ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

টাকে গজাবে আবার চুল! ৫টি প্রাচীন চীনা ভেষজ যা সত্যিই কাজে দিতে পারে

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪০, ১ জুন ২০২৫

টাকে গজাবে আবার চুল! ৫টি প্রাচীন চীনা ভেষজ যা সত্যিই কাজে দিতে পারে

ছবিঃ সংগৃহীত

চুল পড়া—এই শব্দটাই অনেকের কাছে আতঙ্কের মতো। বাথরুমের নিকাশিতে জমে থাকা চুল, বালিশে পড়ে থাকা চুলের গোছা, আয়নায় মাথার ফাঁকা দাগ দেখা—এসব আমাদের অনেকের কাছে মানসিক চাপের কারণ। আর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কেউ দৌড়চ্ছে দামি চিকিৎসার দিকে, কেউ আবার খুঁজছে প্রাকৃতিক বিকল্প।

যারা রাসায়নিক এড়িয়ে প্রাকৃতিক ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান চান, তাদের জন্য চীনা ভেষজ চিকিৎসা বা Traditional Chinese Medicine (TCM) হতে পারে এক আশার আলো। হাজার হাজার বছরের পুরনো এই চিকিৎসা শাস্ত্রে বিশ্বাস করা হয়—দেহের ভিতরটা সুস্থ থাকলে, বাইরে তার প্রভাব পড়ে। চুল পড়াও তার ব্যতিক্রম নয়।

চলুন আজ জেনে নিই এমন ৫টি চীনা ভেষজের কথা, যেগুলি নিয়মিত ব্যবহার করলে মাথার ফাঁকা জায়গায় আবারও চুল গজাতে পারে।

১. হে শো উ (He Shou Wu)
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের চুল পাতলা হয়ে যায়, সাদা হতে শুরু করে। হে শো উ এমন একটি ভেষজ, যা চুলে স্বাভাবিক রং ফিরিয়ে আনে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

কীভাবে ব্যবহার করবেন:
চা, ক্যাপসুল, গুঁড়ো বা তেল—যেভাবেই খুশি। ভেতর থেকে খেলে শরীর পুষ্টি পায়, আর বাইরে থেকে মাথায় লাগালে স্ক্যাল্প সচল হয়।

কেন এটা কাজ করে:
TCM মতে, কিডনি ও লিভারের শক্তি বাড়ায়, আর এই দুই অঙ্গের স্বাস্থ্যই নাকি চুল ভালো রাখার চাবিকাঠি।

২. ড্যাং গুই (Dang Gui)
বিশেষত মহিলাদের জন্য খুব উপকারী। গর্ভধারণের পর বা মেনোপজের সময় যাঁদের চুল ঝরতে থাকে, তাঁদের জন্য এটি কার্যকরী।

ব্যবহার পদ্ধতি:
চায়ে মিশিয়ে বা রান্নায় ব্যবহার করা যায়। আবার কিছু হার্বাল সিরামেও এটি থাকে।

কেন উপকারী:
রক্তে আয়রনের পরিমাণ বাড়ায়, হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে, মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে চুলের গোড়াকে মজবুত করে।

৩. জিনসেং (Ginseng)
জীবনের দৌঁড়ঝাঁপ, টেনশন, ঘুমের ঘাটতি—সব কিছুর সঙ্গে লড়াই করে যদি চুল পড়ে যায়, তাহলে জিনসেং আপনার বন্ধু হতে পারে।

ব্যবহার:
চা হিসেবে খেতে পারেন, অথবা তেল আকারে মাথায় মালিশ করতে পারেন।

কাজের কারণ:
চুলের গোড়ায় রক্ত পৌঁছে দিয়ে তাকে পুনরুজ্জীবিত করে। ফলে চুল পড়া কমে, আর নতুন চুলও আসতে শুরু করে।

৪. লিগুস্ট্রাম (Ligustrum)
নামটা একটু অচেনা হলেও, এই ভেষজটি চুলের অকাল বার্ধক্য রোধ করতে দারুণ কাজ করে।

ব্যবহার পদ্ধতি:
চায়ে বা ক্যাপসুলে খেতে পারেন। অনেক প্রাকৃতিক তেলেও মেশানো থাকে।

কেন কাজ করে:
চুলের গোড়া মজবুত করে, স্ক্যাল্পকে আর্দ্র রাখে আর দেহে ‘ইয়িন’ শক্তি বাড়ায়—যা তারুণ্য ও শক্তির প্রতীক।

৫. রেহমানিয়া (Rehmannia)
যারা অনেকদিন ধরে হরমোন বা অ্যাড্রিনাল সমস্যা ভুগছেন, তাঁদের জন্য রেহমানিয়া খুবই সহায়ক।

ব্যবহার:
পাউডার, ক্যাপসুল বা টিসিএম ডাক্তারের পরামর্শে ডেকোশন আকারে গ্রহণ করুন।

কার্যকারণ:
রক্ত পরিসঞ্চালন বাড়িয়ে, মাথার মৃত চুলের গোড়াগুলো আবার সক্রিয় করে। যাদের মাথায় ফাঁকা দাগ আছে, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী।

অতিরিক্ত কিছু উপদেশ:
তেল লাগানোর সময় হালকা করে মাসাজ করুন: এতে রক্ত চলাচল বাড়ে, উপকারিতা দ্রুত স্ক্যাল্পে পৌঁছে যায়।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: শরীরের প্রকৃতি বুঝে নির্দিষ্ট ভেষজ বেছে নেওয়া বেশি কার্যকর।


চুল পড়া যেন শুধু মাথার সমস্যা নয়, মন ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেও জড়িয়ে। এই প্রাচীন চীনা ভেষজগুলোর মূলমন্ত্র একটাই—শরীরের ভেতরটা যদি ঠিক রাখা যায়, তাহলে বাইরের রূপও আবার ফিরে আসে।

মারিয়া

×