
বসন্ত কি তবে রূপ বদলাচ্ছে? চিরচেনা নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার দেখা শুধু গভীর রাতেই পাওয়া যায়। আর দিনের শুরু হতে না হতেই বাড়তে থাকে গরমের তীব্রতা। এ যেন চৈত্রের আগমনী বার্তা। তাই আরাম পেতে ছোট থেকে বড় সবার পোশাক ব্যবহারে এসেছে ভিন্নতা। স্বাচ্ছন্দ্যময় পোশাকের জন্য কেউ কেউ ঢুঁ মারছেন ফ্যাশন হাউসগুলোতে, কেউ আবার টেইলার্সের দোকান থেকে তৈরি করে নিচ্ছেন সুতি কাপড়ের পোশাক। কেমন হওয়া উচিত গরমের পোশাক? সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে, এই গরমে অবশ্যই কৃত্রিম তন্তুর পোশাক এড়িয়ে চলতে হবে। পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরলে একদিকে যেমন গরম কম লাগবে, অন্যদিকে আরামও লাগবে। ফলে কাজ করা যাবে স্বাচ্ছন্দ্যে। পাতলা তাঁত ও খাদি কাপড়ের পোশাকও এ সময় পরা যায়। তবে গরম এলে সুতি কাপড়ের প্রাধান্য বাড়ে বরাবরই।
এ সময় রং নির্বাচনেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গরমের পোশাকের ক্ষেত্রে সাদা, হাল্কা গোলাপি, হাল্কা বেগুনি, হাল্কা নীল, বাদামি, আকাশী, হাল্কা হলুদ, ধূসরসহ হাল্কা রঙের পোশাকগুলো আরামদায়ক হবে। গরমে সাদা ও অন্যান্য হালকা রঙের পোশাক শুধু তাপমাত্রাই কমায় না, সেই সঙ্গে চোখকেও দেয় প্রশান্তি। তবে গরমকালে সাদা রঙের পোশাকের জয়জয়কার সব সময়ই।
হাল ফ্যাশনে মেয়েদের পোশাক :
হাল ফ্যাশনে টিনএজ বা তরুণীরা সাধারণত ঢিলেঢালা পোশাকই বেশি পরছে। তাছাড়া বর্তমান আবহাওয়ায় যে কাপড়ের পোশাক হোক না কেন, বেশি আটসাট হলে তা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য একটু ঢিলেঢালা পোশাকই পরতে হবে। যারা হাইনেক পরেন তারা এ গরমে একটু কলার ছাড়া বড় গলা পরে দেখতে পারেন, আরাম পাওয়া যাবে। গরমে ফুল স্লিভ একদমই মানানসই নয়। এতে করে বাড়ে ঘামের তীব্রতা। তাই থ্রি কোয়ার্টার, স্লিভলেস অথবা শর্ট স্লিভের টপস ও কুর্তি হবে আরামদায়ক। সঙ্গে পরুন জেগিংস অথবা লেগিংস। যা আপনাকে দেবে ফ্যাশনেবল লুক।
সুতি কাপড়ের সঙ্গে লিনেন, দুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, চিকেন ও তাঁতের কাপড় গরমের জন্য বেশ উপযোগী। উৎসবে পরতে পারেন কৃত্রিম মসলিন বা পাতলা চোষা কাতান। আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বেশিরভাগই সুতি কাপড় দিয়ে তাদের পোশাক তৈরি করে থাকে। কাজেই আপনার পছন্দসই পোশাক কিনে নিতে পারেন যে কোনো ফ্যাশন হাউস থেকে। আবার চাইলে নিজেই হতে পারেন আপনার পোশাকের ডিজাইনার। বাজারে এরই মধ্যে এসে গেছে গরমের উপযোগী রং ও ডিজাইনের থান কাপড়। সেখান থেকেও পছন্দের কাপড়টি কিনে ইচ্ছামতো ডিজাইন করে টেইলার থেকে বানিয়ে নিতে পারেন। ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনার জন্য বর্ডারে লাগাতে পারেন লেস কিংবা পাইপিন। এতে আপনি শুধু স্বস্তিদায়ক পোশাক যে পাবেন তাই-ই নয়, নিজের পোশাক নিজে ডিজাইন করার জন্য এক ধরনের আত্মতৃপ্তিও মেলে। সময়োপযোগী কাপড় বুটিক হাউসগুলো ঘুরেও কিনতে পারবেন। গজ কাপড় দিয়ে ড্রেস বানাতে যারা আগ্রহী, তারা কেনার জন্য যেতে পারেন নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচক, ইসলামপুর, মৌচাক, ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, পিংক সিটি, মাসকট প্লাজা, নর্থ টাওয়ার, রাইফেলস স্কয়ারেও। গজ কাপড় কেনার ক্ষেত্রে বহরটা জেনে নিতে হবে। দুই থেকে সাড়ে তিন হাত পর্যন্ত বহর হয় এ কাপড়ের। ছেলেরাও শার্টের জন্য পিস হিসেবে কাপড় কিনতে পারেন। দেখে নিন গরমে পরার উপযোগী কিনা। দাম নির্ভর করবে কাপড়ের মানের ওপর।
গরমের সাজ :
গরমে মেয়েদের সাজসজ্জার ক্ষেত্রে কানে মুক্তার ছোট দুল এবং গলায় সরু চেনের সঙ্গে মুক্তার লকেট পরতে পারেন। তা ছাড়া পাথরের টপ বা ছোট ঝুমকা পরতে পারেন। বড় দুল একদম এড়িয়ে চলুন। হাতে হাল্কা একটা ব্রেসলেট থাকতে পারে। পায়ে আংটি বা পায়েল। চুল উঁচু করে পনিটেলও করতে পারেন বা পাঞ্চক্লিপ দিয়েও আটকে রাখতে পারেন।
এ সময়ে তরুণদের পোশাক :
গরমের সময়ে আরামের পোশাক খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খান অনেক তরুণ। দেখা যায় পুরুষের পোশাকের কাপড় একটু ভারিই হয়ে থাকে। কিন্তু গরমে এমন পোশাক বেছে নিতে হবে যেন শরীর দ্রুত না ঘামে। কারণ ঘাম শরীরে বসে সর্দি-কাশি, ঘামাচি, চুলকানি বা অন্যান্য রোগের আবির্ভাব ঘটায়। তাই পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই পাতলা ও আরামের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আর সেই সঙ্গে পোশাকটি যাতে ফ্যাশনেবল হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। ফ্যাশন সচেতনরা পোশাকে ট্রেন্ডিভাব বজায় রাখতে চায়। তারা স্বস্তির পাশাপাশি সৌন্দর্যকেও দেয় সমান প্রাধান্য। গরমে ছেলেদের জন্য সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক পোশাক হচ্ছে টি-শার্ট। বিশেষ করে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেদের কাছে এই পোশাকের বিকল্প নেই। জিন্স, গ্যাবাডিন কিংবা অন্য প্যান্টের সঙ্গে টি-শার্ট বেশ মানিয়ে যায়।
সব বয়সের পুরুষ তাদের স্বাচ্ছন্দ্যময় পোশাকের তালিকায় টি-শার্ট রাখতে পারেন। গোল-গলা, ভি-গলা ও কলারসহ নানা রকম টি-শার্ট বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। টি-শার্ট কেনার আগে কাপড় সম্পূর্ণ সুতি কিনা তা যাচাই করে নেওয়া জরুরি। টি-শার্টের হাফ হাতার নিচের দিকে ও কলারে ভিন্ন রঙের ব্যবহার চলছে। এসব ছাড়াও ফতুয়া কাটের গলাও বেশ চলছে। নিচের দিকে সম্পূর্ণ গোল বা হাল্কা কাটা। এ ছাড়া টি-শার্টের বুকেও নানা ডিজাইনের সংমিশ্রণ ঘটেছে। কালো রং অতিরিক্ত তাপ শোষণ করে। তাই গরমে বেছে নিতে পারেন সাদা, নীল, ছাই, হালকা নীল, সবুজ, মেরুন, চাপা সাদা, হলুদ, হাল্কা ফিরোজা ইত্যাদি রঙের পলো-শার্ট বা টি-শার্ট।
কোথায় পাওয়া যাবে এবং দরদাম :
চাঁদনী চক, নিউ মার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, মতিঝিল, গুলিস্তান, ইসলামপুর, মৌচাক মার্কেটে রয়েছে টি-শার্টের বিপুল সমাহার। দাম হবে ১৫০ থেকে ৮০০ এর মধ্যে। এছাড়া দেশীয় ফ্যাশন হাউস লা-রিভ, টুয়েলভ, রঙ বাংলাদেশসহ নানা বুটিকস শপে মিলবে সুতি কাপড়ের বিভিন্ন নান্দনিক পোশাক। দামও রয়েছে নাগালের মধ্যে।