ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে চিরতরে মুক্তির প্রাকৃতিক উপায়

প্রকাশিত: ০০:৪২, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে চিরতরে মুক্তির প্রাকৃতিক উপায়

ছবি: সংগৃহীত।

মানবদেহ থেকে বর্জ্য নিষ্কাশনের দুটি প্রধান প্রক্রিয়া হলো মূত্রত্যাগ এবং মলত্যাগ। মূত্র, মূত্রথলিতে জমা হয়ে পূর্ণ হলে মূত্রত্যাগের প্রয়োজন হয়। অনুরূপভাবে, মল জমা হয় মলাধারে (বৃহদন্ত্র), যা নলাকার আকৃতির। মলাধার পূর্ণ হলে মলত্যাগের মাধ্যমে তা খালি হয়।

আমরা খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করি, তার একাংশ হজম হয়ে শরীরে প্রবেশ করে, আর বাকিটা মলে পরিণত হয়। খাদ্যতন্ত্র বা ফাইবার হজম হয় না এবং এটি মল তৈরির প্রধান উপাদান। সুস্থ মানুষের প্রতিদিন এমন পরিমাণ মল তৈরি হওয়া উচিত, যা মলাধার পূর্ণ করে দিনে অন্তত একবার মলত্যাগ নিশ্চিত করে।

নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা কমে। তবে যদি মল নিয়মিত বের না হয় এবং মলাধারে দীর্ঘ সময় জমা থাকে, তাহলে মল থেকে পানি শোষিত হয়ে তা শক্ত হয়ে যায়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

প্রাকৃতিক উপায়ে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া প্রয়োজন। যেমন- শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, দই এবং আস্ত শস্যদানা। তিসি, ইসবগুলের ভুষি, তোকমা দানা, তিল, এবং শর্ষে বাটার মতো উপাদান এই সমস্যার সমাধানে অত্যন্ত কার্যকর।

তিসিতে প্রচুর দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। তিসি হালকা ভেজে ভর্তা বা কাসুন্দি তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।

ফাইবারসমৃদ্ধ কিছু ফল যেমন পেঁপে, আনারস, পেয়ারা, আনজির, এপ্রিকট, প্রুন, পীচ ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শাকসবজি যেমন কচু, কচুর লতি, ডাঁটা, পাতা, এবং শস্যদানা (লাল চাল, লাল আটা ও আস্ত ডাল) প্রচুর ফাইবার সরবরাহ করে।

খাওয়ার অভ্যাস ও শারীরিক কার্যক্রম

যারা ফাইবারযুক্ত খাবারে অভ্যস্ত নন, তাদের শুরুতে অল্প পরিমাণে এই খাবার খাওয়া উচিত, কারণ এতে পেটে গ্যাস হতে পারে। তবে ১-২ সপ্তাহের মধ্যে এই সমস্যা কমে যায়। পাশাপাশি প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট হাঁটা, সাঁতার কাটা, দৌড়ানো বা সাইকেল চালানো কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান এবং সকালে খালি পেটে ঘৃতকুমারীর শাঁস পানিতে মিশিয়ে খাওয়া উপকারী। বেলের শরবতও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।

মিষ্টি আলু, দুধ, এবং দই মল বৃদ্ধিতে সহায়ক হওয়ায় এগুলো খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। তবে ফাস্ট ফুড, সফট ড্রিঙ্কস, তেলে ভাজা খাবার, চিনি, লবণ, এবং গরু-খাসির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।

টয়লেট ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে প্যান টয়লেট ব্যবহার করা ভালো, কারণ এটি প্রাকৃতিক এবং অর্শ রোগের ঝুঁকি কমায়। টয়লেটে দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা ঠিক নয়। বেগ হলে টয়লেটে দেরি না করা এবং ৫ মিনিটের বেশি সময় অপেক্ষা না করাই উত্তম।

মেডিসিন বা ডুস ব্যবহারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায়ে সমস্যা সমাধান করাই ভালো। ফাইবারযুক্ত খাদ্য ব্লেন্ড বা মিহি করে খেলে ফাইবার ভেঙে যায়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম অনুসরণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য সহজেই নিরাময় সম্ভব।

সায়মা ইসলাম

×