
ছবি: সংগৃহীত
প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুমের পরও কি আপনি ক্লান্ত হয়ে ঘুম থেকে জাগেন? আপনি একা নন। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এমন অভিজ্ঞতা অনেক বেশি সাধারণ। যদিও বিজ্ঞান বলছে নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে কিছুটা বেশি ঘুমান, তবে তবুও তাদের ঘুমের মান তুলনামূলকভাবে খারাপ। কেন এমন হয়? কারণটি শুধু ঘড়ির কাঁটায় লুকিয়ে নেই, বরং এর পেছনে রয়েছে হরমোন, মানসিক স্বাস্থ্য, জীবনযাপন এবং সমাজে নারীর ভূমিকার মতো একাধিক জটিল বিষয়।
ঘুম বেশি, তবুও বিশ্রাম কম
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে প্রায় ২০ মিনিট বেশি ঘুমান। ২০২২ সালে এক বৈশ্বিক গবেষণায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষের ঘুমের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব বয়সী নারীরাই গড়ে পুরুষদের চেয়ে কিছুটা বেশি ঘুমান। ৪০–৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই পার্থক্য ছিল ২৩ থেকে ২৯ মিনিট।
অন্য এক গবেষণায়, যা ‘স্লিপ’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়, দেখা যায় নারীরা পুরুষদের চেয়ে গড়ে ১৯ মিনিট বেশি ঘুমান এবং তাঁরা গভীর ঘুমে (ডিপ স্লিপ) বেশি সময় কাটান—যেখানে নারীদের ক্ষেত্রে এটি রাতের প্রায় ২৩ শতাংশ, সেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে তা মাত্র ১৪ শতাংশ।
তবুও ঘুমের মানে পিছিয়ে নারীরা
আশ্চর্যজনকভাবে, এতোসব পরিসংখ্যান সত্ত্বেও নারীরাই বেশি ঘুমের সমস্যার কথা বলেন। ইনসমনিয়া বা অনিদ্রার সমস্যা নারীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। তাহলে ঘুম বেশি হলেও বিশ্রামবোধ কম কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে দেখতে হবে হরমোনের ওঠানামা, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, মানসিক অবস্থা ও সামাজিক চাপের দিকগুলো। কিশোরী বয়স থেকেই নারীদের ঘুমে পরিবর্তন শুরু হয়, গর্ভাবস্থা ও রজোনিবৃত্তির সময় তা আরও জটিল হয়। হরমোনের ওঠানামার ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। তাছাড়া আয়রনের ঘাটতি ও থাইরয়েডের সমস্যা—যা নারীদের মধ্যে বেশি—তাও ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে।
আর মানসিক দিক থেকে নারীরা ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি এবং ট্রমাজনিত সমস্যার ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। অতিরিক্ত চিন্তা ও উদ্বেগ তাদের ঘুমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
নারীরা পুরুষদের তুলনায় সপ্তাহে গড়ে ৯ ঘণ্টা বেশি অনানুষ্ঠানিক কাজ করেন—যেমন সন্তান পালন, পরিবারের দেখাশোনা কিংবা মানসিক সাপোর্ট দেওয়া। দিনের বেলা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ বা অবসর মেলাও কঠিন হয়ে পড়ে অনেক নারীর জন্য। ফলে পুরো বিশ্রামের ভার এসে পড়ে রাতের ঘুমের ওপর, যা অনেক সময় যথেষ্ট হয় না।
ঘুম নয়, প্রয়োজন ‘বিশ্রামের সুযোগ’
গবেষকরা বলছেন, নারীদের শুধু বেশি ঘুম নয়, বরং প্রয়োজন তাদের ঘুম ও বিশ্রামের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, মানসিক সমর্থন এবং সমাজের কাছ থেকে বাস্তব প্রত্যাশা। কারণ তাঁদের দেহ ও মনের চাহিদা পুরুষদের মতো নয়, বরং আরও সংবেদনশীল ও জটিল।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব