
ছবি: সংগৃহীত
১৯৪৩ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উত্তাল সময়। অস্ট্রেলিয়া থেকে এক গোপন মিশনে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় একটি ক্যামোফ্লাজড জাহাজ। জাহাজে ছিল একমাত্র একটি বিরল প্রাণী, একটি শিশু প্ল্যাটিপাস, যাকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের জন্য। এই 'প্ল্যাটিপাস কূটনীতি'র লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের সমর্থন আদায় করা, কারণ জাপানি আক্রমণ ক্রমেই অস্ট্রেলিয়ার ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছিল।
প্ল্যাটিপাসটির নামও রাখা হয় "উইনস্টন"। অস্ট্রেলিয়ার কনজারভেশনিস্ট ডেভিড ফ্লি এই দুঃসাহসী মিশনের দায়িত্বে ছিলেন। বিশেষ করে প্ল্যাটিপাসের জন্য একটি জলাধার, ৫০ হাজার কেঁচো দিয়ে তৈরি মেনু, এবং এক জন সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয় ৪৫ দিনের এই সমুদ্রযাত্রার জন্য।
জাহাজটি প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে, পানামা খাল হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পৌঁছায়। ঠিক তখনই ঘটে বিপর্যয়, ছোট্ট উইনস্টন মারা যায় তার "প্ল্যাটিপাসারি"-র জলে ভেসে। যাত্রার শেষ পর্যায়ে এই মৃত্যু এতটাই স্পর্শকাতর ছিল যে পুরো ঘটনা গোপন রাখা হয়।
বছর পেরিয়ে গুজব ছড়ায়—জার্মান ইউ-বোটের হামলায় বিস্ফোরণের ফলে উইনস্টন ‘শেল শক’-এ মারা গেছে। এমনকি তার মৃতদেহ সংরক্ষণ করে চার্চিলের অফিসে রেখে দেওয়া হয়।
তবে ৮০ বছর পর, অবশেষে সেই রহস্যের পর্দা ফাঁস করেছেন মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হ্যারিসন ক্রফট এবং সিডনির বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইন্টার্ন টিম। তারা বিশ্লেষণ করে দেখতে পান যে মৃত্যুর সময় প্ল্যাটিপাসটির আশেপাশে তেমন কোনো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। বরং রেকর্ড অনুযায়ী, প্রচণ্ড গরমে এবং খাবারের ঘাটতিতে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল উইনস্টন। দিনের দুটি সময় নেওয়া জল ও বাতাসের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা প্ল্যাটিপাসের জন্য মারাত্মক।
ইজার্মানদের ঘাড়ে দোষ চাপানো সহজ হলেও, বাস্তবতা হলো অবহেলা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, ও পর্যাপ্ত খাবারের অভাবই উইনস্টনের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল বলে গবেষক দল উল্লেখ করেন।
১৯৪৭ সালে আবারো চেষ্টা করে অস্ট্রেলিয়া। তিনটি প্ল্যাটিপাস পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের ব্রংক্স চিড়িয়াখানায়। এইবার মিডিয়ার নজর কাড়ে ‘বেটি’, ‘পেনেলোপি’ ও ‘সিসিল’। পেনেলোপি ও সিসিলের প্রেম, কেলেঙ্কারি, এবং ‘ভুয়া গর্ভধারণ’ নিয়ে পত্রিকায় বেরোয় শিরোনাম। অবশেষে ১৯৫৭ সালে পেনেলোপি নিখোঁজ হয় এবং সিসিল ‘হার্টব্রেক’ করে মারা যায়।
এরপর প্ল্যাটিপাস কূটনীতি প্রায় বিলুপ্ত হয়। ২০১৯ সালে কেবল দুটি প্ল্যাটিপাস সান ডিয়েগো চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়েছিল।প্ল্যাটিপাস কূটনীতি একটি কূটনৈতিক কৌশলের নাম, যা অস্ট্রেলিয়া ব্যবহার করেছিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদারে। এটি মূলত “পাণ্ডা কূটনীতি”-র মতোই একটি সফট পাওয়ার ট্যাকটিক্স, যেখানে কোনো দেশ তাদের জাতীয় বা বিরল প্রাণীকে উপহার দিয়ে বা ধার দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মজবুত করে।
মুমু ২