
ছবি: সংগৃহীত
আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে আমাদের স্পর্শকতার ও সম্পদের বিষয়গুলো পরিণত হচ্ছে ডিজিটাল তথ্যে। এই ডিজিটাল তথ্যের নিরাপত্তার উপর নির্ভর করছে অনেক জায়গায় নিজেদের মূল্যবান সম্পদের নিরাপত্তা। যেমন ধরুন, আপনার হাতের ফোনটি বেহাত হলেই আপনার মোবাইল অ্যাকাউন্ট বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ স্থানান্তর করা সম্ভব অনায়াসেই যদি না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া না থাকে।
আমাদের অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে আমাদের আর্থিক সামর্থ্যও ডিজিটাল রেকর্ড ছাড়া কিছুই না। আমাদের নাম, ঠিকানা, ব্যাংক তথ্য, মেডিকেল রেকর্ড, এমনকি দৈনন্দিন অনলাইন অভ্যাস এসবকিছুই এখন ডিজিটাল হয়ে গেছে। কিন্তু যত সহজ হয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার, ততই বেড়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে একের পর এক ডাটা ফাঁসের ঘটনা ঘটছে, তাতে অনলাইন নিরাপত্তা এখন শুধু প্রযুক্তিগত বিষয় নয়, এটি ব্যক্তিগত নিরাপত্তারও তৈরি করেছে শংকাও।
তবে এইসব ডাটা ফাঁসের জন্য দায়িত্ব কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোরও আছে বড় দায়। বাস্তবে, অধিকাংশ বড় ডেটা ব্রিচ হয় তথ্য সংগ্রহে রাখা সেই সব সংস্থার অবহেলা, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কিংবা ভুল কনফিগারেশনের কারণে। কিন্তু সমস্যা হলো, ক্ষতির শিকার হন শেষমেশ সাধারণ মানুষই। যেমন, ২০২৫ সালেই দেখা গেছে বিশাল আকারের তথ্য ফাঁস। উদাহরণস্বরূপ, Cybernews এর একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে ১৬ বিলিয়ন লগইন তথ্য অনলাইনে ফাঁস হয়ে গেছে যার মধ্যে রয়েছে পাসওয়ার্ড, ইউজারনেম, এমনকি সেশন টোকেন। এসব তথ্য চুরি করে হ্যাকাররা সহজেই অ্যাকাউন্ট দখল করতে পারে, কারো নাম ব্যবহার করে ঋণ নিতে পারে, এমনকি সরকারিভাবে পরিচয়ও ভেঙে ফেলতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ব্রিচে কয়েক মিলিয়ন রোগীর মেডিকেল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ভাবুন, আপনার ব্যক্তিগত রোগ তথ্যের মত সেনসেটিভ তথ্য অন্য কারো হাতে চলে গেলে কতটা বিব্রতকর বা বিপজ্জনক হতে পারে।
ডেটা চুরির পদ্ধতিগুলোও আগের মতো সাদামাটা নেই। এখনকার হ্যাকাররা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্ককেও তাদের টার্গেটে পরিণত করতে পারে। সবচেয়ে দুর্ভেদ্য ব্যবস্থাও বাইপাস করে ফেলতে পারে। উদাহরনস্বরুপ- বাংলাদেশ ব্যংকের ঘটনা আমরা সবাই জানি।
এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন আসে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়? যদিও সাইবার নিরাপত্তা কোনো একক কাজ নয়, এটি ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান প্রত্যেকের গুরুত্ব দেওয়া ও প্রযুক্তি ও জ্ঞানের অংশ হওয়া উচিত। যেমন, প্রতিটি অ্যাকাউন্টে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখা, শক্তিশালী এবং ইউনিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, সন্দেহজনক লিংকে না ক্লিক করা, নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট রাখা এসবই ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তেমনই, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের কর্মীদের সচেতন করতে হবে, যেন তারা প্রতারণামূলক যোগাযোগের ফাঁদে না পড়ে।
আপনার যদি ডিজিটাল তথ্যে নির্ভরতা থাকে। তাহলে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করাও জরুরি, কারণ ডেটা ফাঁসের খরচ শুধু আর্থিক নয়- এটি আস্থা, সুনাম, এমনকি আইনি জটিলতাও বয়ে আনতে পারে।
অ্যান্টি ভাইরাস, অ্যান্টি ম্যালওয়ার ইত্যাদি নানা দরকারি সফটওয়্যার ও আধুনিক সাইবার থ্রেটের বিষয়ে প্রশিক্ষণও গ্রহন করা দরকার নিরাপদ থাকতে। এখানে প্রয়োজন সঠিক জ্ঞানের, সচেতনতার এবং সর্বোপরি প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার মানসিকতার।
অনলাইন জগতে নিরাপদে থাকতে হলে নিরাপত্তা যেন হয় আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাস। সচেতনতাই এখানে প্রথম পদক্ষেপ।
শিহাব