ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সারাদেশে আজ থেকে সেবা সপ্তাহ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২০ মার্চ ২০১৮

সারাদেশে আজ থেকে সেবা সপ্তাহ

এম শাহজাহান ॥ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি পাওয়ায় আজ মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে সেবা সপ্তাহ পালন করা হবে। সরকারী বিশেষ সেবা সপ্তাহ পালন কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে-সব মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও বিভাগের সমন্বয়ে নাগরিক সুবিধাগুলো জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে দৃশ্যমান সেবাদান নিশ্চিত করা। এ জন্য সেবা সপ্তাহ পালনে জেলা-উপজেলাকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের অর্জন জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে এই সময়ে। কেন এই অর্জন এবং এতে কি লাভ হলো দেশের-সে সম্পর্কে জনগণকে একটি স্পষ্ট ধারণা দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, স্মরণীয় এ অনন্য অর্জনের জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতিপত্র আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, জাতিসংঘ, যা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের উন্নয়নের ইতিহাসে এটি এক অন্যতম অর্জন। এই অর্জন বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে সারাদেশে আজ ২০ থেকে ২৫ মার্চ উদযাপন করা হবে। এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে সম্প্রতি সচিবদের আধা-সরকারীপত্র (ডিও) দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘের নি¤œ আয় শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে এই শ্রেণীর সদস্য সংখ্যা ২৫ হলেও বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৪৭-এ। এ পর্যন্ত এলডিসি থেকে উত্তরণের সক্ষমতা লাভ করেছে মাত্র পাঁচটি দেশ। ২০১৮ সালে সুপারিশ লাভের সম্ভাব্য তিনটি দেশের অন্যতম বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশই এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ, যেটি তিনটি নির্ণায়ক একসঙ্গে পূরণ করে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করতে সমর্থ্য হয়েছে। যার মধ্যে দুটি পূরণ করলেই এই স্বীকৃতি পাওয়া যায়। দারিদ্র্যে ও দুষ্টচক্র, কর্মহীনতা, দুর্যোগের রক্তচক্ষুকে পদদলিত করে অতুলনীয় এই অর্জন বিশ্ববাসীর কাছে এক বিস্ময়। স্মরণীয় এই অর্জন দেশব্যাপী বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মসূচী ও সেবা নাগরিকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ও কর্মসূচী সফল করতে সচিবদের সহযোগিতা চাওয়া হয় ওই চিঠিতে। জানা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এ উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ছয় দিনের উদযাপন পর্বের মূল অনুষ্ঠান হবে ২২ মার্চ। মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। ওই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের দেয়া স্বীকৃতিপত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীকে এ সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে এনজিও, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সহযোগী, দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিদেরও যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এদিন বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আরেকটি বড় উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর কমপক্ষে ১০ পয়েন্টে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের তারকা ব্যক্তিত্বসহ সাধারণ জনগণকে সমবেত করে শোভাযাত্রা হবে। শোভাযাত্রাগুলো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হবে। সেখানে থাকবে উন্নয়নের লেজার শো ও আতশবাজির বর্ণিল অলোকচ্ছটা। এতে সমবেতরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্বাধীনতার পর দেশের উন্নয়ন ইতিহাসে এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তাই উত্তরণ পর্যায়ের প্রথম পর্বটি স্মরণীয় করে রাখতে চায় সরকার। এ অর্জন উদযাপনে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শোভাযাত্রা, সভা, সেমিনার, ব্যানার, ফেস্টুন, স্মরণিকা প্রকাশ, স্টিকারের মতো প্রচারপত্রের পাশাপাশি ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার চালানো হবে। এছাড়া বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র মোঃ মুসলিম চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশ। এটি একটি বড় অর্জন। এই অর্জন স্মরণীয় করে রাখতে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, নিম্ন মাত্রার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নিম্ন উৎপাদনশীলতা ও বিনিয়োগ, সুশাসনের অভাব, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য রয়েছে এমন দেশগুলোকে ১৯৭১ সাল থেকে এলডিসি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা শুরু করে জাতিসংঘ। ১৯৭১ সালে এলডিসি ছিল ২৫। এখন এলডিসির সংখ্যা ৪৭টি। এলডিসি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি স্বেচ্ছাধীন। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক (ইভিআই) এ তিন শর্তের যেকোন দুটি পূরণ করে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠতে হয়। বাংলাদেশ তিনটি শর্তই একসঙ্গে পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরণ সমসাময়িক উন্নয়ন ইতিহাসের একটি বড় সাফল্য। আগের যে ৫ দেশ এলডিসি থেকে বের হয়েছে তাদের অর্থনীতি ছোট, জনসংখ্যার আকার কম। সেই তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক বেশি শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। রূপকল্প-২১, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ এখন সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পালন করছে। দাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের এসব উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করছেন।
×