ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মাইগ্রেনের উপশমে করণীয়

ডাঃ এমএস জহিরুল হক চৌধুরী

প্রকাশিত: ২১:১২, ৪ জুলাই ২০২২

মাইগ্রেনের উপশমে করণীয়

মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা

অনেকেই মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথায় ভোগেনদৈনন্দিন জীবনে যে কয়েকটি ঘটনা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথামেয়েদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে এ রোগের শুরু হয়যে কোন পেশার মানুষেরই মাইগ্রেন হতে পারে

বাংলায় বলে আধকপালিবর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১১ শতাংশ বয়স্ক মানুষ মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথায় ভোগে২৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে এর ব্যাপ্তি বেশি হয়

তবে সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়দৃষ্টিস্বল্পতা, মস্তিষ্কের টিউমার, মাথায় রক্তক্ষরণ প্রভৃতি কারণেও মাথাব্যথা হতে পারেমনে রাখতে হবে, মাইগ্রেন একধরনের প্রাইমারি হেডেক, যা নিয়মিত চিকিসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভবচিকিসকের অধীনে এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে এ রোগের চিকিসা করা উচিতমাইগ্রেনের ব্যথা চোখের কোন সমস্যার জন্য হয় না

মাইগ্রেন কি?

মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথামাথার যে কোন এক পাশ থেকে শুরু হয়ে তা বিস্তৃত হতে থাকেমস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো আছে, সেগুলো মাথাব্যথার শুরুতে স্ফীত হয়ে ফুলে যায়এ ছাড়া মাথাব্যথার সঙ্গে সঙ্গে বমি এবং বমি বমিভাব রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে

কেন এবং কাদের বেশি হয়?

মাইগ্রেন কেন হয়, তা এখনও পুরোপুরি জানা যায়নিতবে এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোন কারণে হতে পারেএটি সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীর বেশি হয়পুরুষ ও নারীর এ অনুপাত ১:৫নারীদের পিরিয়ডের সময় এ রোগ বেশি দেখা দেয়

চকোলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া বা পান করা, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ সেবন, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম, অনিদ্রা, অনেকক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইল ফোনে কথা বলা ইত্যাদির কারণে এ রোগ হতে পারেএ ছাড়া মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতি উজ্জ্বল আলো এ রোগকে ত্বরান্বিত করে

সাধারণ মাইগ্রেনের লক্ষণ

মাথাব্যথা, বমি ভাব এ রোগের প্রধান লক্ষণতবে অতিরিক্ত হাই তোলা, কোন কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তি বোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারেমাথার যে কোন অংশ থেকে এ ব্যথা শুরু হয়পরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়েচোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারেমাইগ্রেনের ব্যথা এড়াতে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করা ও ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকুনমডেল- লাবণ্যমাইগ্রেনের ব্যথা এড়াতে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করা ও ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন

ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেনের লক্ষণ

এতে দৃষ্টিসমস্যা, যেমন চোখে উজ্জ্বল আলোর অনুভূতি, হঠা অন্ধকার হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিসীমানা সরু হয়ে আসা অথবা যে কোন এক পাশ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে

২০ মিনিট স্থায়ী এসব উপসর্গের পর বমির ভাব এবং মাথাব্যথা শুরু  হয়, যা সাধারণত এক পাশে হয়দৃষ্টির সমস্যা এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে ধরে নিতে হবে এটি মাইগ্রেন নয়

মাইগ্রেন থেকে রেহাই পাওয়ার কিছু উপায়

মাইগ্রেন চিকিসায় তাক্ষণিক এবং প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়

* প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সেটা হতে হবে পরিমিত

* অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা

* কড়া রোদ বা তীব্র ঠা-া পরিহার করতে হবে

* উচ্চ শব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা

* বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা

* মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠা-া কাপড় মাথায় জড়িয়ে বাখা উচিত

যেসব খাবার মাইগ্রেন প্রতিরোধে সহায়ক

*ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, যেমন ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক

* বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে

* সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়

* ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেতিল, আটা, বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে

* আদার টুকরা, আদার রস বা জিঞ্জার পাউডার দিনে দুবার পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন

কি ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন

* চা, কফি ও কোমলপানীয়

* চকোলেট, আইসক্রিম, দই

* ডেয়ারি প্রোডাক্ট (দুধ, মাখন)

* টমেটো ও সাইট্রাস জাতীয় ফল

* গম জাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি

* আপেল, কলা ও চিনাবাদাম

* অতিরিক্ত পেঁয়াজ

তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে সমস্যা দেখা দিতে পারেতাই সবচেয়ে ভাল হয় একটা ডায়েরি রাখা, যাতে আপনি নোট করে রাখতে পারেন কোন্ কোন্ খাবার ও কোন্ কোন্ পারিপার্শ্বিক ঘটনায় ব্যথা বাড়ছে বা কমছেএ রকম এক সপ্তাহ নোট করলে আপনি নিজেই নিজের সমাধান পেয়ে যাবেনতবে ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিনতা না হলে পরবর্তীতে জটিল হয়ে উঠতে পারে

লেখক : অধ্যাপক

ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল

চেম্বার : পপুলার ডায়াগনিস্ট সেন্টার লি: (তৃতীয় তলা)শ্যামলী শাখা, ঢাকা

 ০১৮৬৫৪৪৪৩৮৬; ০১৮৬৫৪৪৪৩৮৫

×