ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বার্বির পায়ের ভঙ্গি বদলে দিল বিশ্ব!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:২২, ১৭ মে ২০২৫

বার্বির পায়ের ভঙ্গি বদলে দিল বিশ্ব!

ছবি: সংগৃহীত

৬৫ বছরের মধ্যে বাজারে ছাড়া প্রায় ৩,০০০ বার্বির এক বিরল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হাই হিল পরা রূপগুলো ধীরে ধীরে জায়গা ছেড়ে দিয়েছে ফ্ল্যাট জুতা পরা বার্বিদের কাছে। অফিস সংস্কারের শিথিলতা এবং কর্মক্ষেত্রে সুযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পিভিসি দিয়ে তৈরি এই পুতুলের রূপেও বদল এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তিসঙ্গত ফ্ল্যাট জুতার গ্রহণযোগ্যতা বার্বির পেশাগত জীবনে সক্রিয় অংশগ্রহণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা গবেষকদের এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে যে, “বার্বিল্যান্ড একটি গতিশীল পরিবেশ, যেখানে কর্মসংস্থানের ধরণ ও সামাজিক নীতিমালা ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে।”

অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের পডিয়াট্রিস্টদের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি শুরু হয় গ্রেটা গারউইগের ২০২৩ সালের সিনেমার একটি দৃশ্য দেখে, যেখানে মার্গট রবি অভিনীত বার্বি এক অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যান, যখন তার সবসময় টিপটো ভঙ্গিতে থাকা পা হঠাৎ সমান বা ফ্ল্যাট হয়ে যায়—এবং তার পরই শুরু হয় চিৎকার ও বমি।

প্রফেসর সাইলি উইলিয়ামস, মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পডিয়াট্রিস্ট, বলেন, “ছবির ওই দৃশ্যটি শনিবার রাতে আমাদের পায়ের বিশেষজ্ঞ বন্ধুদের মধ্যে টেক্সটবার্তায় উত্তেজনা তৈরি করে। ছোটবেলায় তো বার্বি সবসময় হাই হিল পরত। আমরা ভাবলাম, আসলেই কি বার্বির পা ফ্ল্যাট হয়েছে? খেলনার পুতুলের কি আসলেই এমন বদল হয়েছে?”

সেই প্রশ্ন থেকেই গবেষণা শুরু। গোনিওমিটার যন্ত্র, ম্যাটেল বার্বির আর্কাইভ এবং শত শত ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা পুতুলের সাহায্যে উইলিয়ামস ও তার সহকর্মীরা ১৯৫৯ থেকে গত জুন পর্যন্ত ২,৭৫০টি বার্বির পায়ের কোণ পরিমাপ করেন।

প্রথম ৩০ বছর, যখন বার্বি একজন ফ্যাশন মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, নাসার নভোচারী নির্বাচনে অংশ নেন এবং আইসক্রিম পার্লারে চাকরি করেন—তখন প্রতিটি পুতুলই প্রায় ৪০ ডিগ্রি কোণে টিপটো ভঙ্গিতে তৈরি হতো।

কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকে ফ্ল্যাট পা-ওয়ালা মডেল আসতে শুরু করে। বার্বি যখন ম্যাকডোনাল্ডসে অর্ডার নেন, জীবাশ্ম খোঁজেন, ভিডিও গেম তৈরি করেন কিংবা কৃষিপণ্যের বাজারে চড়া দামে চিজ বিক্রি করেন—তখন তিনি আরও বেশি ব্যবহারিক, ফ্ল্যাট জুতা পরা রূপে আবির্ভূত হন। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি, Plos One জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, নতুন বার্বিদের ৬০ শতাংশেরই পা ছিল মাটিতে পুরোপুরি স্থির।

সাইলি উইলিয়ামস বলেন, “গত ৩০ বছরে কর্মস্থলে নিয়ম-কানুন ও আইন অনেকটাই বদলেছে। যেমন আগের দিনে বিমানসেবিকা কিংবা ব্যাংকের নারী কর্মীদের ইউনিফর্মের অংশ হিসেবেই হাই হিল পরতে হতো।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৯৮৮ সালের Women’s Business Ownership Act পাশ হওয়ার আগপর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা কোনো ব্যবসায়িক ঋণ পেতে পুরুষের সহ-স্বাক্ষর ছাড়া পারতেন না।

এই গবেষণা থেকে কোনো শিক্ষা নেওয়া উচিত কি না, এমন প্রশ্নে উইলিয়ামস বলেন, “স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উচিত হাই হিল সম্পর্কে কেবল নেতিবাচক বার্তা না ছড়ানো। বরং বার্বির মতো নারীদেরও নিজের প্রয়োজন বুঝে জুতা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।”

ইউনিভার্সিটি অব ব্রাইটনের প্রধান পডিয়াট্রি লেকচারার দাও তুনপ্রাসার্ট বলেন, “একটা সময় ছিল যখন বার্বি সব হতে পারলেও তার গোড়ালি বাঁকত না। এটা যেন নারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কঠোর পোশাকবিধির প্রতীক যেমন হাই হিল পরার বাধ্যবাধকতা।”

তিনি যোগ করেন, “এই গবেষণা অসাধারণভাবে তুলে ধরেছে, কিভাবে এমনকি ফ্যাশন পুতুলও সমাজের পরিবর্তনশীল দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জুতা হোক হিল বা ফ্ল্যাট—নারীদের তা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত, বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।”

ম্যাটেল কোম্পানির এক মুখপাত্র বলেন, “৬৫ বছরের উদ্ভাবনের ইতিহাসে গত এক দশক বার্বি ব্র্যান্ডের জন্য সবচেয়ে সাহসী ডিজাইন পরিবর্তনের সময় ছিল। আমরা সচেতনভাবে পণ্যের এমন পরিবর্তন এনেছি, যাতে প্রতিটি শিশু নিজেকে বার্বির মধ্যেই দেখতে পায়।”

“আমরা সব শিশুদের অনুপ্রাণিত করতে চাই। এজন্য ত্বকের রং, চুলের রং ও টেক্সচার, শারীরিক গঠন এবং অক্ষমতার বৈচিত্র্য তো আছেই, সঙ্গে রয়েছে পায়ের বিভিন্ন ভঙ্গি ও নতুন ধরনের জুতা যা বার্বির সাহসী অগ্রগতিকে সমর্থন করে।”

শহীদ

×