.
চেহারায় ক্লান্তি বা বয়সের ছাপ কারোরই কাম্য নয়। মেয়েরা মোটামুটি ৩০ বছর বয়সের পর থেকে ত্বকে বয়সের ছাপ রুখতে এবং ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং বাড়াতে বিশেষ মনোযোগী হয়ে ওঠে। সৌন্দর্য বর্ধনের এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনীর পাশাপাশি কিছু মেডিক্যাল টুলসও ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গুয়াশা এবং জেড রোলার। আমাদের দেশে খুব বেশি প্রচলিত না হলেও চীনে বহুকাল আগে থেকেই চিকিৎসা এবং রূপচর্চায় পাথরের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাচীন চৈনিক বিশ্বাস অনুযায়ী এই জেড স্টোন রোলার কিন্তু কোনো সাধারণ পাথর নয়। গ্রিন জেড বা কোয়ার্টজ পাথর দিয়ে তৈরি হয় জেড স্টোন রোলার। প্রাচীন জেমস স্টোন থেকে গুয়াশা এবং জেড রোলার তৈরি হয় বলে এগুলো গুণে ও মানে সেরা। গুয়াশা এবং জেড রোলার ফেসের পাশাপাশি শরীরেও ব্যবহার করা হয়। তবে এটি ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে, যেগুলো মানলে পাওয়া যাবে সর্বোত্তম ফলাফল।
জেড রোলার বা গুয়াশা অ্যাপ্লাই করার আগে মুখে টোনার, সিরাম, ফেসিয়াল জেল, অয়েল অথবা ময়েশ্চারাইজার যেকোন একটি ত্বক অনুযায়ী মেখে নিতে হবে । এতে করে গুয়াশা অথবা জেড রোলার মুখে ম্যাসাজ করা সহজ হবে। ফেসিয়াল অয়েল হিসেবে অ্যামন্ড অয়েল, জোজোবা অয়েল বা আরগান অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। আর খেয়াল রাখতে হবে, টুলসগুলো যেন পরিষ্কার থাকে।
এক্ষেত্রে ম্যাসাজে আপনি জেড রোলার বা গুয়াশা যেটাই ব্যবহার করেন না কেন, ম্যাসাজের টেকনিক কিন্তু একই। প্রথমে কপাল থেকে ওপরের দিকে অর্থাৎ চুলের গোড়ার দিকে হালকা চাপ দিয়ে স্টোনটি নিয়ে যেতে হবে। অনেক স্টোনের একপ্রান্তে চিরুনি যুক্ত করা থাকে, যাতে ইচ্ছা অনুযায়ী চুলের গোড়ায় চালিয়েও আরাম পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে নাকের পাশ থেকে কানের লতি পর্যন্ত হালকা ঘষতে হবে। এতে ফেস লিফট ও কন্টুর হয়। পাথরের ঢেউ খেলানো প্রান্ত ব্যবহার করে চোয়ালের মাঝ থেকে কান পর্যন্ত চালাতে হবে, যা ডাবল চিন দূর করে। আবার একই প্রান্ত ব্যবহার করে চোখের ওপর ভ্রু লাইনে হালকা চাপ দিয়ে ঘষলে আরাম পাওয়া যায়।
ক্লান্তি আর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ঘাড় ও কাঁধে গুয়াশা স্টোনের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই। কাঁধের মাঝখান থেকে হালকা চাপ দিয়ে হাতের কাছাকাছি পর্যন্ত চালাতে হবে। আবার পেছনের দিকে চুলের গোড়া থেকে মেরুদন্ড বরাবর ঘষলে আরাম পাওয়া যায়। এতে করে যেমন ক্লান্তি দূর হয়, তেমনি শরীর সতেজ হয়ে ওঠে।
জেড রোলার এবং গুয়াশার বেশ উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু চিকিৎসা শাস্ত্র দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, লিম্ফ নোডস তো আমাদের পুরো শরীরেই রয়েছে। আর এই নোডসগুলোর ভেতর দিয়ে ফ্লুইড চলাচল করে। যা আমাদের ইম্যুনিটি সিস্টেমকে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে ফাইট করতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন ফ্লুইডগুলো আটকে থাকে, তখনি ইম্যুনিটি ব্রেকডাউন করে এবং আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। এক্ষেত্রে জেড রোলার বা গুয়াশা ব্যবহার করলে ফ্লুইডগুলো মুভ করতে পারে। এর ফলে শরীরের টক্সিনগুলো নিচে নেমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে ত্বকের ডিটক্সিফাই বা শুদ্ধিকরণের একটি প্রক্রিয়া চলে। এর ফলে ত্বকে ব্রণের প্রবণতা কমে, দাগ বা র্যাশ থাকলে তাও কমে আসে। এছাড়াও এটির ব্যবহারে মাথা ও মাইগ্রেনের ব্যথায় আরাম হয়। এমনকি যেকোনো পেশির ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। সঙ্গে ত্বকের বয়সের ছাপ কমিয়ে আনে ফোলা ভাব নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত ব্যবহারে চেহারার রিংকেল বা ভাঁজ দূর করে কাক্সিক্ষত আকৃতি পেতে সাহায্য করে। শহরের নামি বিউটি পার্লারগুলোতে স্পা করার প্রক্রিয়ায় এসব টুলস ব্যবহৃত হয়। তবে এটি কিনে নিয়ে ঘরে বসে নিয়ম মেনে নিজে ব্যবহার করাই উত্তম। সেক্ষেত্রে আসল পাথর চিনে নেওয়া আবশ্যক। ছবি: অনলাইন