ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পোশাকে বৈচিত্র্য

জলি রহমান

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ২০ আগস্ট ২০২৩

পোশাকে বৈচিত্র্য

.

নহ মাতা নহ কন্যা/নহ বধূ সুন্দরী রূপসী/হে নন্দনবাসিনী উর্বশী’- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগীতের ন্যায় যুগে যুগে বহু কবি নারীর রূপ সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছেন নানাভাবে। সৃষ্টিকর্তার এক অপরূপ সৃষ্টি নারী। তবে নারীর সৌন্দর্য অনেকটাই নির্ভর করে তার ব্যক্তিত্ব, রুচি ফ্যাশনের ওপর। এরা বিভিন্ন পোশাকে বিভিন্ন রূপে হাজির হয় আমাদের মাঝে। কখনো মা, কখনো বন্ধু, কখনো বোন আবার সহধর্মিণী রূপে নারী হয় ঘরের লক্ষ্মী। নারীর পদচারণা এখন সকল কর্মক্ষেত্রে। মাঝে মধ্যে পোশাক ভেদে নারীর রূপে ভিন্নতা প্রকাশ পায়। যেমন মায়েরা সাধারণত শাড়ি পরে, মেয়েরা সালোয়ার কামিজ, কিশোরীরা পরছে টপস। হাল ফ্যাশনে নারীদের জন্য ডিজাইনাররা আবিস্কার করছে পাশ্চত্য ধাঁচ কাটের নানা পোশাক। বয়স ভেদে পোশাক পরার ভিন্নতা পার্টি বা কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেলেও, আধুনিক সময়ে বয়স যেমনই হোক পোশাকে ভিন্নতা নেই। ত্রিশোর্ধ নারীরাও টপস পরছে। আবার মায়েরা এখন আর শাড়ি পরে না তারা পরছে সালোয়ার কামিজ। সময়ের পালাক্রমে সমাজ-সংস্কৃতিতে এসেছে নানা বিবর্তন।

মানুষের পোশাকে ফ্যাশনেও এসেছে পরিবর্তন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে নারীদের প্রধান পোশাক ছিল শাড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তরুণীরা শাড়ি পরেই আসা-যাওয়া করতেন। বর্তমান ফ্যাশনে তরুণীদের পোশাকের তালিকায় যুক্ত হয়েছে টপস, কুর্তি, লং শার্টসহ নানা পোশাক। নারীদের সৌন্দর্য প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে ফ্যাশন ডিজাইনাররা আবিষ্কার করছে বৈচিত্র্যময় এসব পোশাক। কোন পরিবেশে কেমন পোশাক মানাবে তা নিয়ে আজ আলোচনা করব

কর্মক্ষেত্রে পরিপাটি পোশাক সময়ানুবর্তিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অফিসে কোন ড্রেস পরতে হবে বা কোন ড্রেস মানাবে তা নিয়ে অনেকেরই কোনো ভাবনা থাকে না। আবার ফ্যাশন সচেতনরা একটু বেশিই ভাবেন। একেক ধরনের পেশার ক্ষেত্রে একেক রকম পোশাক গ্রহণযোগ্য হয়। আপনার পোশাকে আপনি পুরনো সময়কে যেমন বহন করবেন না, তেমনই এগিয়ে যাওয়ারও মানে হয় না। সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলান। বিদেশী কোনো কোম্পানিতে যারা কাজ করেন তাদের পোশাক থাকে এক রকম। অনেক সময় ড্রেস কোড নির্ধারিতও থাকে। আবার যারা দেশের সরকারি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন তাদের থাকে এক রকম। এজন্য পোশাক যাই পরা হোক না কেন।

সেটা হতে হবে পরিপাটি ফ্যাশনেবল। কিছু কর্মক্ষেত্রে পোশাক নির্ধরিত না থাকলেও কর্মের সঙ্গে অনেক পোশাক রীতিতে পরিণত হয়েছে। যেমনÑ স্কুল-কলেজের নারী শিক্ষকরা শাড়ি পরতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। নারী শিক্ষক শাড়ি পরবে এটা যেন অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। কোনো স্কুলের বারান্দায় শত শত মেয়ের মাঝে যখন কোনো শাড়ি পরিহিত নারীকে চোখে পরে তখন প্রথমেই তাকে শিক্ষিকা হিসেবেই অনুমান করা হবে। যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রেই পরিপাটি পোশাক বাঞ্ছনীয়। যারা করপোরেট জব করছে, তারা শার্ট-প্যান্ট আর ব্লেজার পরতে পারেন। তবে যেমন পোশাকই হোক না কেন তা যেন আরামদায়ক মার্জিত হয়। সাজগোজে কখনই যেন উগ্রতা প্রকাশ না পায়। বর্ষাকাল চলে গেলেও শ্রাবণের বারিধারা এখনো বহমান। তাই পোশাকের ক্ষেত্রে সঠিক রং কাপড় নির্বাচন করতে হবে। হালকা রং এর পোশাকে বর্ষার কাদা-পানিতে সহজেই দাগ পরে। সময়ে আকাশি, ব্লু, ধূসর এসব রঙের পোশাক পরা যেতে পারে। আবার এড়িয়ে চলতে হবে যেকোনো ভারি কাপড়। কেননা তা ভিজলে শুকাতে সময় লাগে। এজন্য সিল্ক জর্জেটের কাপড় বর্ষার দিনে বেশ আরামদায়ক। যারা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কাজ করেন না তাদের জন্য সুতি পোশাকই ভালো। কারণ সুতি কাপড় সহজেই ঘাম শুষে নেয়।

যান্ত্রিক শহরের কর্মব্যস্ত শরীর মন প্রশান্তির খোঁজে ছুটে যায় বহুদূর। এই ভ্রমণবিলাস সময়টাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে কত না আয়োজন! এই আয়োজনের মুখ্য বিষয় থাকে পোশাক। পরিবেশ অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন এক্ষেত্রে মুখ্য বিষয়। আপনি যদি সমুদ্র সৈকতে গিয়ে পানিতে ভিজতে চান সেক্ষেত্রে পরিপাটি আটসাট পোশাক একদম ভালো লাগবে না। ঢিলেঢালা টপস জিনস প্যান্ট অথবা জেগিংস এক্ষেত্রে মানানসই। আপনি সুতি কাপড় বা সিল্ক পরে পানিতে নামলে ভিজে গায়ে লেগে থাকবে। যা অস্বস্তির কারণও হতে পারে। তাই ভ্রমণের জন্য জিন্সের সঙ্গে শার্ট অথবা টপস পরুন। দেখতে যেমন স্মার্ট লাগবে তেমনি পরেও স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যাবে।

পার্টি হোক বা বিয়ের অনুষ্ঠান আজকাল তরুণীরা বরাবরই সাজ-পোশাকে নিজেদের করে তোলে অতুলনীয়। টিনএজদের জন্য ফ্যাশন ডিজাইনাররা আবিষ্কার করছে নিত্যনতুন আকর্ষণীয় পোশাক। কনেদের জন্য রয়েছে ভারি কাজের লেহেঙ্গা, দোপাট্টা এবং পুথি, চুমকির কাজ করা গর্জিয়াস শাড়ি। হাল ফ্যাশনে তরুণীদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের পার্টি ড্রেস। আধুনিক সময়ের তরুণীদের উৎসব-অনুষ্ঠানে শাড়ি পরতেও দেখা যায়। তাদের প্রয়োজনীয়তার জন্য ডিজাইনাররা আবিষ্কার করছে পরিবেশ সময় অনুযায়ী নান্দনিক শাড়ি। কুচি দেওয়া শাড়ির পাড় এখন বেশ চলছে। পরিবেশ অনুযায়ী পোশাক পরাটা খুবই জরুরি। তা না হলে নিজেকে বেমানান লাগে। আমাদের অনেক দেশীয় ফ্যাশন হাউস রয়েছে। এসব হাউসের ডিজাইনাররা তৈরি করছে নারীদের বয়স অনুযায়ী নানা পোশাক। কর্মজীবীদের জন্য তৈরি করছেন নান্দনিক মার্জিত পোশাক।

লা রিভ অঞ্জন, রং বাংলাদেশ, আড়ংসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে মিলবে আপনার পছন্দ অনুযায়ী পোশাক। চাইলে যেতে পারেন যেকোনো শপিং মলে। বসুন্ধরা শপিং মল, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া মৌচাকসহ আরও অনেক শপিং মল রয়েছে, এসব মার্কেটে রয়েছে দেশীয় পোশাক ছাড়াও পাশ্চত্য কাট ডিজাইনের নানা ড্রেস। দামও রয়েছে নাগালের মধ্যে। তবে কাপড়ের মান অনুযায়ী দরদামে পার্থক্য হতে পারে। 

×