নূরজাহান মুরশিদ
১ সেপ্টেম্বর ছিল ২০২৪ বাংলার নারী জাগরণের বিশিষ্ট নেত্রী, রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ ও সাবেক সংসদ সদস্য, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ‘নূরজাহান মুরশিদ’-এর একুশতম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৩ সালের এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন।
আজীবন গণতন্ত্রমনা ও কায়মনোবাক্যে অসাম্প্রদায়িক নূরজাহান মুরশিদ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে তৎকালীন পাকিস্তানে আইয়ুবের সামরিক শাসন বিরোধী রাজনৈতিক অভিযাত্রায়, সংগ্রামে, আন্দোলনে এবং মুক্তিযুদ্ধে সমুপস্থিত ছিলেন সক্রিয়ভাবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে যখন ছিল স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক প্রয়োজন, তখন ভারতের লোক ও রাজ্যসভার যৌথ অধিবেশনে মুজিবনগর সরকারের বিশেষ দূত এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছিলেন, যার ফলে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের স্বীকৃতি এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা ত্বরান্বিত হয়েছিল।
এর জন্য ইয়াহিয়া সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন তিনি; তাঁর সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদ- ঘোষণা করে এবং পরবর্তীতে তাঁকে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে দেওয়া হয়েছিল। বাল্যকালেই তিনি শিক্ষা নিয়েছিলেন উদার ও মুক্তমন নিয়ে জগৎকে দেখতে। তিনি দীক্ষা নিয়েছিলেন অন্দরবাসিনী নারী সমাজকে বেগম রোকেয়া প্রদর্শিত পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং নারী প্রগতির সূচিত ধারাকে আরও বলিষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য করে জনসমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে।
তিনি ১৯৫৪ সালে ‘যুক্তফ্রন্টের’ প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য পদে জয়লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮-৬৯ সালের গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন এবং নির্বাচন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৬৯-৭১ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের পর অনিশ্চিত ও ভীতিকর দিনগুলোতে যে ক’জন সাহসী মানুষ আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেন তিনি তাঁদের অন্যতম। তাঁর ভাবনা, আদর্শ, কর্ম আমাদের জন্য পথের দিশারি হয়ে থাকবে।
রাজনীতি যে সততার সঙ্গে হতে পারে; নারী যে জীবনের সকল ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখতে পারে; ন¤্র, ¯িœগ্ধ ও মিষ্টি ভাষার শক্তি যে সমাজকে সুন্দর করে, মানুষকে কাছে টানে, তাঁরই প্রতীক তিনি। আজ বাংলাদেশে বড্ড প্রয়োজন এই মানুষগুলো, এই উদাহরণগুলো।
উল্লেখ্য বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী শারমিন মুরশিদ তাঁর সুযোগ্য কন্যা।
বিভাস আহমেদ