
ছবিঃ সংগৃহীত
থাইরয়েড গ্রন্থি অতিসক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গেই প্রভাব পড়ে, এমনকি চোখেও। বিশেষজ্ঞদের মতে, থাইরয়েড জনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে থাইরয়েড আই ডিজিজ (Thyroid Eye Disease - TED) অন্যতম, যা চোখে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি মূলত একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভুল করে চোখের আশেপাশের টিস্যুকে শত্রু ভেবে আক্রমণ করে।
কীভাবে হয় এই রোগ?
হায়দরাবাদের যশোদা হাসপাতালের কনসালট্যান্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. দত্তা রেড্ডি আকিতি জানান, “থাইরয়েড আই ডিজিজে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চোখের পেশি, চর্বি ও টিস্যুতে আক্রমণ করে, যার ফলে সেখানে ফোলা, লালচে ভাব, ব্যথা এবং চোখ সামনের দিকে ঠেলে বেরিয়ে আসা শুরু হয়।”
গ্রেভস ডিজিজের সঙ্গে সম্পর্ক
এই রোগটির মূল কারণ এখনো পুরোপুরি জানা না গেলেও, এটি সাধারণত গ্রেভস ডিজিজ নামক একটি অটোইমিউন রোগের সঙ্গে যুক্ত থাকে। গ্রেভস ডিজিজে শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে, যাকে বলে হাইপারথাইরয়েডিজম। যদিও কখনো কখনো থাইরয়েড স্বাভাবিক বা কম থাকলেও এই চোখের রোগ দেখা দিতে পারে।
প্রাথমিক উপসর্গ
চোখে থাইরয়েডজনিত রোগের কিছু আগাম সতর্কতা সংকেত হলো—
চোখ ফুলে ওঠা বা বেরিয়ে আসা (প্রপটোসিস)
চোখ শুষ্ক বা বালি-মতো অনুভব হওয়া
চোখ লাল বা জ্বালা করা
ডাবল বা ঝাপসা দৃষ্টি
চোখের পাতা ফুলে ওঠা বা উপরের দিকে টেনে থাকা
চোখ নাড়াতে গেলে ব্যথা বা চাপ অনুভব
চোখের দৃষ্টিবিন্যাসে অসঙ্গতি (স্ট্রাবিসমাস)
রঙের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া বা খুব কম হলেও দৃষ্টিশক্তি হ্রাস
ঝুঁকিপূর্ণ কারা?
ডা. আকিতি জানান, যাদের হাইপোথাইরয়েডিজম, পরিবারে থাইরয়েডের ইতিহাস আছে, থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা, রক্তে সেলেনিয়ামের ঘাটতি অথবা যারা ধূমপান করেন, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এটি মহিলাদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় বেশি দেখা যায়।
অনেক সময় ভুল হয় রোগ নির্ণয়ে
চোখে জ্বালা বা ফোলা দেখে অনেকে TED-কে অ্যালার্জি বা কনজাংটিভাইটিস ভেবে বসেন, ফলে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হয়। তবে TED-তে সাধারণত চোখ চুলকায় না বা আঁঠালো হয় না, বরং চোখ নাড়াতে গেলে ব্যথা ও ডাবল ভিশনের মতো লক্ষণ থাকে।
চিকিৎসার উপায় কী?
ডা. আকিতির মতে, “হালকা থাইরয়েড আই ডিজিজে কৃত্রিম চোখের পানি ব্যবহারেই উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে মাঝারি বা গুরুতর ক্ষেত্রে স্টেরয়েড, রেডিয়েশন বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রিনোলজিস্টের যৌথ তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা হওয়া উচিত।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে Teprotumumab এবং Rituximab-এর মতো আধুনিক বায়োলজিক ওষুধ ব্যবহার করে সফলভাবে এই রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে।
থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা শুধু শরীর নয়, চোখেও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণ চিনে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই রোগ নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। বিশেষ করে যাদের থাইরয়েড সমস্যা বা পারিবারিক ইতিহাস আছে, তাদের উচিত চোখের পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা।
সূত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস
নোভা