ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

দিলারা কাওনাইন প্রশাসনিক কর্মকর্তা

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:২৯, ২৪ মে ২০২৪

দিলারা কাওনাইন প্রশাসনিক কর্মকর্তা

দিলারা কাওনাইন প্রশাসনিক কর্মকর্তা

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। কর্ণফুলী নদীর পাদদেশ এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলা বীর চট্টলা। সমুদ্র পরিবেষ্টিত আর নদী ¯œাতই নয় বরং বহু বীরের পদচারণায় ধন্য চট্টগ্রাম। আবার রক্তে রঞ্জিত চট্টগ্রামও ইতিহাসের নির্মাল্য। সেই চাটগাঁর কন্যা দিলারা কাওনাইন। চট্টগ্রামের সমুদ্র সম্পদের আওতায় একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। চ্যালেঞ্জিং এবং চমকপ্রদ পেশায় প্রতিদিনের কর্মযোগও এক অভাবনীয় বরমাল্য।

অফিস সামলাতে নিত্য কর্ণফুলী নদী পার হওয়াও পেশাগত জীবনের বৈচিত্রিক নির্মাল্য। জীবনের শুরুটাও ছিল সমৃদ্ধ পরিবারের এক অসাধারণ জগত। পিতা সদ্যপ্রয়াত দেলোয়ার হোসেন। মা নাজমা বেগম। সাধারণ জীবন যাপনের মধ্যে কত অসাধারণ মূল্যবান ইতিবৃত্ত অবধারিত জীবনের পালাক্রম সেটাও বিস্ময়কর। শৈশব থেকে শুনে শুনে বড় হয়েছেন পিতামহ আর পিতামহীর সফল জীবনের বর্ণাঢ্য কাহিনী।

পিতামহ ডা. আবদুস ছবুর চৌধুরী। পিতামহী রোশনে কাওনাইন। এখানেই আবেগে আপ্লুত হলেন দিলারা। পিতামহ যখন চিকিৎসক সে অবধি কাট্টলী মুন্সীপাড়ায় অনেক বিজ্ঞ চিকিৎসকখ্যাত এবং সফল। কিন্তু পিতামহী রোশনে কাওনাইন যখন ১৯৫১ সালে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলেন সফলতার সঙ্গে। সেটাই সে সময়ের ইতিহাস-নজির। তেমন না দেখা সুখ স্বপ্নকে লালন ধারণ করেই তৈরি হয়েছেন।

দিলারা অবাক বিস্ময়ে স্মরণ করলেন দাদি যখন মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সে সময় কাট্টলী মুন্সীপাড়ায় প্রথম কোনো কন্যা এমন কৃতিত্বকে স্পর্শ করলেন। এছাড়াও রয়েছে বাড়তি চমক। দাদি খুব ভালো নজরুল সংগীত গাইতেন। পাকিস্তান বেতারেও গেয়েছেন। ফেরদৌসি রহমান মোস্তাফা জামান আব্বাসীর সঙ্গে। আর শিষ্য ছিলেন উপমহাদেশের আর এক সংগীত সাধক আব্বাস উদ্দীনের।

যাই হোক সরাসরি দিলারার জীবন গড়া কাহিনী আলোচনার মূল পর্ব। চট্টগ্রামের আলকরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজে। পরবর্তীতে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থনীতিতে ¯œাতক-¯œাতকোত্তর করে পেশার দিকে মনোযোগ দেওয়াই ছিল জীবন এাগিয়ে নেওয়ার অনন্য আর এক পালাক্রম। ২০০৫ সালে শিক্ষা জীবন শেষ করেন এপ্রিলে।

একই সালের ১ আগস্ট যোগ দেন এক চ্যালেঞ্জিং পেশায়। ‘সি রিসোর্স গ্রুপে’ প্রশাসনিক সহকারী কর্মকর্তার পদে। আর পেছন ফিরে তাকাতেই হয়নি। মাছে-ভাতে বাঙালির জলে থাকা মাছের হরেক বৈচিত্র্য তার কর্মজীবনকে যে মাত্রায় উদ্বেলিত করে দেয় সেটাও জীবনের পরম প্রাপ্তি। তবে যে পেশায় নিজেকে সাবলীলভাবে যুক্ত করেছেন সেখানে বেদনাহত হয়ে দেখলেন নারীদের সংখ্যা নগণ্যই বলা যায়।

৬০ জন পুরুষ সহকর্মীর মাঝে মাত্র তিনিসহ ৩ জন মহিলা কাজ করছেন। ২০০৬ সালে কনের সাজে বসতে হয় বিয়ের আসরে। শুধু কি পরিণয়? তার চেয়েও বেশি মাতৃত্বের অপার মহিমায় নিজেকে পূর্ণ থেকে পূর্ণতর করা। দুই কন্যা সন্তানের জননী। না কন্যাদের নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। বড় করছেন মেয়ে নয় বরং মানুষের মর্যাদায়। বড় কন্যা রুবাইয়া কাদের এবার মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে।

মেয়েকে চিকিৎসক তৈরি করতে আগ্রহী দিলারা। প্রয়োজনে সবকিছুই উজাড় করে দেবেন নিঃশর্তে, নির্দ্বিধায়। তার আগে যার ঘরণী হলেন তার নামটাও আসা সঙ্গত। মো. ফজলুল কাদের। একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। বদলির চাকরি। স্বামীকে সবসময় কর্মস্থলেই থাকতে হয়। পুরো সংসার আগলে রাখেন দিলারা। সেখানে সবার আগে সামনে এসে যায় দুই কন্যার আগামী ভবিষ্যৎ।

সেটাও সচেষ্ট আন্তরিকতায় এগিয়ে নিতে আজও থমকে দাঁড়াননি, পেছনেও তাকাননি। তবে সামুদ্রিক সম্পদের কর্মকর্তা হিসেবে মাছের যে বাহারি রূপ কৌশল সেটাও কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। দেখেছেন কিভাবে আমাদের দেশের নদী আর সমুদ্রের মাছ বিদেশে রপ্তানি করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বৃহত্তর এশিয়ার জাপান ছাড়াও থাইল্যান্ডে আমাদের মাছের চাহিদা বেশি।

দিলারার প্রশাসনিক দপ্তরে মূলত কাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিভাগে, মাছের সঙ্গে তেমন কোনো সরাসরি যোগাযোগ নেই। তবে মাছের বেচা-বিক্রি বিদেশে রপ্তানি সবই কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেন। শুধু তাই নয় আমাদের প্রতিদিনের আহারের এক বিরাট উপাদেয় আর স্বাস্থ্যকর মাছের জন্য আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি। এটাও এক অহঙ্কারের বিষয় বলে তাকে মাতিয়ে দেয়। অফিস সময় প্রায় সাড়ে সাতঘণ্টা।

সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা অবধি। স্বাভাবিকভাবেই অন্য যে কোনো কাজের তুলনায় কর্মঘণ্টা একটু বেশিই। তবে এটা নিয়ে কোনো আপত্তির সুর ভেসে এলো না। তার মানে নিজের পোশাকে সচেতন দায়বদ্ধতায় মেনেও মানিয়ে নিতে সমর্পণেই বলা যায়। তবে দুঃখ একটাই এখনো এমন চমকপ্রদ আর উপভোগ্য পেশায় নারীর পদচারণা হাতে গোনার অবস্থায়। 
যেখানে আমরা জনগোষ্ঠীর সমান সংখ্যক। তবে আগামীতে এমন পেশা যেন সকলের জন্য অবারিত হয় তেমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন অকুণ্ঠ চিত্তে। দেশের সমসংখ্যক নারী বিভিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে বৈচিত্র্যময় আর ঝুঁকিপূর্ণ পেশাকেও এখন বিবেচনা করা হচ্ছে। আর শিক্ষাই তো অনেকখানিই। এবারে মাধ্যমিকের ফলাফলে ছাত্রীদের জয়যাত্রা এক অবিস্মরণীয় দিক নির্দেশনা। 
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×