ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ পাঠক সাবরিনা চৌধুরী

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০০:১৪, ২৬ মে ২০২৩

সংবাদ পাঠক সাবরিনা চৌধুরী

.

উন্নয়নের বিভিন্ন মাত্রায় বাংলাদেশের অভিগমন সত্যিই দৃষ্টিনন্দন এবং চমকপ্রদ। সমাজের সার্বিক গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে সর্বাঙ্গীণ প্রবৃদ্ধি দৃশ্যমান হতে হোঁচট খায়। সঙ্গত কারণে দেশের সমসংখ্যক নারী তাদের এগিয়ে যাওয়ার ধারায় তৎপর এবং মনোযোগীও বটে। পেশার ক্ষেত্রকেও নিত্যনতুন কর্মযোগে ভরিয়ে তুলতে পেছনে এখন আর তাকাতে হয় না। গত শতকের আশির দশক পর্যন্ত ব্যতিক্রমী পেশা সাংবাদিকতায় নারীদের অংশ নেওয়া ছিল একেবারে হাতে গোনার অবস্থায়। নব্বইয়ের দশকে সেখানে যেন জোয়ার নামে। পরবর্তীতে একবিংশ শতাব্দী শুরুই শুধু নয় দ্বিতীয় দশক পার করার সুবর্ণ সময়ে দেশ যেমন ক্রমবর্ধমান ধারায় এগিয়েছে নারীরাও সে মাত্রায় সবধরনের পেশায় সম্পৃক্ত হতে মোটেও আর ভাবেনি। সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ পেশা সাংবাদিকতা। শুধু লেখা কিংবা প্রতিবেদক তৈরিই নয় আরও চমকপ্রদভাবে বেতার, টেলিভিশনে সংবাদ পাঠকের জায়গায় নিজেকে সাবলীল এবং সফলভাবে উপস্থাপন করাও। এখন প্রযুক্তির সংবাদ মাধ্যমগুলো খুললে নজরে এসে যায় নারী সংবাদ পাঠকের সফল উপস্থিতি এবং যথাযথ সংবাদ পরিবেশন করে দর্শক, শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করা। সে রকম এক সুদক্ষ সংবাদ পাঠক গুরুত্বপূর্ণ টিভি চ্যানেল এসএ টিভির সাবরিনা চৌধুরী। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় পরিষ্কার হয় কিভাবে মাধ্যমটিতে নিজেকে সমর্পণ করা। না, তেমন কোনো লড়াই করতে হয়নি। আপন যোগ্যতায় সফলভাবে নিজেকে যুক্ত করা কর্মজীবনের পরম পাওয়া।

এক মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নেওয়া সাবরিনা বড় হয়েছেন সংস্কারমুক্ত এক পারিবারিক আবহে। পিতা মোহাম্মদ নুরুল আবছার চৌধুরী, মাতাÑকাজল চৌধুরীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে সাবরিনা তৃতীয়। তিন বোন আর দুই ভাই। বাবা রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক। মা একজন সুগৃহিণী। দক্ষ হাতে পুরো সংসার  সামলিয়েছেন। বাবা-মা কেউই ছেলেমেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য তৈরি করেননি। বরং মেয়ে হিসেবে কন্যারাই স্বাধীনতা পেয়েছেন বেশি। পুত্রদের শাসন করেছেন আর তিন কন্যা  আদর আহ্লাদে বড় হয়েছেন স্বাধীনচেতা মনোবৃত্তি নিয়ে। সাবরিনার লেখাপড়ার হাতেখড়ি মিরপুরে। যখন সবাই মিরপুরে থাকতেন। পরবর্র্তীতে উত্তরায় বাড়ি করার পর সেখানেই স্থায়ী নিবাস তৈরি হয়। উত্তরখান ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং উত্তরা উইমেন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা ইডেন গার্লস কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন। উত্তীর্ণ হয়ে বাংলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করেন। ছাত্র জীবনেই ভালোবাসায় পড়ে যান ফুফাত ভাইয়ের সঙ্গে।

প্রেম, পরিণতিতে পরিণয়। স্বামী পরিবারের একমাত্র সন্তান। শ্বশুর-শাশুড়ি এখন বেঁচে নেই। নিজেদের মতো করে সংসার গুছিয়ে  জীবনটা এগিয়ে নিচ্ছেন। বিয়ে নিয়ে নিজ পরিবার থেকেও তেমন কোনো আপত্তি আসেনি। তবে স্বামী উপার্জনক্ষম কিংবা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত শুধু কলেমা পড়া হয়েছে। অনুষ্ঠান আরও পরে। সাবরিনার পছন্দসই পেশা ছিল ব্যাংক কর্মকর্তা হওয়ার। স্বামী ব্যাংকার হওয়ার কারণে মত বদলাতে হয়। কারণ কর্মক্ষেত্রে এত বেশি থাকতে হয় যা পারিবারিক অনেক সময় হরণও করে নেয়। সঙ্গতকারণে অন্য পেশার দিকে মনোযোগও দিতে হয়। সেভাবেই সাংবাদিকতার আঙিনায় অভিষেক হওয়া। তবে সংবাদ পাঠক হিসেবে যোগ দিতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক কিছু প্রশিক্ষণও জরুরি হয়ে যায়। যেমন বাচনভঙ্গি, উচ্চারণ, সংবাদ পরিবেশনের নিরিখে শব্দ চয়নের উঠানামা, সময়ে কণ্ঠেরও জাদুকরি কারুকার্য সবই হিসেবের মধ্যে রাখতে হয়। আর সামনে তো বসেই থাকেন দর্শক শ্রোতা তাও নজরে রাখতে হয়। পরিস্থিতি প্রয়োজনের নিরিখে সত্যিই কঠিন এক বলয় যা আবার সহজসাধ্য হতেও সময় লাগে না। ২০১৬ সালে এসএটিভিতে সাংবাদ পাঠক হিসেবে যোগ দেওয়াও পেশাগত জীবনকে পছন্দের জায়গায় বেছে নেওয়া।

প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণও নিতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে। একমাত্র পুত্র সন্তান সেন্ট জোসেফ ইন্টারন্যাশনালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। সামনে সপ্তম শ্রেণিতে প্রবেশ করবে। বয়স ১২ বছর। তবে সংবাদ মাধ্যমের জগত তৈরি করা ছিল সময়ের হিসেবে এক প্রকার সচেতন দায়বদ্ধতা। কারণ সারাদিন সময়ও দিতে হয় না। একটা সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পেশাগত কাজ শেষ হয়ে যাওয়াটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়েছে সন্তান এবং সংসারকে একটা সুস্থ পরিবেশ দেওয়ার সুনিশ্চিত লক্ষ্যমাত্রায়। নারী সাংবাদিকতার জগত নিয়ে কিছু প্রশ্নের অবতারণা করা হয়। উত্তর আসে সাবলীল এবং দ্বিধাহীনভাবে। সাংবাদিকতা একটি ভিন্ন মাত্রার স্পর্শকাতর যোগ্যতম কর্মক্ষেত্র। সেখানে নারী পুরুষের পার্থক্য চোখে পড়ার মতোই নয়। যোগ্যতম বিবেচনায় যে কেউ নিজেকে সফল করতে এগিয়ে আসতে পারেন। এই মুহূর্তে যারা এমন অনন্য পেশার সঙ্গে জড়িত তারা পেশা নিয়ে তৃপ্তই শুধু নন গর্বিতও বটে। ভালো লাগার জায়গা থেকে যে কোনো পোশাকে নিতে পারলে কাজের যেমন মান বাড়ে একইভাবে অংশ নেওয়া ব্যক্তিও সফলকাম হতে দেরি করেন না। সংবাদ পাঠিকা হিসেবে দুটো পুরস্কারও ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে যা পেশাগত জীবনকে নানামাত্রিকে ভরিয়ে তুলেছে।

শুধু পুরস্কার নয়, ভালো কাজ করার স্বীকৃতি যা নিজের পেশার প্রতি আরও দায়বদ্ধ করে তুলে। সাবরিনারও আকাক্সক্ষা সংবাদ পাঠকে আরও গ্রহণযোগ্যতার পর্যায়ে নিয়ে শ্রোতা-দর্শকের আকর্ষণ বাড়ানো। আর নারীরা যে সব ধরনের পেশায় পারদর্শি সেটা প্রমাণ করা ছাড়াও নিজেকে যোগ্যতম স্থানে আনতে পারাটা এক প্রকার সহজাত বোধ। যা সবার মধ্যেই প্রচ্ছন্ন থাকে। সময়ে তা উদ্দীপ্ত হয়ে অনেকের মাঝে ছড়িয়েও পড়ে। তিনি নারী কিংবা পুরুষ যেই হোন না কেন। যে কোনো পেশা নির্বাচনে নারীদেরও সমান তালে যোগ্যতায় এগিয়ে আসতে হবে। পেছনে পড়ে থাকার সুযোগ আর একদম নেই।

 

×