সংগৃহীত
একটি গাছ, যার কাঠে ঘ্রাণ-তাকে কি শুধুই গাছ বলা যাবে? চন্দন যেন প্রকৃতির এক কবিতা, যার প্রতিটি শিরায় ছড়িয়ে আছে শীতলতা, সৌন্দর্য আর সাধনার ছাপ। কখনও পূজার আসনে, কখনও রূপচর্চার কৌটোয়, আবার কখনও আরামদায়ক ঘুমের আহ্বানে-চন্দন নীরবে বিস্তার করে তার স্নিগ্ধ প্রভাব।
প্রাচীন সুগন্ধির ইতিহাস
চন্দনের ব্যবহার কতটা পুরোনো? এতটাই যে, প্রাচীন মিশরের মমিতে, বৈদিক যুগের সংস্কারে, এমনকি বুদ্ধের ধ্যানের ঘ্রাণেও মিশে আছে চন্দনের ছোঁয়া। আয়ুর্বেদ থেকে ইউনানি, বৌদ্ধ আর হিন্দু আচার—সব জায়গায় তার উপস্থিতি। শাস্ত্রে বলা হয়, ‘যার ঘ্রাণে মন শান্ত হয়, সে চন্দন।’
গাছটি যেমন, কাঠটি তেমন
সাদা চন্দনের গাছ (Santalum album) সাধারণত ২০-২৫ ফুট লম্বা হয়। তবে এ গাছের আসল মূল্য তার হৃদ কাঠে-হালকা হলদে রঙের কাঠ থেকে বের হয় যে তেল, তা পৃথিবীর অন্যতম দামি প্রাকৃতিক সুগন্ধি। ভারতে কর্ণাটক ও অস্ট্রেলিয়ায় এর সবচেয়ে ভালোমানের চাষ হয়।
চন্দনের গুণাগুণ
- চন্দন শুধু ঘ্রাণ নয়, একে বলা যাবে প্রাকৃতিক ওষুধ। এতে আছে:
- স্যান্টালোল: মানসিক প্রশান্তি ও অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান
- অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ: ত্বকের প্রদাহ কমাতে সহায়ক
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ত্বকের বার্ধক্য বিলম্বিত করে
- অ্যারোমাথেরাপি গুণ: মানসিক চাপ হ্রাস করে, ঘুমে সহায়তা করে
রূপচর্চায় চন্দন
- ব্রণের দাগ হালকা করতে: চন্দনের গুঁড়া ও গোলাপজলের মিশ্রণ অত্যন্ত কার্যকর
- ত্বক ঠান্ডা রাখতে: গরমের দিনে চন্দনের মাস্ক ত্বকে স্নিগ্ধতা আনে
- প্রাকৃতিক সুগন্ধি: ঘামের গন্ধ কমায়, দীর্ঘস্থায়ী ঘ্রাণ দেয়
- চুলের যত্নে: স্ক্যাল্পে চন্দন তেল ম্যাসাজ করলে খুশকি ও চুল পড়া কমে
জীবনের ঘ্রাণে চন্দন
- চন্দনের তেল ব্যবহৃত হয় ধ্যান ও মেডিটেশন থেরাপিতে।
- ঘুম না হলে কয়েক ফোঁটা তেল বালিশে দিলে মস্তিষ্ক শান্ত হয়।
- মনোযোগ বাড়ে পড়াশোনায়।
- অনেকেই ঘরের ধূপ বা সুগন্ধী তৈরিতেও চন্দনের নির্যাস ব্যবহার করেন।
সতর্কতা যেখানে প্রযোজনা
চন্দন তেল এখন বাজারে খুবই মূল্যবান-তাই ভেজাল একটি বড়ো সমস্যা। ত্বকে ব্যবহারের আগে একটুখানি স্কিন টেস্ট করে নেওয়া ভালো। অতিরিক্ত ব্যবহারে কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জিও হতে পারে।
হ্যাপী
