
ছবি: সংগৃহীত
অ্যাটাক হওয়ার আগে শরীরে কিছু সূক্ষ্ম সংকেত দেখা যায়, বিশেষ করে ত্বকে। নীলচে ত্বক, মোমের দানা বা আঙুলের অস্বাভাবিকতা হতে পারে হৃদরোগের লক্ষণ। সময়মতো চিহ্নিত করলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।
হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগে শরীর বিভিন্ন সতর্ক সঙ্কেত পাঠাতে থাকে। চিকিৎসকদের মতে, এই লক্ষণগুলো আগাম বুঝতে পারলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব। অনেকেই জানেন না, ত্বক বা নখের পরিবর্তনের মধ্যেও হৃদযন্ত্রের অসুস্থতা ধরা পড়ে যেতে পারে।
আঙুলের গাঁট ফুলে ওঠা ও নখ বাঁকা হয়ে যাওয়া যাকে বলে "ফিঙ্গার ক্লাবিং", এটি একটি অবহেলিত লক্ষণ। আঙুলের ডগা ফুলে ওঠা ও নখ বাঁকা হয়ে যাওয়ার পেছনে হূদরোগ, হার্ট ইনফেকশন বা ফুসফুসের অসুস্থতা লুকিয়ে থাকতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ত্বকে মোমের মতো উঁচু দানা ত্বকে হঠাৎ করে হলুদ-কমলা রঙের মোমের মতো দানা দেখা গেলে সেটি হতে পারে অ্যামাইলয়ডোসিস-এর লক্ষণ। এতে শরীরে অস্বাভাবিক প্রোটিন জমে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তাই এই লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
ত্বক হঠাৎ নীলচে বা বেগুনি রঙের হয়ে যাওয়া এটি "সায়ানোসিস" বা "ব্লু টো সিনড্রোম" নামে পরিচিত। রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হলে বা পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে এই রঙের পরিবর্তন ঘটে। ঠান্ডায় এমনটা হলে চিন্তার কারণ নেই, তবে বারবার হলে বা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসার প্রয়োজন।
ত্বকে জালের মতো ছোপ ছোপ দাগ "লিভেডো রেটিকুলারিস" নামের এই প্যাটার্ন ঠান্ডায় বা ওষুধে স্বাভাবিক হলেও কখনও কখনও এটি "কোলেস্টেরল এম্বোলাইজেশন সিনড্রোম"-এর লক্ষণ হতে পারে। এতে ক্ষুদ্র ধমনী বন্ধ হয়ে গিয়ে ত্বক ও অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।
চোখের পাতা বা তালুর কাছে মোমের মতো হলুদ দানা এই লক্ষণ "জ্যানথোমা" নামে পরিচিত, যা উচ্চ কোলেস্টেরলের একটি দৃশ্যমান লক্ষণ। এগুলো ব্যথাহীন হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। চিকিৎসা ছাড়া হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে যায়। তাই দেরি না করে পরীক্ষা করানো জরুরি।
হৃদরোগে ত্বকের লক্ষণকে অবহেলা নয় এই ধরনের ত্বকের পরিবর্তন সময় মতো ধরতে পারলে প্রাণঘাতী হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব। এগুলো অনেক সময় অন্যান্য কোনো উপসর্গ ছাড়াও দেখা দেয়, তাই সচেতন থাকাই একমাত্র উপায়।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, নিজে সিদ্ধান্ত নেবেন না প্রতিটি লক্ষণকে আলাদা করে দেখতে হবে। ঠান্ডায় বা ওষুধে হালকা রঙ পরিবর্তন হলে তা নিয়ে আতঙ্ক নয়, তবে যদি স্থায়ী হয় বা হঠাৎ শুরু হয় তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
জীবন বাঁচাতে সচেতন হোন তথাকথিত ‘সাইলেন্ট’ লক্ষণগুলোকে অবহেলা করলে ভবিষ্যতে বড় বিপদ হতে পারে। নিজের ত্বক, নখের দিকে নজর দিন। কারণ কখনও কখনও হৃদরোগ চিৎকার করে জানান না, ধীরে ধীরে দাগ ফেলে যায়।
দিল্লির কার্ডিওলজিস্ট ড. রাহুল সেন, "হার্ট অ্যাটাক সবসময় হঠাৎ করে হয় না। অনেক সময় শরীর আগেই সংকেত দেয়—যেমন বুকে চাপ লাগা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, নিঃশ্বাসে কষ্ট বা চোয়ালে ও বাম হাতে ব্যথা। এসব উপসর্গ অবহেলা করলে বিপদ ডেকে আনতে পারে। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই জীবন বাঁচাতে পারে।"
শহীদ