ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাজায় ত্রাণকেন্দ্রের পাশে গুলিতে ফিলিস্তিনি নিহত: জাতিসংঘের তদন্ত দাবি

প্রকাশিত: ০৭:২২, ৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:২৩, ৩ জুন ২০২৫

গাজায় ত্রাণকেন্দ্রের পাশে গুলিতে ফিলিস্তিনি নিহত: জাতিসংঘের তদন্ত দাবি

ছবিঃ সংগৃহীত

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজার রাফাহ শহরের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ফিলিস্তিনিদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। রবিবারের এই হামলায় ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেলেও, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

রবিবার ভোরে রাফাহর আল-আলম গোলচত্বরে হাজারো ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংগ্রহে ভিড় করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি ট্যাংক ও ড্রোন থেকে অতর্কিতে গুলি চালানো হয়।

রেড ক্রসের তথ্য অনুযায়ী, তাদের রাফাহ ফিল্ড হাসপাতালে ১৭৯ জন আহত ব্যক্তিকে আনা হয়, যাদের মধ্যে ২১ জন মৃত অবস্থায় পৌঁছান।

হামাস-পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স জানায়, ৩১ জন নিহত ও ১৭৬ জন আহত হয়েছে। মেদসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের (MSF) জানায়, খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে আহতদের অনেকেই গুরুতর অবস্থায় ভর্তি আছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “আমি গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত ও আহত ফিলিস্তিনিদের খবর শুনে স্তব্ধ। আমি অবিলম্বে স্বাধীন তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহির দাবি জানাচ্ছি।”

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গুতেরেসের এই মন্তব্যকে "লজ্জাজনক" বলে উল্লেখ করে তার বক্তব্যে হামাসের নাম না থাকায় সমালোচনা করেছে।

GHF জানিয়েছে, “এই ঘটনার কোনো সত্যতা নেই। আমাদের কেন্দ্রের আশেপাশে কোনো হামলা বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।” ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করে, "GHF সাইট থেকে প্রায় ১ কিমি দূরে কিছু সন্দেহভাজনের দিকে সতর্কতামূলক গুলি চালানো হয়েছে। সাইটের ভেতরে বা কাছাকাছি কোনো গুলি চালানো হয়নি।"

একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, “আমরা হামাসের ভুল তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করি। তারা সাধারণ মানুষকে ত্রাণ নেওয়া থেকে আটকাতে চায়।”

ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লোকজন খোলা জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে, সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ শোনা যায়। তবে বিবিসি ভিডিওটির অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একটি ড্রোন ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হচ্ছে, অস্ত্রধারীরা ত্রাণ সংগ্রহকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল। তবে সেটির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই হয়নি।

সোমবার একই এলাকায় ফের গুলিতে ৩ জন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রেড ক্রস জানায়, তাদের হাসপাতালে ৫০ জন আহত এবং ২ জন মৃত অবস্থায় আসে। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে আরও একজনের মৃতদেহ নেওয়া হয়।

এছাড়াও, জাবালিয়ায় এক বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬ শিশু ও ৩ নারী রয়েছে। ধ্বংসস্তূপে এখনও বহু লোক আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে এবং পরে সামরিক অভিযান শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা গাজার সব এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবো।”

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর এ পর্যন্ত অন্তত ৫৪,৪৭০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক অভিযানে নিহত হয়েছে ৪,২০১ জন।

সূত্রঃ বিবিসি 

নোভা

×