
ছবিঃ সংগৃহীত
ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি পারমাণবিক ও অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র (WMDs) সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের লক্ষ্যে ইরান ও জাপানের যৌথ নেতৃত্বে একটি বৈশ্বিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাপানের দৈনিক পত্রিকা Asahi Shimbun-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে, আরাকচি বলেন—১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় রাসায়নিক অস্ত্রে আক্রান্ত হওয়া ইরান ও পারমাণবিক বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত জাপান একইরকম দুঃখজনক অভিজ্ঞতার ভাগীদার। এই অভিন্ন যন্ত্রণার ভিত্তিতে দুটি দেশ একসাথে বিশ্বজুড়ে WMD নিষিদ্ধের বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারে।
"ভয়ঙ্কর অতীতের অভিন্ন ছায়া: কেন ইরান-জাপানকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে?"
১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু হামলার ৮০তম বার্ষিকী সামনে রেখে আরাকচি লেখেন—এই দুটি দিন শুধু ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায় নয়, মানব সভ্যতার বিবেকেও গভীর ক্ষতচিহ্ন হয়ে আছে।
তিনি উল্লেখ করেন, "হিরোশিমা ও নাগাসাকির হিবাকুশারা (পারমাণবিক হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ) বহু বছর ধরে শরীর ও মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন এবং শান্তি ও নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে তাদের কণ্ঠ শক্তিশালী হয়েছে।"
সম্প্রতি ন্যাটো সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হিরোশিমা-নাগাসাকির বোমা হামলার সাথে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বোমাবর্ষণের তুলনা করলে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের মেয়র, এবং ‘নিহন হিদানকিয়ো’ (A ও H বোমা ভুক্তভোগীদের সংগঠন) এই মন্তব্যকে ‘মানবিক বিপর্যয়ের অবমূল্যায়ন’ বলে তীব্র নিন্দা জানান।
আরাকচি লেখেন, "জাপানের মত, ইরানও WMD-এর নির্মমতা দেখেছে। ১৯৮৭ সালে ইরানের সারদাশ্ত শহরে ইরাকের চালানো রাসায়নিক হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত ও হাজার হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। এখনও প্রায় এক লাখ ইরানি রাসায়নিক অস্ত্রের পরিণতিতে নানা রোগে ভুগছেন—শ্বাসকষ্ট, অন্ধত্ব, জ্বালাপোড়া ও PTSD-তে আক্রান্ত।"
তিনি দাবি করেন, এই হামলার পেছনে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রত্যক্ষ মদদ ছিল। মার্কিন গোপন দলিল থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সহায়তায় সাদ্দাম হোসেন ইরানে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেন। এমনকি নিরাপত্তা পরিষদে ইরাকের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব পাস ঠেকাতেও মার্কিন কূটনীতিকেরা সক্রিয় ছিলেন।
আরাকচি বলেন, "হিরোশিমা, নাগাসাকি ও সারদাশ্তের অভিজ্ঞতা আমাদের বলে দেয়—WMD কোনও জাতি, লিঙ্গ বা প্রজন্ম চিনে না। তারা কেবল ধ্বংস ডেকে আনে।"
তিনি আরও বলেন, "জাপান এবং ইরান—এই দুটি জাতির অভিন্ন যন্ত্রণার ইতিহাস তাদের বিশ্ব বিবেক জাগাতে এবং নৈতিক নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে প্রস্তুত করেছে। WMD নির্মূলের আন্দোলন শুধু অতীতের ন্যায়বিচারের দাবি নয়; এটি ভবিষ্যতের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি।"
জাপানের নাগরিক সমাজ ইতোমধ্যে ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিবাদে সক্রিয় হয়েছে। হিরোশিমা-ভিত্তিক সাতটি সংগঠন একযোগে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিরোধিতা করে বিবৃতি দেয়, যা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির (NPT) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আরাকচির মতে, ইরানও এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ দেশটি NPT-এর প্রতিষ্ঠাতা স্বাক্ষরকারী এবং নিজেরাই রাসায়নিক হামলার শিকার। দুই দেশের যৌথ কণ্ঠে বিশ্বকে একটি বার্তা দিতে হবে: "অস্ত্র নয়, মানবতা বাঁচাও।"
আরাকচি নিবন্ধের শেষে লেখেন:
“আমরা এই যন্ত্রণার ইতিহাস শুধু স্মরণেই সীমাবদ্ধ রাখব না—আমরা তার থেকে শিক্ষা নেব। বিশ্ব বিবেককে জাগিয়ে তুলব। কারণ আমরা কেবল মৃতদের কাছে দায়বদ্ধ নই—আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও দায়বদ্ধ।”
ইমরান