ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

বিসিএস প্রিলিমিনারি শেষ সময়ের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১১ জুলাই ২০২৫

বিসিএস প্রিলিমিনারি  শেষ সময়ের প্রস্তুতি

.

শেষ সময়ে প্রস্তুতি নেবার জন্য খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না। তাই এ পর্যায়ের প্রস্তুতির জন্য বিশেষ কয়েকটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে-
যত বেশি পারা যায় মডেল টেস্ট দিন। শেষ মুহূর্তে নতুন কিছু না পড়ে বরং আগের পড়াগুলোই বারবার রিভিশন দিন। চূড়ান্ত পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিংয়ের কারণে যেন ভুগতে না হয় সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দিন। নিয়মিত পড়াশোনা করুন। একদিন ১৬ ঘণ্টা পড়ে পরের দিন একদমই পড়লেন না এমন করলে সমস্যা হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন। টেনশন করবেন না। মনে রাখবেন, টেনশন করে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। আপনার জন্য অপরিহার্য নয় এমন কাজের পেছনে সময় ব্যয় করবেন না। গাণিতিক যুক্তি এবং মানসিক দক্ষতা বিষয় দুটি প্রতিদিন চর্চা করুন। হাতে কী পরিমাণ সময় আছে সেটা বুঝে একটি রুটিন সেট করে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা ছাড়া অন্যান্য কোন বিষয়ের পেছনে কতদিন সময় দিয়ে রিভিশন করবেন সেটি ঠিক করুন।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পাসের কৌশল
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পাস করার জন্য কিছু অবশ্য মান্য কৌশল হচ্ছে- আত্মবিশ্বাসী হওয়া, ধৈর্য ধারণ করা, লক্ষ্যে অবিচল থাকা, সিলেবাস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করা, বিগত বিসিএসের প্রশ্নপত্রের প্যার্টান বুঝে সব কিছু না পড়ে শুধু প্রয়োজনীয় টপিকসমূহ পড়া, রুটিন মেইনটেইন করা, অবশ্যই বোর্ড বই থেকে পড়া, বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিষয়ে সর্তক হওয়া, শব্দ করে পড়া, যা পড়ছেন সম্ভব হলে সেটি লিখে ফেলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে নিয়মিত অনুশীলন করা, প্রতিদিন সংবাদপত্র পড়া, স্মার্ট-রিভিশন সার্কেল অনুসরণ করে যে বিষয়ে পড়ছেন সেটা বারবার রিভিশন দেয়া, গ্রুপ স্টাডি করা, যত বেশি পারা যায় মডেল টেস্ট দেয়া, সাধারণ জ্ঞানের পরিবর্তনশীল তথ্যসমূহ অনেক আগে না পড়ে চূড়ান্ত পরীক্ষার ৪-৫ দিন আগে আপডেট তথ্যটি জেনে নেয়া, নিজের ফোকাস ঠিক রাখা।
প্রিলিমিনারি ফেল করার কারণ
কোন কোন বিষয়ে কী কী উপায় অবলম্বন করলে সাফল্য পাওয়া যাবে সেটা জানা যেমন জরুরি ঠিক তেমনি কোন কারণসমূহ সেই সাফল্যের পথে বাঁধা হয়ে উঠতে পারে- সেটা জানাও কিন্তু অত্যন্ত জরুরি। তাই জেনে নিন সফল না হতে পারার কিছু মূল কারণ-
নেগেটিভ মার্কিং: বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতে প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য যেমন ১ নম্বর বরাদ্দ থাকে। ঠিক তেমনিভাবে ভুল উত্তরের জন্য কাটা হয় নম্বর। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য একজন পরীক্ষার্থীর .৫ (অর্ধেক) নম্বর কাটা হয়। একে সহজ ভাষায় নেগেটিভ মার্কিং বলে। এই নেগেটিভ মার্কিংয়ের কারণে একটি বা দুটি প্রশ্নের ভুল উত্তর করলেই মেধা তালিকায় হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর পেছনে পড়ে যেতে হয়। নেগেটিভ মার্কিংয়ের শিকার না হতে চাইলে প্রশ্নপত্রের নৈতিকতা অংশ এবং কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তর করার সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
টাইম ম্যানেজমেন্ট: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে না পারাও বিসিএস প্রিলিতে ফেল করবার একটি অন্যতম বড় কারণ। হয়তো আপনার পড়াশোনা খুব ভালো হয়েছে, কিন্তু তারপরও যদি পরীক্ষাতে সময় মেইনটেইন করে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে না আসতে পারেন, তাহলেও ফলাফল নেগেটিভ হতে পারে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে পরীক্ষার পুরো সময়ের অর্ধেক ইংরেজি ও গণিত এবং বাকি অর্ধেক সময় অন্য বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেয়া যেতে পারে। কোনো প্রশ্নের উত্তর প্রথম দেখায় করতে না পারলে সেটি নিয়ে বসে থেকে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
নার্ভাসনেস: অনেক পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি দেখা যায়। পড়াশোনা, জানা ও বোঝা অনেক ভালো হওয়া সত্ত্বেও কেউ কেউ পরীক্ষার হলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মূলত আত্মবিশ্বাসহীনতা এবং কখনো কখনো শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে এমন হয়ে থাকে। এ ধরনের সমস্যা কারো থেকে থাকলে তার অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
প্রশ্ন কমন না পড়া: প্রশ্ন কমন না পড়বার কারণেও অনেকে ফেল করেন। দেখা যায়, অনেক পড়াশোনা করেও অনেকের প্রশ্ন কমন আসে না। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে বিপিএসসি প্রণিত সম্পূর্ণ সিলেবাস ভালোভাবে যাচাই করে কী কী পড়তে হবে আর কী কী বাদ দেয়া যাবে সেটি সবার প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে। মনে রাখবেন, বাংলা এবং ইংরেজি সাহিত্য, সাধারণ জ্ঞানের বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি অনেক পড়লেও সব প্রশ্ন কমন পাবেন না। অন্যদিকে গণিত, মানসিক দক্ষতা, সাধারণ বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি, বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ ইত্যাদি বিষয়গুলোতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারলে পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এক্ষেত্রে যে ট্রিকি বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার সেটি হচ্ছে, যে প্রশ্নটা অনেক পড়ে কমন পাবেন আর যে প্রশ্নটা কম পড়ে কমন পাবেন- সে দুটির জন্যই কিন্তু বরাদ্দকৃত নম্বর সমান।
রিভিশনে ঘাটতি: এটা বিসিএস প্রিলি উৎরাতে না পারার একটা অন্যতম বড় কারণ। বিসিএস প্রিলিতে ভালো ফল করতে চাইলে স্মার্ট-রিভিশন সার্কেল ফলো করার কোনো বিকল্প আসলে নেই।
নেতিবাচক মনোভাব: অনেকে আছেন যারা ভাবেন যে, চাকরির বয়স থাকাকালে বিসিএস তো বেশ কয়েকবারই দেয়া যায়, তাই এবার না হলেও পরের বার ঠিকই হয়ে যাবে। এ ধরনের মনোভাব আসলে আত্মঘাতী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। এ বছর আপনি যে যে কারণে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছেন না সেই সকল কারণ যে আগামী বছরও আপনার জীবনে থাকবে না তার কোন গ্যারান্টি কিন্তু কেউই দিতে পারবে না। তাই বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে চাইলে সিরিয়াস আপনাকে হতেই হবে।
উপরে উল্লেখিত কারণসমূহ ছাড়াও অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি, আড্ডাবাজি, আলসেমি ইত্যাদি বিষয়গুলোও বিসিএস প্রিলিতে ফেল করার কারণের মধ্যে পড়ে। আসল কথা হচ্ছে, যা যা আপনার যথাযথ প্রস্তুতিকে ব্যাহত করবে তার সবই আপনার বিসিএস প্রিলিতে সাফল্য বঞ্চিত হবার কারণ হিসাবে পরিগণিত হবে। পরীক্ষার্থীদের এই কথা সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে, প্রস্তুতি যত সঠিক হবে, বিসিএস প্রিলিতে সাফল্য পাওয়া তত সহজ হবে।
চাকরি বাজার ডেস্ক

প্যানেল

×