ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

বয়স বা লিঙ্গ নয়, কিডনিতে পাথর এখন সবার জন্য ঝুঁকি

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ১৫ জুলাই ২০২৫

বয়স বা লিঙ্গ নয়, কিডনিতে পাথর এখন সবার জন্য ঝুঁকি

কিডনি স্টোন হলো কঠিন খনিজ পদার্থের গুচ্ছ, যা সাধারণত অদ্রবণীয় ক্যালসিয়াম যৌগ দিয়ে তৈরি হয় এবং কিডনিতে জমে যায়। এদের আকার দানার মতো ছোট থেকে শুরু করে গলফ বলের মতো বড়ও হতে পারে! অনেক সময় এসব পাথর তীব্র ব্যথার কারণ হলেও, বহু ক্ষেত্রেই তা কোনো লক্ষণ ছাড়াই শরীরে রয়ে যায়, এমনকি বছরের পর বছর ধরে।

বর্তমানে বয়স ও লিঙ্গ নির্বিশেষে কিডনিতে পাথর হওয়া বেশ সাধারণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি যন্ত্রণা ও অস্বস্তির অন্যতম উৎস। আসুন জেনে নিই কিডনি স্টোন হওয়ার মূল কারণগুলো এবং কীভাবে আপনি প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে পারেন।

কিডনি স্টোন হওয়ার প্রধান কারণ

১. পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া

শরীরে পানির ঘাটতি কিডনি স্টোনের অন্যতম বড় কারণ। যখন আপনি কম পানি পান করেন, তখন মূত্র ঘন হয়ে যায় এবং এতে খনিজ ও লবণের মাত্রা বেড়ে যায়, যা জমে পাথরে পরিণত হয়।

২. অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া

খাবারে বেশি লবণ ও চিনি গ্রহণ করলে এবং অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন (যেমন: মাংস, ডিম) খেলে কিডনিতে বেশি ক্যালসিয়াম জমা হয়। এর ফলে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

৩. উচ্চ ফ্রুক্টোজ ও চিনিযুক্ত খাবার

উচ্চ ফ্রুক্টোজযুক্ত প্রসেসড খাবার এবং চিনি জাতীয় পণ্যের অতিরিক্ত গ্রহণ কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। বিশেষ করে লাল মাংস ও পোলট্রির সঙ্গে ডিম খাওয়ার ফলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়, যা পাথর গঠনে ভূমিকা রাখে।

৪. পারিবারিক ইতিহাস ও বংশগত কারণ

যদি পরিবারে কারও আগে কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে, তাহলে আপনার এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। যেমন, ‘সিস্টিনিউরিয়া’ নামক একটি বংশগত রোগে অতিরিক্ত অ্যামিনো অ্যাসিড নিঃসরণ হয়, যা পাথরের রূপ নেয়।

৫. স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন

মোটাপ্রায় মানুষদের মূত্রের অ্যাসিডের রাসায়নিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, ফলে সহজে পাথর তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।

৬. বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা

নানান রোগ কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে, যেমন:

  • দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া (যার ফলে পানিশূন্যতা হয়)

  • গাউট বা গেঁটে বাত (যাতে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে)

  • ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI)

  • ক্রোন’স ডিজিজ বা ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD)

৭. কিছু ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট

ডায়ুরেটিক ওষুধ, ক্যালসিয়াম-ভিত্তিক অ্যান্টাসিড, ও কিছু অ্যান্টিবায়োটিক নিয়মিত গ্রহণ করলে কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম কিংবা নির্দিষ্ট কিছু সাপ্লিমেন্টও পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

ছোট কিডনি স্টোনের প্রাথমিক লক্ষণ

১. কোমর বা পাশের দিকে ব্যথা:
কিডনিতে ছোট পাথর থাকলে পিঠ বা কোমরের পাশে হালকা খিঁচুনির মতো ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা কখনো কখনো নিচের দিকে বা তলপেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। একে রেনাল কোলিক বলা হয়।

২. মূত্রের রঙ ও গন্ধের পরিবর্তন:
প্রস্রাবের রঙ গাঢ় বা মেঘলা হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় প্রস্রাবে দুর্গন্ধ দেখা দেয়, এমনকি অল্প রক্তও থাকতে পারে। এটি পাথরের ফলে মূত্রনালিতে ঘর্ষণ বা ক্ষতের লক্ষণ হতে পারে।

৩. প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ:
যখন কিডনি স্টোন মূত্রনালির ভেতর সরতে শুরু করে, তখন প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনুভব হয়। সেই সঙ্গে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ তৈরি হয়, কিন্তু অনেক সময় ঠিকমতো মূত্রত্যাগ হয় না।

৪. বমি ভাব বা মাথাব্যথা:
কিডনি স্টোন যদি ইউরিনারি ট্র্যাক্টে আটকে যায়, তবে বমি ভাব, মাথাব্যথা ও হালকা জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এটি শরীরের চাপ ও ব্যথার প্রতিক্রিয়ায় হতে পারে।

৫. জ্বর বা ঠাণ্ডা লাগা:
যদি কিডনি স্টোনের কারণে মূত্রনালিতে ইনফেকশন হয়, তবে শরীরে জ্বর, কাঁপুনি বা ঠাণ্ডা লাগার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এটি মারাত্মক হলে তা কিডনির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

প্রতিরোধের উপায় ও করণীয়

  • প্রতি দিন অন্তত ২–৩ লিটার পানি পান করুন, লেবুর রস মিশিয়ে ইউরিনের সাইট্রেট বাড়াতে পারেন।

  • লবণ, পশুপ্রোটিন, চিনি কমিয়ে ড্যাশ ডায়েট (DASH) অনুসরণ করুন।

  • প্রসেসড খাবার, ফাস্টফুড ও অক্সালেট–সমৃদ্ধ সবজি নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

  • ক্যালসিয়াম-ভিত্তিক সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ ব্যবহারে চিকিৎসা পরামর্শ নিন।

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, নিয়মিত হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন।

সানজানা

×