিক্ষা দেয়া হয় তার প্রেক্ষিতে বছরান্তে যে ফলাফল হয় তা ভাল করার সবারই একটি আকাক্সক্ষা থাকে। তার ভেতর দিয়ে যেমন শিক্ষার পথটি প্রসারিত হয়, সেভাবে জীবনেরও একটি পথ প্রশস্ত হয়। যা মৃত্যু পর্যন্ত বহাল থাকে। আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা যেন বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রেক্ষিতে এবং সর্বজনীনভাবে পৃথিবীর প্রেক্ষিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। নিজের দেশ ও কর্মফলকে নিয়ে গর্ব করুক, সর্বোপরি মাতৃভূমির প্রতি তাদের অহঙ্কার বিস্তারিত হউক সারা পৃথিবীতে। একটি মাত্র উচ্চারণের মধ্যদিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমরা যে যাত্রা শুরু করেছিলাম সে শব্দটি জয়বাংলা। এই বাংলার জয়কে কেন্দ্র করে তারা যেন তাদের ভেতরে নব স্পৃহায় আগামী স্বপ্নকে সাফল্যমন্ডিত করে। আশা করি তারা আমাদের বিফল করবে না। তিনি আগামীতে লেখকদের সন্তানদেরও যেন কৃতী সংবর্ধনা দেয় এই আশা ব্যক্ত করেন সমিতির কাছে। এরপর অতিথিরা কৃতী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করেন। ১১ জন কৃতী শিক্ষার্থীরা হচ্ছে-শতাব্দী দাস, মাসফিয়া যাহীন, অর্না দাস, কে এম রায়ীদ জাকওয়ান, ফারিয়া তাহসিন রহমান, নুসরাত ইসলাম, সাবিহা ইসলাম নিপু, মাহির শাহরিয়ার খান, তাসনুভা পায়েল আনমনা, তাসমিনা পায়েল তনমনা ও ইমরুল কায়েস খান। সংবর্ধিতদের মধ্যে মাসফিয়া যাহীন ও মাহির শাহরিয়ার খান প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমাদের পুরস্কৃত করার জন্য আমরা খুবই খুশি। আমরা যেন বড় হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি। আপনাদের দোয়া ও আশীর্বাদ আমাদের পাথেয় হয়ে থাকবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মুসতাসীর মামুন বলেন, আমাদের সময়ে আমরা কখনও এই ধরনের অনুষ্ঠান দেখিনি। অবশ্য তখন এত কৃতী শিক্ষার্থী ছিল না। অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য এই ধরনের অনুষ্ঠান জরুরী। এতে যারা সংবর্ধনা পাচ্ছে তাদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয়। তারা নতুন কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়। এখনকার মতো বিদ্যাচর্চার এই বিষয়টা আমাদের কাছে কখনও ভয়াবহ মনে হয়নি। স্কুলের লাইব্রেরি থেকে আমাদের শিক্ষকরা প্রতি সপ্তাহে বাধ্য করতেন একটা বই পড়ার জন্য। থেলাধুলা ছিল, সাংস্কৃতিক চর্চা হত। এসব কিছু মিলে আমাদের ছেলেবেলা এবং কৈশোরটা কেটেছে। এখনকার ছেলে মেয়েরা দেখছি সারাক্ষণ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছুটছে। আমরা যদি ক্লাসরুমের বাইরে বাংলাদেশে কি হচ্ছে এটা না জানি, তাহলে আমরা নিজের দেশকে জানব না। আমরা যদি সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অংশ না নেই তাহলে এ দেশের সংস্কৃতি কি তা জানব না। এতে করে আমি ভাল শিক্ষার্থী হব, ভাল রেজাল্ট করব তারপর আমি বিদেশ চলে যাব। তাহলে আমাদের দেশটার হবে কি?
×