
একটা সময় ছিল, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার গণতন্ত্রের নামে মানুষের কণ্ঠকে সম্মান করত। কিন্তু আজ ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় যখন মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল ইমিগ্রেশন অভিযান ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে, তখন সেখানে সেনাবাহিনী নামিয়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তোলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই সিদ্ধান্ত যে আইনবিরুদ্ধ ও সংবিধানবিরোধী সেকথা এবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত। বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক আদেশে বিচারক চার্লস ব্রেয়ার জানিয়ে দিয়েছেন, ট্রাম্পের নির্দেশে লস অ্যাঞ্জেলেসে মোতায়েন হওয়া প্রায় ৪,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে এখন গভর্নর গ্যাভিন নিউসামের অধীনে ফিরিয়ে দিতে হবে।
এই রায়ের পর গভর্নর নিউসাম আবেগঘন কণ্ঠে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আজকের দিনটা ছিল গণতন্ত্রের এক বড় পরীক্ষা। আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমরা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।”প্রসঙ্গত, নিউসাম এই সেনা মোতায়েন ঠেকাতে আদালতের দ্বারস্থ হন। তার দাবি ছিল, ফেডারেল সেনাদের ব্যবহার করে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।
বিচারক ব্রেয়ার তাঁর রায়ে লিখেছেন, “লস অ্যাঞ্জেলেসে যা ঘটছে, তা কোনো বিদ্রোহ নয়, বরং নাগরিক অধিকার ও মর্যাদার জন্য মানুষের এক স্বাভাবিক প্রতিবাদ। প্রেসিডেন্টের কাছে এটি ‘রেবেলিয়ন’ মনে হলেও সংবিধানের ভাষায় তা নয়।”
যদিও ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের মোতায়েন নিয়ে রায় দেওয়া হয়েছে, তবে মেরিনদের নিয়ে আদালত কোনো নির্দেশ দেননি, কারণ তারা তখনও রাস্তায় নামেননি।তবে গভর্নরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নেভাল উইপনস স্টেশন সিল বিচে ৭০০ মেরিন সেনা বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং এর মধ্যে ১৪০ জনকে এলএ-তে পাঠানো হতে পারে।
বিচারক ব্রেয়ার রায়ের সময় স্পষ্টভাবে বলেন, “আমরা যদি সংবিধানভিত্তিক একটি সরকারে বিশ্বাস করি, তবে প্রেসিডেন্টেরও সীমা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট আর রাজা জর্জ এক নন।”
এই মন্তব্যে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, মার্কিন বিচার ব্যবস্থার চোখে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন, যদি তিনি হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হয়ে থাকেন।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউস এই রায়কে ‘অভূতপূর্ব’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদের মতে, এতে করে ফেডারেল কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতায় পড়বেন।
আদালতের প্রশ্ন: এই সেনা আসলে কার প্রয়োজনে?
গভর্নরের যুক্তি ছিল, সেনারা মূলত ফেডারেল ভবন রক্ষায় নামলেও এখন ইমিগ্রেশন অভিযানে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে, প্রতিবাদ আরও সহিংস হয়ে উঠছে।জবাবে ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবী দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট টাইটেল ১০ আইনের আওতায় এই মোতায়েন করেছেন, যেখানে তাঁর পূর্বানুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।কিন্তু আদালত তা মানেনি।
লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ এখন ছড়িয়ে পড়েছে বোস্টন, শিকাগো, সিয়াটলসহ আরও অনেক শহরে। ‘ইমিগ্রেশন বংশবিনাশ নয়’ এই বার্তায় সরব সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে, ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসকে একটি ‘অরাজক শহর’ বলে অভিহিত করেছেন, যা গভর্নর নিউসাম ও শহরের মেয়র বাস দুজনেই ‘অভ্যন্তরীণ শান্তিকে অবজ্ঞার অপপ্রচারের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন।
কে নিয়ন্ত্রণ করবে মানুষের কণ্ঠ?এই রায়ের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন রাজ্যের অধিকার রক্ষা পেয়েছে, তেমনি দেখা গেছে আইন, সংবিধান এবং বিচারবিভাগ এখনো গণতন্ত্রের প্রহরী হয়ে কাজ করছে।
এ প্রশ্ন থেকেই যায়, একটি দেশ যেখানে মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সেনা দিয়ে দমন করা হয়, সেটি কতটা গণতান্ত্রিক থাকতে পারে?
সূত্র:https://tinyurl.com/5n8a46xv
আফরোজা