ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এবার পবিত্র ভূখণ্ডে ‘আজান’ নিষিদ্ধ করলো ইসরায়েলি মন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:১১, ৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ২৩:১৩, ৪ জুন ২০২৫

এবার পবিত্র ভূখণ্ডে ‘আজান’ নিষিদ্ধ করলো ইসরায়েলি মন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত।

গাজায় ইসরাইলের চলমান সামরিক আগ্রাসন এখন পরিণত হয়েছে ধ্বংস, রক্তপাত ও নিঃশেষিত বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবিতে। মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি এবার ধর্মীয় স্বাধীনতার উপরও নেমে এসেছে নিষ্ঠুরতম আঘাত। ইসরাইলি বাহিনীর টানা বোমাবর্ষণে গাজা উপত্যকায় ধ্বংস হয়ে গেছে ৮০০’র বেশি মসজিদ। এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই এবার সরাসরি মসজিদে আযান নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে দখলদার সরকার।

প্রভাবশালী ইসরাইলি দৈনিক হারেথজ জানায়, ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন—মসজিদে মাইকে আযান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। এমনকি পুলিশ চাইলে যেকোনো সময় মসজিদে ঢুকে লাউডস্পিকার জব্দ করতে পারবে। সরকারের ভাষায়, আযানের ধ্বনি এখন 'শব্দদূষণ'।

এই ঘোষণা ইসরাইলি দখলদারিত্বকে শুধু সামরিক সীমারেখায় না রেখে ধর্মীয় নিপীড়নের এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস একে ‘মুসলমানদের মৌলিক অধিকার ও ধর্মীয় অনুভূতির সরাসরি অবমাননা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এই দমন-পীড়ন শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, ছড়িয়ে পড়বে গোটা অঞ্চলে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি অভিযান শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত গাজায় ধ্বংস হয়েছে ৮২৮টি মসজিদ, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ১২৭টি। ধ্বংস হয়েছে তিনটি গির্জা ও ১৯টি কবরস্থানও। প্রতিটি বোমা যেন শুধু কংক্রিট নয়, এক জাতির ইতিহাস, বিশ্বাস ও আত্মপরিচয়ের ওপর বিস্ফোরিত হচ্ছে।

সবচেয়ে সাম্প্রতিক হামলায়, গত সোমবার গাজার দেইর আল বালাহ অঞ্চলের ঐতিহাসিক আনসার মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। মসজিদের গম্বুজ ও স্তম্ভ বোমার আঘাতে ভেঙে পড়েছে। ধ্বংস হয়েছে প্রাচীন কবরস্থানও। শতবর্ষের ইতিহাস এক মুহূর্তেই মিশে গেছে ধুলোয়।

গাজার আকাশে যেখানে এক সময় ভেসে আসতো আযানের ধ্বনি, সেখানে এখন শুধুই ধোঁয়া, আগুন আর মৃত্যুর গন্ধ। এই নিস্তব্ধতা শুধু শব্দের অনুপস্থিতি নয়—এটি এক জাতির আত্মিক অস্তিত্বের উপর চাপিয়ে দেওয়া নিপীড়নের প্রতিচ্ছবি।

বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারকর্মী ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংগঠনগুলো এই নিষেধাজ্ঞা এবং আক্রমণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সনদের সরাসরি লঙ্ঘন।

নুসরাত

×