ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

ইতিহাসের সাক্ষী; একটি বাক্স, অনেক গল্প

রিজওয়ান করিম 

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ১৪ মে ২০২৫

ইতিহাসের সাক্ষী; একটি বাক্স, অনেক গল্প

ছবি: জনকণ্ঠ

শহরের ব্যস্ত রাস্তায় হয়তো কেউ আজ আর তাকায় না এই লাল রঙের পুরোনো বাক্সটার দিকে। মরিচা ধরা, ধুলোপড়া, কেউ কেউ মনে করে হয়তো এটা এখন আর কোনো কাজের না। কিন্তু এই নিরব বস্তুটিই একসময় ছিল আবেগ, অপেক্ষা আর যোগাযোগের প্রাণ।

ডাক বাক্স—একটি ছোট্ট কাঠামো, যার ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে যুগের পর যুগের গল্প। ভালোবাসার বার্তা, যুদ্ধের খবর, স্বাধীনতার ডাক, চাকরির আবেদন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি—সবকিছু এই বাক্সের ভেতর দিয়েই পৌঁছেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

একটা সময় ছিল, যখন কোনো প্রিয়জনের কাছ থেকে চিঠি আসবে বলে মানুষ দিনের পর দিন অপেক্ষা করত। পোস্টম্যানের ঘণ্টা শোনামাত্র হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেত। ভালোবাসা, অভিমান, আশার আলো, কিংবা কোনো ভাঙনের বার্তা—সবকিছুই ঢুকত এই বাক্সে। এটা শুধু চিঠি রাখার জায়গা ছিল না, ছিল অনুভূতি রাখার একটি স্থির আশ্রয়।

আজ ইমেইল, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের যুগে সেই চিঠির বাক্স যেন শুধুই অতীত। তবে শহরের কোণে কোণে এখনো কিছু বাক্স দাঁড়িয়ে আছে—নীরব, ধৈর্যশীল, যেন একটি জীবন্ত ইতিহাসের স্মারক। এই বাক্সগুলো দেখলে বোঝা যায়, যোগাযোগের মাধ্যম বদলালেও মানুষের অনুভব, গল্প বলার আকাঙ্ক্ষা ঠিকই রয়ে গেছে।

এই চিঠির বাক্সগুলো শুধু আবেগ নয়, ইতিহাসও বটে। উপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলে যে পোস্টাল ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় আজো কোনো কোনো জায়গায় দেখা যায় ভিক্টোরিয়ান ডিজাইনের বক্স, যার গায়ে খোদাই করা আছে ইংলিশ রাজমুকুট কিংবা কোম্পানি বাহাদুরের ছাপ।

এই পুরোনো ডাক বাক্সগুলো তাই সংরক্ষণের দাবিও রাখে। সংগ্রহশালায় কিংবা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থায়ীভাবে রাখলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে—কীভাবে যুগ বদলেছে, কীভাবে মানুষের যোগাযোগের ইতিহাস ধাপে ধাপে এগিয়েছে।

ডাক বাক্স আমাদের বলে—যত প্রযুক্তিই আসুক, অনুভূতি কখনো পুরোনো হয় না। এই বাক্সের ভেতর আজও যেন জমে আছে কিছু অমীমাংসিত চিঠি, লেখা হয়নি এমন কোনো ভালোবাসার গল্প, কিংবা শুধুই “কেমন আছো?” বলে পাঠানো এক টুকরো মমতা।


শহরের চিঠির বাক্সগুলো যেন আজ সময়ের কাছে এক নীরব আবেদন—“আমাকে ভুলো না, আমি শুধু একটা বাক্স নই, আমি ইতিহাসের এক ছোট্ট অধ্যায়।”

এসইউ

×