ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১

শিশুর পুষ্টি ও বিকাশ ॥ এগিয়ে চলেছেন রুবাইয়া 

সমুদ্র হক

প্রকাশিত: ০১:৪৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শিশুর পুষ্টি ও বিকাশ ॥ এগিয়ে চলেছেন রুবাইয়া 

রুবাইয়া আকতারের তৈরি করা শিশুদের বিশেষায়িত খাবার

হতাশা তাকে কাবু করতে পারেনি। পেয়েছেন অদম্য শক্তি। নবজাতকের নিউরন বিকাশে পূর্ণতা দিতে কাজ করছেন নীরবে নিভৃতে। চলার পথে সুর বাজে ‘এগিয়ে চলুক তব জয়রথ পুষ্পিত হোক সাধনার পথ।’ শেষ জয়ে তিনি বিজয়ী হবেন এমন ব্রত নিয়েছেন। তার নাম রুবাইয়া আকতার (৩১)। বাড়ি বগুড়া সদরের বারোপুর গ্রামে। দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্টেশনে (বিবিএ) গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। এর মধ্যে পরিণয়। স্বামী বেনজামিন মেহেদী ইংরেজিতে মাস্টার্স করেছেন ইংল্যান্ডের হাডার্সফিল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে। প্রণয় কি না! হাসিমাখা উত্তর-বিষয়টি প্রণয়ের পূর্ণতায় মধুময়তা। বিয়ের এক বছর পর কোলে আসে ফুটফুটে শিশু। যে শিশু স্বর্গীয় হাসি দিয়ে মায়ের পথ আলোকিত করে নতুন ভুবন গড়ে তুলছে। এই ভুবনে রুবাইয়ার চারপাশে শিশু। গতানুগতিক ধারার বাইরে তিনি সৃষ্টিশীল করে তুলতে চান শিশুদের। এই শিশুরা একদিন দেশ গড়বে। 
বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, প্রতি শিশু একশ’ বিলিয়ন নিউরন নিয়ে পৃথিবীতে আসে মায়ের কোলে চরে। তারপর শুরু হয় মেধার প্রতিফলন। মেধার বিকাশ ৮০ শতাংশ ঘটে প্রথম তিন বছরে। পরবর্তী দু’বছরে আরও ১০ শতাংশ বেড়ে পাঁচ বছরে ৯০ শতাংশের পর পরবর্তী তিন বছরে অর্থাৎ ৮ বছরে আরও ৩ থেকে ৭ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৩ থেকে ৯৭ শতাংশ। বাকি ৭ বা ৩ শতাংশের কিছুটা কখনো সারা জীবনে পূর্ণ হয়। কখনো হয় না। এই নিউরন বিকাশে তিনি কাজ করছেন। যাত্রা শুরু করেছেন নিজের ঘর থেকেই।
জানালেন শিশুর নিউরন বিকাশে বেশিদূর যেতে হয় না। ঘরে যা আছে তার মধ্যে সামান্য কিছু যোগ করলে শিশুদের পূর্ণতার খাবার তৈরি হয়। তবে প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ ছাড়া আর কিছুই নয়। ছ’মাস পর খাদ্যাভাসে নতুন মাত্রা যোগ হবে। সকালে শুকনো খাবার ফলের রসে তৈরি হবে ওটস। যা শিশু খেতে পারবে। দুপুরে নরম হালকা খিচুড়ি। বিকালে দানাদার খাবারে তৈরি হালকা কিছু। শিশুদের জন্য রাতের খাবারটি হবে আটা, যব, চাল, শুকনো খাবার, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, খেজুর, আখরোট। এই খাবারের নাম শুনে মনে হবে অনেক অর্থ ব্যয় হবে। আসলে তা ভুল ধারণা। এই খাবারগুলো হবে তরলীকরণ। শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়ে এক টেবিল চামচ তরল খাবারের সঙ্গে এক কাপ পানি মিশ্রণ করে খাওয়াতে হবে।

পরিমিত মাত্রায় তিন দিনের জন্য একবার খাবার তৈরি করে ঘরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে দিয়ে শিশুদের খাওয়ানো যায়। এভাবে একটু করে খাবার বাড়িয়ে শিশুদের তিন বছর নিউরনকে সচল করে পরবর্তী অধ্যায়ে ৫ বছর ও ৮ বছরে টেনে নেওয়া যায়। তবে প্রথম তিন বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের নাম দিয়েছেন ‘হ্যাপি প্যারেন্টিং’। এই নামের অর্থ গভীরে।  
রুবাইয়া সকল শিশুকে একই প্লাটফর্মে আনতে প্রথমে বেছে নেন সামাজিক মাধ্যম। প্রেগনেন্ট নারীদের কিভাবে নবজাতকের নরমাল ডেলিভারি হয় এই বিষয়ে কিছু পন্থার পরামর্শ দেন। দ্রুত সাড়া মেলে। গড়ে তোলেন একটি গ্রুপ। যেখানে তার সহপাঠী তিনজন ডাক্তার আছেন। কনসিভ করার প্রথম তিন মাসের মধ্যে স্বামীর সঙ্গে ইন্টিমেট না হয়ে পরবর্তী ছয় মাসে কিভাবে একসঙ্গে থেকে শরীরের ব্যায়ামে নরমাল ডেলিভারির পথ সহজ হয় বিষয়গুলো জানিয়ে দেন। গ্রুপভিত্তিক সেল খোলেন। বর্তমানে ২৫ হাজারেও বেশি নারী নিজেদের দাম্পত্য জীবনে সুখময় করে তুলছেন। প্রতিদিন গ্রুপে যোগ দিচ্ছেন অনেক নারী। 
এক পর্যায়ে গ্রামের লোকজন তাকে পরামর্শ দিলেন স্বল্পমূল্যে প্যাকেটজাত খাবার বিপণন করলে অনেক নারী উপকৃত হবে। বিশেষ করে কর্মজীবী নারী। তারপর রুবাইয়া নিজের বাড়িতেই বিশেষ ব্যবস্থায় খাবার বানানো শুরু করেন। খাবারগুলোর মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষা এবং নিউট্রিশন ভ্যেলু নির্ণয়ে রাজশাহীর বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চে (বিসিএসইআর) দিয়েছেন। পজিটিভ রেজাল্ট মিলবে আশাবাদী তিনি। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটে (বিএসটিআই) খাবার পাঠাবেন। 
পরিপাটি করে থাকেন। ঘর সাজিয়েছেন সৃজনশীল ও মননশীলতায়। শিশুদের এই ভাবনায় আনতে চান। জানালেন এই খাবারে শিশুর মেধার কতটা বিকাশ হলো তা নির্ণয়ে বিশেষায়িত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়বেন। সফলতার পর বিশেষ ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করবেন। তার নাম দেবেন একাডেমি অব হ্যাপি প্যারেন্টিং। বললেন তার কাজে উৎসাহ দিয়েছেন স্বামী এবং পারিবারিক বন্ধন। স্কুলে যার প্রতি আসক্তি হয়ে প্রণয়ে রবীন্দ্রনাথের সুর তুলেছিলেন ‘দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে’ পরিণয়ের মধুময়তায় বেটার হাফে সুর উঠেছে ‘আমার সুরগুলি পায় চরণ আমি পাইনে তোমারে।’ রুবাইয়া আকতার একটি সুন্দর ভুবন গড়তে এগিয়ে যেতে চান দূর বহুদূর। এর মধ্যেই এমবিএর পর পিএইচডি করার ইচ্ছে আছে।

×